প্লাস্টিকের ৩ বোতল জমা দিলে ১টি চারা গাছ উপহার
Published: 3rd, February 2025 GMT
‘তিনটি খালি প্লাস্টিক বোতল স্টলে জমা দিন, একটি ফলের চারা গাছ উপহার নিন’— স্লোগান সামনে রেখে পরিবেশ বাঁচাতে ও পরিচ্ছন্ন শহর গড়তে তারুণ্যের উৎসবে ভিন্নধর্মী কর্মসূচি শুরু করেছে বিডি ক্লিন কালীগঞ্জ উপজেলা শাখা।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দিনব্যাপী ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ স্লোগানে নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কালীগঞ্জ আরআরএন পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত তারুণ্যের উৎসব শুরু হয়।
বিডি ক্লিনের সদস্যরা প্লাস্টিক সামগ্রীর কারণে পরিবেশ বিপর্যয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন এবং এই বিপর্যয় রোধে বৃক্ষরোপণের উপযোগিতা ব্যাখ্যা করেন।
সংগঠনটির এই উদ্যোগ সাড়া ফেলেছে এবং ৩টি খালি প্লাস্টিকের বোতল জমা দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ফল গাছের চারা নিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। শিক্ষার্থীরা জানায়, বাড়িতে জমা প্লাস্টিকের বোতল যেখানে সেখানে ফেলে না দিয়ে তারা জমিয়ে রেখেছিল এবং এর মাধ্যমে বাড়ির আঙিনায় রোপণের জন্য এখন গাছের চারা সংগ্রহ করেছে।
বিডি ক্লিন কালীগঞ্জ শাখার সমন্বয়ক মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ব্যবহারের পর মানুষ খালি প্লাস্টিক বোতল যত্রতত্র ছুঁড়ে ফেলে দেয়। সেই বোতলগুলো জমির উর্বরতা নষ্ট করে। মাটির নিচে গাছের শিকড় বিস্তার বাধা দেয়। শত শত বছরেও সেগুলো পচে না। একইভাবে সেগুলো ড্রেনে জমে জলাবদ্ধতার কারণ হয়। তারুণ্যের উৎসবে আজকের কর্মসূচি থেকে শিক্ষার্থীরা যা শিখেছে, পরিবেশ রক্ষায় তারা যদি সেগুলো প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োগ করে তাহলে সার্থকতা।
এদিকে, তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তনিমা আফ্রাদের নেতৃত্বে বর্ণাঢ্য র্যালী কালীগঞ্জের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এছাড়াও নারী উদ্যোক্তাদের কারুশিল্প মেলা, যুব সমাবেশ ও আলোচনা সভা, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ফুটবল খেলা, পিঠা উৎসব, বইমেলা, আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ছাড়াও কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরী তাসনিম ঊর্মি, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
ঢাকা/রফিক/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত র ণ য র উৎসব উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।