Samakal:
2025-05-01@05:43:21 GMT

গোপালগঞ্জের তিন যুবকের মৃত্যু

Published: 5th, February 2025 GMT

গোপালগঞ্জের তিন যুবকের মৃত্যু

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার তিন যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৈধ উপায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টাকালে সাগরে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন—মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের চরপ্রসন্নদী গ্রামের ওহাব খন্দকারের ছেলে সাত্তার খন্দকার (৪০), একই গ্রামের মেহেদী শেখের ছেলে আরাফসান ইসলাম আশিক (১৮) এবং মোল্লাদী গ্রামের প্রয়াত আব্দুল মজিদ শেখের ছেলে রফিকুল শেখ (২৫)।

নিহত রফিকুল শেখ ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারান। তাকে লালন-পালন করেন তার চাচা মো.

জয়নাল শেখ। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর আশায় রফিকুলের চাচা তার ভিটে-বাড়ি ও সহায়-সম্বল বিক্রি করে দালালদের হাতে ২০ লাখ টাকা তুলে দেন। কিন্তু ইতালিতে পৌঁছানোর আগেই লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান রফিকুল।

আরাফসান ইসলাম আশিকের বাবা মেহেদী শেখও একইভাবে দালালদের মাধ্যমে ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য ১৭ লাখ টাকা দেন। ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠানোর পর কয়েকবার তার সঙ্গে যোগাযোগ হলেও পরে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে জানা যায়, নৌকাডুবিতে তার মৃত্যু হয়েছে।

নিহত সাত্তার খন্দকারের স্ত্রী লাবনী খন্দকার অভিযোগ করে বলেন, দালাল চক্র ইতালি পৌঁছে দেওয়ার শর্তে আমার কাছ থেকে তিন দফায় ২৬ লাখ টাকা নিয়েছে, যেখানে মৌখিক চুক্তি ছিল ২৪ লাখ টাকার। আমি আমার স্বামীর মরদেহ দেশে ফেরত আনার দাবি জানাচ্ছি এবং দালাল চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

গোপালগঞ্জ জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর সহকারী পরিচালক ষষ্ঠীপদ রায় জানান, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে একটি শক্তিশালী দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে, যারা যুবকদের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা এই চক্রের তালিকা তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছি, তবে এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, সরকার বৈধ উপায়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইতালি, জাপান ও কোরিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। কিন্তু অবৈধ পথে বিদেশে যেতে চাওয়া ব্যক্তিরা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর সঙ্গে যোগাযোগ না করায় তারা প্রতারিত হচ্ছে।

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসনীন আক্তার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের কাছে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। নিহতদের পরিবার থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্ট সংস্থার বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পর লিবিয়ার ব্রেগা উপকূল থেকে ২০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিহতদের সবাই বাংলাদেশি। নিহতদের পরিবার সরকারের কাছে মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছিল। তবে মরদেহগুলো পচন ধরতে শুরু করায় আজদাদিয়ায় দাফন করা হয়েছে।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ প লগঞ জ মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ