পাবনার সুজানগরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় দলটির ১০ নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।

আজ শুক্রবার দুপুরে সুজানগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক তৌফিক ইমাম খান প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি কেন্দ্র করেছে। এ নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই।’

বহিষ্কৃত ১০ নেতা-কর্মী হলেন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব শেখ আবদুর রউফ (৫২), ছাত্রদলের নেতা শেখ কাউছার (২৮), যুবদলের নেতা মনজেদ শেখ (৪৫), সুজানগর পৌরসভা বিএনপির ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মজিবর খাঁ (৬০), সুজানগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সদস্য কামাল শেখ (৪৬), পৌরসভা যুবদল সদস্য মানিক খাঁ (৩৮), উপজেলার এনএ কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি শাকিল খাঁ (২৫), সুজানগর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি রুহুল খাঁ (৪০), বিএনপির কর্মী লেবু খাঁ (৬০) ও যুবদলের কর্মী হালিম শেখ (৪০)।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সুজানগরে রক্তাক্ত সংঘাতের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এই নেতা–কর্মীদের বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো। এ ছাড়া সুজানগরের রক্তাক্ত সংঘাতের ঘটনায় মোলায়েম খাঁ ও সুরুজসহ আরও যাঁরা জড়িত ছিলেন, তাঁরা বিএনপি কিংবা এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেউ নন। তাঁদের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই।

এদিকে ঘটনার দুই দিনেও দুই পক্ষের কেউ থানায় কোনো অভিযোগ দেননি। ঘটনায় কোনো মামলাও হয়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মজিবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখনো মামলা হয়নি। কেউ কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার ফোনে এক নারীর সঙ্গে কথা বলেন উপজেলা ছাত্রদলের নেতা কাউছার হোসেন। এ নিয়ে বুধবার উপজেলা সদরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হন। এ সময় কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা যায়।

আরও পড়ুনপাবনার সুজানগরে বিএনপির দুই পক্ষে সংঘর্ষ-গুলি, আহত ২০০৯ জুলাই ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ঘটন য় স জ নগর স ঘর ষ উপজ ল সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

এই অপচয় রোধে প্রয়োজন টেকসই পদক্ষেপ

প্রতিবছরের মতো এবার যে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাড়ম্বর আনুষ্ঠানিকতার আয়োজন ছিল না, এটা ভালো দৃষ্টান্ত। অতীতে এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ নিয়ে আনুষ্ঠানিকতার নামে সরকারের মাহাত্ম্য প্রচার করা হতো। 

তবে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল খুবই হতাশাজনক।  বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ৩১০ জন পরীক্ষার্থী। পাস করেছে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৫৪ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৪৬ জন। পাসের হার ৬৮ দশমিক শূন্য ৪; যা গতবার ছিল ৮৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড যুক্ত করলে অকৃতকার্য শিক্ষার্থী ৬ লাখের বেশি।  

এই যে জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলো, এর জন্য তাদের দায়ী করা যায় না। দায়ী হলেন শিক্ষার অভিভাবক বা রক্ষকেরা। বাংলাদেশে যখন যেই সরকার আসে, তাদের মতো করে একটি শিক্ষানীতি বা কমিশন করে। কিন্তু সেই শিক্ষানীতি বা কমিশন শিক্ষার মানোন্নয়নে আদৌ ভূমিকা রাখছে কি না, সেটা খতিয়ে দেখা হয় না। 

এবার এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার কম হওয়ার জন্য শিক্ষার অভিভাবকেরা যেসব কারণ চিহ্নিত করেছেন, তাকে ‘ঐচ্ছিক’ হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। মূল কারণ তাঁরা এড়িয়ে গেছেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘আমাদের কোনো টার্গেট ছিল না যে পাসের হার এত করব, বাড়াব, নাকি কমাব। আমাদের মিশন ছিল পরীক্ষা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা।’ 

সুন্দরভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করা শিক্ষা বোর্ড তথা সংশ্লিষ্ট সবার দায়িত্ব। এতে কৃতিত্ব নেওয়ার কিছু নেই। মূল কথা হলো নীতিনির্ধারকেরা শিক্ষার সমস্যাটি কীভাবে দেখেছেন এবং তার প্রতিকারে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন। করোনার কারণে দুই বছর ঠিকমতো বিদ্যালয়ে পাঠদান হয়নি, এটা সত্য; কিন্তু তার আগে কিংবা পরেও পাঠদান সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। প্রতিটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীর মান যাচাই করার কথা থাকলেও সেটা হয় না। এ কারণেই এসএসসিতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী অকার্যকর হয়।

আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, শ্রেণিকক্ষের চেয়ে কোচিং করতে শিক্ষার্থীদের বেশি উৎসাহিত করা হয়। আগে কোচিং সেন্টার ছিল শহরাঞ্চলে, এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রসারিত হয়েছে। কোচিং মানে শিক্ষা নয়, পরীক্ষায় কী প্রশ্ন আসবে, কী উত্তর  হবে; সেটা শিক্ষার্থীকে জানিয়ে দেওয়া। বহু বছরের কু–অভ্যাসে আমরা শিক্ষাকে এই স্তরে নিয়ে এসেছি। 

প্রতিটি দেশের একটি শিক্ষা–দর্শন থাকে, যার উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ ও ভবিষ্যতে তাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। আমাদের শিক্ষার নীতিনির্ধারকেরা এর ওপর কখনো জোর দেননি।  অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের অনেকের পড়াশোনা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে মেয়েশিক্ষার্থীদের। এটা কেবল পরিবার বা রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতি নয়, মানবসম্পদেরও অপচয়। 

শিক্ষা খাতের প্রতি পূর্বাপর সব সরকারই উদাসীনতা দেখিয়ে আসছে। এমনকি গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারও শিক্ষার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দেয়নি। শিক্ষার মানোন্নয়নে সর্বস্তরে মেধাবী শিক্ষকদের নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, সময়মতো পাঠ্যবইসহ শিক্ষার সব উপকরণ শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আর মেধাবীরা তখনই এই পেশায় আসবেন, যখন সম্মানজনক বেতন–ভাতা পাবেন। 

এসএসসি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়া ঠেকাতে সরকারকে শিক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি ঠকমতো পাঠদান ও মান যাচাই হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তদারকি জোরদার করার বিকল্প নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ