অভ্যুত্থানের শহীদদের জীবনীগ্রন্থ তৈরি করেছে জামায়াত
Published: 5th, February 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শহীদদের জীবনী স্মারক গ্রন্থ তৈরি করেছে জামায়াতে ইসলামী। ১০ খণ্ডের এই স্মারকগ্রন্থের আড়াই হাজার পৃষ্ঠায় রয়েছে ৭৭০ শহীদদের নাম-পরিচয়, ছবি, জীবনের বর্ণনা। কীভাবে কোথায় তাঁরা শহীদ হয়েছেন, তা তুলে ধরা হয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীর জবানীতে।
আজ বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে শহীদদের জীবনী স্মারকগ্রন্থ উন্মোচন করেন জামায়াত আমির ডা.
মিরপুরে শহীদ নাসিব রায়হানের বাবা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সংস্কার আর বিচার না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনে আমরা আবারও আন্দোলনে নামব। আর ফ্যাসিস্ট সরকার চায় না।
ধানমন্ডিতে ১৯ জুলাই শহীদ ফারহান ফাইয়াজের বাবা বলেন, এত ত্যাগের পরও ভারতের খবরদারি থেকে রক্ষা পাচ্ছি না। বিজয় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। দ্রুত নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে গেছে অনেকে। শহিদরা কী তা চেয়েছিলেন? তারা চেয়েছিল ব্যাংক লুট হবে না, দুর্নীতি হবে না, গুম খুন হবে না। এই দেশটা যাতে শান্তিতে থাকে। শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘অনলাইনে ভাষণ নয় বরং দেশে আসুন। সরাসরি কথা বলতে আসুন।’
যাত্রীবাড়িতে শহীদ ইমাম হাসান তাইনের ভাই রবিউল আউয়াল বলেন, আপনারা দেখেছেন কতটা নির্মমভাবে মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। এত হত্যার পর কীভাবে বিচার না করে ভোটের জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে কেউ কেউ? ভোট হবে তবে বিচারের আগে নয়। গণহত্যার বিচার আগে এরপর ভোট।
সরকারি হিসাবে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন ঘটানো অভ্যুত্থানে অন্তত ৮৬৫ জন জীবন দিয়েছেন। তাঁদের নাম গেজেটে রয়েছে।
জামায়াত আমির বলেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় স্মারকগ্রন্থ তৈরি করা হয়েছে। তবে পরিপূর্ণ কাজ হয়নি। শহীদ পরিবার, আহতরা বিভিন্নভাবে হতাশ। এজন্য অসমাপ্ত রেখেই স্মারকের প্রাথমিক পর্ব প্রকাশ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের তালিকা হয়নি, ভাষা আন্দোলনের শহীদদেরও পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি। চব্বিশের শহীদের তালিকাও থমকে আছে। তাই জামায়াত উদ্যোগ নিয়েছে।
যাদের নাম এখনও আসেনি তাদের সম্পর্কে তথ্য দিয়ে সহায়তার আহ্বান জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, ভুলভ্রান্তি ধরিয়ে দিলে বিশ্ববাসীর কাছে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। পৃথিবীর প্রধান সকল ভাষায় অনুবাদ করা হবে, যাতে বিশ্ববাসী আমাদের বীরদের সম্পর্কে জানতে পারে। তাঁদের কৃতিত্ব ও গৌরবগাঁথা যেন অনুপ্রাণিত করতে পারে। শহীদের জীবনী জামায়াতের নয়, জাতীয় সম্পত্তি। আরও সুন্দর, নিখুঁতভাবে জীবনী তুলে আনতে সবাই এগিয়ে আসুক।
ঢাকা ছাড়াও রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রামে একযোগে শহীদদের জীবনীর সংকলন প্রকাশ করা হয়। শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের জাতির ইতিহাস বিস্মৃতির ও বিকৃতির।
শেখ হাসিনার আমলে শুধু জামায়াত নয় সাধারণ মানুষসহ সকলেই মজলুম ছিলেন জানিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, সাংবাদিকরাও ফ্যাসিবাদের থাবা থেকে মুক্ত ছিলেন না। নারীদেরও রেহাই দেওয়া হয়নি। এদের রুচি কত নিম্নস্তরের ছিল এখান থেকে উপলব্ধি করা যায়। সেই শ্বাসরুদ্ধকর বন্দিদশার অবস্থা থেকে শহীদরা মুক্ত করেছে, জামায়াত কৃতজ্ঞ।
জামায়াত আমির বলেন, শহীদরা বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন। এখন দায়িত্ব আমাদের ঘাড়ে। কিন্তু কিছু লোক নাগরিকদের শান্তি কেড়ে নেওয়ার অপকর্মে লিপ্ত। অপকর্ম যারা করে, তারা এটাকে পেশা হিসেবে বিবেচনা করে। বিপ্লবের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ অপকর্ম মেহেরবানি করে কেউ করবেন না। যদি করেন শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে, তাদের রক্তকে অপমান করা হবে। আর যারা জীবিত শহীদ; পঙ্গু হয়ে আছেন তারা ভীষণ কষ্ট পাবেন। অভিশাপ দেবেন। মজলুম দেশবাসী অভিশাপ দেবে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা থাকলেও বিএনপি এবং এবি পার্টির কাউকে দেখা যায়নি। জামায়াতের নায়েবে মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেন, মুক্তিযুদ্ধে বীর শহিদদের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়নি কিন্তু ভাতা নিয়ে কাড়াকাড়ি করা হয়। শেখ হাসিনা মাঝেমাঝে বলেন, আমার কি অপরাধ। এর চেয়ে জঘন্য আর কি হতে পারে।
বক্তৃতা করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পররওয়ার, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, যুগান্তর সম্পাদক আব্দুল হাই শিকদার, হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুকমল বড়ুয়া, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ম য় ত ইসল ম দ র জ বন
এছাড়াও পড়ুন:
কেউ অপকর্ম করতে চাইলে সরাসরি ধরে পুলিশের কাছে দেবেন: মির্জা ফখরুল
বিএনপির কোনো নেতা-কর্মী অপকর্ম করলে তাঁদের ধরে পুলিশের দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নের মোলানী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে গণসংযোগের সময় তিনি এ বক্তব্য দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই দেশের জনগণের কাছে সবচাইতে নির্ভরশীল-নিরাপদ দল হচ্ছে বিএনপি। বিএনপিকে নিয়েই দেশের মানুষ আগামীর সরকার গঠন করতে চায়। এই অঞ্চলের মানুষ প্রথম থেকেই ধানের শীষে ভোট দিয়ে থাকে। আপনারা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করেন। অন্যায় করলে মানুষ ক্ষমা করবে না। আওয়ামী লীগকে যেভাবে ছুড়ে দিয়েছে, আপনাদেরও সেভাবে ছুড়ে দেবে। অন্যায় যেন কেউ না করেন, সেটা খেয়াল রাখবেন।’
নেতাদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘নিজেরা অত্যন্ত শক্তি নিয়ে আপনারা অপকর্মগুলো বন্ধ করার চেষ্টা করবেন। কেউ যদি করতে চায়, তবে আমাদের জেলার নেতাদের বলবেন, না হয় সরাসরি ধরে পুলিশের কাছে দেবেন।’
আয়নাঘর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা কী আয়নাঘরের কথা শুনেছেন? ওই ঘরটা কী জানেন? যাদের ওরা (আওয়ামী লীগ) মনে করেছে সরকারের জন্য ভালো না, সে সমস্যা করতে পারে; তাঁকে পুলিশ পাঠিয়ে তুলে নিয়ে গেছে। তুলে নিয়ে গুম। খবর নাই আর। এমন অসংখ্য ঘটনা। আমরা তো এমন ঘটনার হিসাব করেছিলাম ৮০০ থেকে ৯০০ হবে। পরে হাসিনা পালানোর পর জাতিসংঘ থেকে টিম আসল। তাঁরা বললেন, আয়নাঘরে ১ হাজার ৭০০ মানুষকে আটকে রাখা হয়েছিল।’
আরও পড়ুনরাখাইনে ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সরকারের উচিত ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা: মির্জা ফখরুল২৮ এপ্রিল ২০২৫বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ দেশের এমন একটা মানুষ নেই, যে কষ্ট শিকার করেনি। আমাদের সামনে এখন একটা সুযোগ এসেছে। এই সুযোগটা কাজে লাগাতে আমরা সবাই মিলে ভোট দিয়ে সংসদ নির্বাচন করতে চাই, সরকার নির্বাচন করতে চাই। যে সরকার আমাদের কথা শুনবে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আমরা এই সমাজে কোনো বিভেদ রাখতে চাই না। আমরা সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমরা একটা ভালোবাসার বাংলাদেশ দেখতে চাই। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সময় তারা (আওয়ামী লীগ) একটা ধোয়া ওঠাল যে হিন্দুদের নাকি মেরে ফেলা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন করেন, এখানে কয়টা হিন্দু মারা গেছে? কিন্তু ওরা এই কথাটা তুলছে। শুধু তুলছে না, সারা পৃথিবীতে এই কথাটা ছড়িয়ে দিয়েছে। উল্টো আমাদের ছেলেরা হিন্দু ভাইদের মন্দির-বাড়ি পাহারা দিয়েছে। মিথ্যাকে সত্য দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না।’
হিন্দু সম্প্রদায়ের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, ‘আপনারা সব সময় একটা কথা মনে রাখবেন, আমরা আপনাদের পাশে আছি। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি, ঠাকুরগাঁও একটা শান্তিপ্রিয় এলাকা। আমরা এই এলাকায় সবাই ভাইবোনের মতো বসবাস করি। এখানে কারও যেন কোনো ক্ষতি না হয়, আমরা তা নিশ্চিত করতে চাই। যখন কোনো গোলযোগ সৃষ্টি হয়েছে, আমরা আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আপনাদের এতটুকু নিশ্চয়তা দিতে পারি, বিএনপির আমলে আপনারা সবচাইতে নিরাপদে থাকবেন।’
বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘কেউ কেউ সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, ফ্যাসিবাদ হাসিনা নাকি আবার ফিরে আসবে। ফিরে এলে আমাদের কিছু করতে হবে না, তার ব্যবস্থা মানুষজনই নিয়ে নেবে। সে যে অত্যাচার–নির্যাতন চালিয়েছে, তার হিসেব মানুষই নিয়ে নেবে। আর ফিরে এলেও তাকে এ দেশের মানুষ আর রাজনৈতিকভাবে গ্রহণ করবে না।’
মোলানী উচ্চবিদ্যালয়ে গণসংযোগের পর মির্জা ফখরুল মহাদেবপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও চিলারং রেলঘুণ্টি এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহসভাপতি আল মামুন আলম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, সদর থানা বিএনপির সভাপতি আবদুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনট্রাম্প-সি-মোদি এসে বাংলাদেশে কিছু করে দিয়ে যাবেন না: মির্জা ফখরুল১৯ এপ্রিল ২০২৫