যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের ওপর ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেছেন ইলন মাস্ক। বিশ্বের শীর্ষ এই ধনীর হাতে নজিরবিহীনভাবে ক্ষমতা দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আর বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বংশোদ্ভূত মাস্ক মার্কিন সরকারি কোষাগারে পাওনা মেটানোর ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এটি লাখো কোটি ডলারের ব্যবস্থাপনা করে।

মাস্ক একাই যুক্তরাষ্ট্রের মানবিক সহায়তা সংস্থা ইউএসএআইডি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এমনকি সংস্থাটির দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে বের করে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন তিনি।

‘ইলন মাস্কের এই দখলদারির চেষ্টা.

..টিকবে না।’সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন

মাস্ক এমন একজন ব্যক্তি, যিনি সব সময় অনির্বাচিত আমলাদের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করতে পছন্দ করেন। কিন্তু এখন তিনি নিজেই প্রায় কোনো রকম জবাবদিহি ছাড়া ট্রাম্পের সরকার ছোট করে আনার প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

গত সোমবার ওভাল অফিসে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে ট্রাম্প বিষয়টিকে হালকা করে দেখার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের অনুমোদন ছাড়া ইলন মাস্ক কিছুই করতে পারেন না, করবেনও না।’

ট্রাম্প আরও বলেন, ‘যেখানে যথাযথ হবে, সেখানে আমরা তাঁকে অনুমোদন দেব। যেখানে যথাযথ হবে না, সেখানে দেব না।’

মাস্কের উদ্দেশ ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি সব কথা জানান। এ ব্যাপারে তিনি খুবই একনিষ্ঠ। আমি তাঁর তারিফ করি।’

ট্রাম্পের সরকারে মাস্কের ক্ষমতা প্রায় অসীম বলে মনে হচ্ছে। ফলে ডেমোক্র্যাটরা মাস্ক ও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের অভিযোগ তুলেছেন।

ইলন মাস্ক এমন একজন ব্যক্তি, যিনি সব সময় অনির্বাচিত আমলাদের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করতে পছন্দ করেন। কিন্তু এখন তিনি নিজেই প্রায় কোনো রকম জবাবদিহি ছাড়া ট্রাম্পের মার্কিন সরকারকে সংকুচিত করার প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

এখন পর্যন্ত মাস্ককে ফেডারেল কর্মী বা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে নিবন্ধিত করা হয়নি। যদিও মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে, তাঁকে এখন ‘বিশেষ সরকারি কর্মচারী’ হিসেবে নিবন্ধিত করা হয়েছে।

সমালোচকেরা মনে করিয়ে দেন, ট্রাম্পের এবারের নির্বাচনী প্রচারাভিযানে সবচেয়ে বড় দাতা ছিলেন মাস্ক। ট্রাম্পের নির্বাচনী সভা-সমাবেশ ও প্রচারের জন্য মাস্ক প্রায় ২৫ কোটি ডলার দিয়েছেন।

এর বাইরে আরও একটি বিষয় আছে। আর তা হলো, মাস্কের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে মার্কিন সরকারের বিশাল চুক্তি রয়েছে।

শুরুতে মাস্কের নেতৃত্বাধীন সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) ওয়েবসাইটে একটি আদুরে কুকুরের কার্টুন খচিত ছিল। কিন্তু পরে এর বদলে সেখানে জায়গা নেয় সোনালি বৃত্তে আঁকা একটি ডলারের প্রতীক। বোঝাই যাচ্ছে, মনোযোগটা কোথায় থাকবে।

মাস্কের সরকারি দক্ষতা বিভাগের দলটি তাঁর নিজের কোম্পানির লোকদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে। তাঁরা নাটকীয়ভাবে মার্কিন সরকারি কোষাগারের পাওনা মেটানোর ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদ দখল করেছেন। তাঁরা ফেডারেল কর্মীদের ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ নিয়ে পদত্যাগ করানোর একটি উদ্যোগে সহায়তা করছেন। একটি অভিযান চালাতে সাহায্য করছেন। আর এ কাজ করা হয়েছে একটি ই–মেইলের মাধ্যমে। ই–মেইলটি মাস্ক টুইটার কিনে নেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির কর্মীদের কাছে পাঠানো একটি ই–মেইলের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। টুইটারের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটির নাম বদলে ‘এক্স’ রাখেন মাস্ক।

এক্সে একটি লাইভ চ্যাটে মাস্ক ব্যক্তিগতভাবে ঘোষণা করেছিলেন, ইউএসএআইডি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটিকে ‘অপরাধী সংস্থা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন তিনি।

মাস্ক ও তাঁর সহযোগীদের লাগামহীন মনোভাব নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। মাস্কের সহযোগীরা ইউএসএআইডির গোপন তথ্য রাখা সুরক্ষিত একটি কক্ষে প্রবেশাধিকার দাবি করার পর থেকে নাটকীয়ভাবে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সাম্প্রতিক বিতর্কের পর আরেকটি ঘটনা আবার সামনে এসেছে। মাস্ক রকেট উৎক্ষেপণের ক্ষেত্রে ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের তদারকির সমালোচনা করার পর ট্রাম্পের অভিষেকের দিনই সংস্থাটির প্রধানকে তাঁর দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর কয়েক দিন পর ওয়াশিংটনে এক ভয়াবহ উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পর ট্রাম্পকে সংস্থাটির নতুন প্রধান নিয়োগের জন্য তাড়াহুড়ো করতে হয়েছে।

ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের দিন মাস্কের হাত উঁচু করে স্যালুট দেওয়া নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল, তা সাম্প্রতিক বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে।

ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, ‘যদি কোনো সংঘাত হয়, তবে আমরা তাঁকে এর ধারেকাছে ঘেঁষতে দেব না।’ কিন্তু এ কথা বলেও তিনি সমালোচকদের শান্ত করতে পারেননি।

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর দুই সপ্তাহ পর্যন্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আশ্চর্যজনকভাবে নীরব ছিল ডেমোক্র্যাটরা। কিন্তু মাস্কের সবশেষ পদক্ষেপের সূত্র ধরে তাঁরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।

ডেমোক্র্যাট সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেছেন, মাস্ককে কেউ নির্বাচিত করেনি।
মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের ওয়েজ অ্যান্ড মিনস কমিটির ডেমোক্র্যাটরা একটি জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। এ বৈঠকের আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে মাস্ককে নিয়ে সৃষ্ট বিতর্কও একটি।

কংগ্রেস অনুমোদিত তহবিলের ওপর প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা প্রয়োগের অসাংবিধানিক প্রচেষ্টার জন্য ডিওজিইর তীব্র সমালোচনা করেছেন ডেমোক্র্যাটরা।

সিনেটের সংখ্যালঘু দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা চাক শুমার বলেছেন, ‘বিষয়টি একটি বাঘকে পোষা প্রাণীর চিড়িয়াখানায় ঢুকতে দিয়ে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করার মতো।’

ইউএসএআইডির কর্মীদের এক বিক্ষোভে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন বলেছেন, ‘ইলন মাস্কের এই দখলদারির চেষ্টা...টিকবে না।’

তবে ট্রাম্প ও মাস্কের মতো দুজন মানুষের অহম হোয়াইট হাউসের একই চৌহদ্দিতে পাশাপাশি বেশি দিন টিকে থাকে কি না, তা ওয়াশিংটন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র ক ন সরক র ইলন ম স ক র সরক র কর ছ ন ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য

প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।

ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী

২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।

আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছে

প্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।

তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ