Samakal:
2025-09-18@07:47:16 GMT

গোপালগঞ্জের তিন যুবকের মৃত্যু

Published: 5th, February 2025 GMT

গোপালগঞ্জের তিন যুবকের মৃত্যু

ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির ঘটনায় গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার তিন যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৈধ উপায়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ না পেয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টাকালে সাগরে ডুবে তাদের মৃত্যু হয়।

নিহতরা হলেন—মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদী ইউনিয়নের চরপ্রসন্নদী গ্রামের ওহাব খন্দকারের ছেলে সাত্তার খন্দকার (৪০), একই গ্রামের মেহেদী শেখের ছেলে আরাফসান ইসলাম আশিক (১৮) এবং মোল্লাদী গ্রামের প্রয়াত আব্দুল মজিদ শেখের ছেলে রফিকুল শেখ (২৫)।

নিহত রফিকুল শেখ ছোটবেলায় মা-বাবাকে হারান। তাকে লালন-পালন করেন তার চাচা মো.

জয়নাল শেখ। পরিবারের স্বচ্ছলতা ফেরানোর আশায় রফিকুলের চাচা তার ভিটে-বাড়ি ও সহায়-সম্বল বিক্রি করে দালালদের হাতে ২০ লাখ টাকা তুলে দেন। কিন্তু ইতালিতে পৌঁছানোর আগেই লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান রফিকুল।

আরাফসান ইসলাম আশিকের বাবা মেহেদী শেখও একইভাবে দালালদের মাধ্যমে ছেলেকে ইতালি পাঠানোর জন্য ১৭ লাখ টাকা দেন। ছেলেকে লিবিয়ায় পাঠানোর পর কয়েকবার তার সঙ্গে যোগাযোগ হলেও পরে আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে জানা যায়, নৌকাডুবিতে তার মৃত্যু হয়েছে।

নিহত সাত্তার খন্দকারের স্ত্রী লাবনী খন্দকার অভিযোগ করে বলেন, দালাল চক্র ইতালি পৌঁছে দেওয়ার শর্তে আমার কাছ থেকে তিন দফায় ২৬ লাখ টাকা নিয়েছে, যেখানে মৌখিক চুক্তি ছিল ২৪ লাখ টাকার। আমি আমার স্বামীর মরদেহ দেশে ফেরত আনার দাবি জানাচ্ছি এবং দালাল চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

গোপালগঞ্জ জেলা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর সহকারী পরিচালক ষষ্ঠীপদ রায় জানান, ফরিদপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে একটি শক্তিশালী দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে, যারা যুবকদের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে পাঠাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা এই চক্রের তালিকা তৈরি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছি, তবে এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, সরকার বৈধ উপায়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ইতালি, জাপান ও কোরিয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিচ্ছে। কিন্তু অবৈধ পথে বিদেশে যেতে চাওয়া ব্যক্তিরা জনশক্তি ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর সঙ্গে যোগাযোগ না করায় তারা প্রতারিত হচ্ছে।

মুকসুদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসনীন আক্তার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের কাছে এখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। নিহতদের পরিবার থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেলে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লিবিয়ার রেড ক্রিসেন্ট সংস্থার বরাত দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পর লিবিয়ার ব্রেগা উপকূল থেকে ২০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিহতদের সবাই বাংলাদেশি। নিহতদের পরিবার সরকারের কাছে মরদেহ দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছিল। তবে মরদেহগুলো পচন ধরতে শুরু করায় আজদাদিয়ায় দাফন করা হয়েছে।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ প লগঞ জ মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

জাপানে জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত সরকারের

জাপানে জনশক্তি প্রেরণের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে গঠিত ‘জাপান সেল’ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মন্ত্রণালয় থেকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রেরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত তৃতীয় সভায় এ সব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। খবর বাসসের।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশে জাপানের সহযোগিতা বাড়াতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

প্রবাসীদের রেমিট্যান্সেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা

সভায় বলা হয়, জাপান সেলের কার্যক্রমকে জনগণের কাছে তুলে ধরতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারির মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো হবে। ফেসবুক পোস্টে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং জাপানে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের উদ্ধৃতি প্রকাশ করা হবে, যা প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল পেজে প্রচারিত হবে।

মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, জাপান বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় শ্রমবাজার। জাপান টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, ২০৪০ সালের মধ্যে দেশটিতে ১ কোটি ১০ লাখ কর্মক্ষম মানুষের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য বিভিন্ন ভিসা ক্যাটাগরি খোলা রাখা হয়েছে।প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের অনুপ্রেরণায় জাপানে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে ন্যাশনাল বিজনেস সাপোর্ট কো-অপারেটিভ ফেডারেশন (এনবিসিসি), জাপান-বাংলা ব্রিজ রিক্রুটিং এজেন্সি লিমিটেড (জেবিবিআরএ) এবং কাইকোম ড্রিম স্ট্রিট বিডি কোম্পানি লিমিটেডের (কেডিএস) সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। এসব চুক্তির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

শ্রমবাজার সম্প্রসারণে ‘জাপান ডেস্ক’ চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শ্রমবাজারের চাহিদা যাচাই, কর্মসংস্থানের সুযোগ চিহ্নিত ও প্রচারণা, কর্মীদের ভাষা প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল টেস্ট, তথ্যসংগ্রহ এবং জাপানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের কাজ করা হবে।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, “জনশক্তি রপ্তানির মূল লক্ষ্য হলো কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য বিমোচন। জাপান ডেস্কের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে।”

বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জানান, জাপান সরকার এখন দক্ষতা ও মানসম্পন্ন কর্মী নিয়োগে জোর দিচ্ছে। এজন্য জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ ও টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে নতুন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া কেডিএস নার্সিং সেক্টরে দক্ষ কর্মী পাঠাতে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পাস গড়ে তুলবে।

ইতিমধ্যে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— জাপান সেলের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ চালু, যোগাযোগের জন্য বিশেষ ই-মেইল খোলা, জাপানি ভাষা শেখার মোবাইল অ্যাপস প্রচার, কর্মপ্রার্থীদের জন্য শিক্ষাঋণ চালু, অতিরিক্ত পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, অনলাইন ভাষা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু, ভাষা পরীক্ষার্থীদের তথ্যভাণ্ডার তৈরি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে তদারকি কমিটি গঠন। এছাড়া ভাষা শিক্ষকদের সম্মানি বৃদ্ধি, ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার সমস্যা সমাধান এবং জাপানের সহায়তায় ১ লাখ কর্মী প্রশিক্ষণের প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে।

বর্তমানে স্পেসিফায়েড স্কিলড ওয়ার্কার (এসএসডব্লিউ) ক্যাটাগরির ছয়টি খাতে—কৃষি, নির্মাণ, কেয়ার ওয়ার্কার, বিল্ডিং ক্লিনিং, অটোমোবাইল পরিবহন ও শিল্প খাতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ কার্যক্রম চলছে।ভবিষ্যতে ১৬টি খাতেই এ সুযোগ বাড়ানো হবে। ২০২৭ সাল থেকে টেকনিক্যাল ইন্টার্ন ট্রেনিং প্রোগ্রামের (টিআইটিপি) পরিবর্তে এমপ্লয়মেন্ট ফর স্কিল ডেভেলপমেন্ট (ইএসডি) চালু হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে এবং জাপান ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় নতুন প্রশিক্ষক পাঠানো হবে।

অন্যদিকে, আগামী নভেম্বর মাসে টোকিও ও নাগোইয়াতে বাংলাদেশি প্রেরণকারী প্রতিষ্ঠান ও জাপানি নিয়োগকর্তাদের মধ্যে ‘ম্যাচ মেকিং ইভেন্ট’ অনুষ্ঠিত হবে।এতে বাংলাদেশ থেকে জাপানে কর্মী নিয়োগের নতুন সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জাপানে জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত সরকারের