১৫ মামলা করেও পাওনা আদায় হয়নি বেবিচকের
Published: 7th, February 2025 GMT
উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন কাজ বাবদ বন্ধ হয়ে যাওয়া তিনটি বেসরকারি এয়ারলাইন্সের কাছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক)। সারচার্জসহ এসব টাকা আদায়ে তিন এয়ারলাইন্সের এমডির বিরুদ্ধে বেবিচক এরই মধ্যে ১৫টি মামলা করেছে।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা জজ আদালতে এসব মামলা করা হয়। তবুও এক টাকাও পাওনা আদায় করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া এসব এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনারেরও অভিযোগ আছে।
অভিযুক্ত তিন প্রতিষ্ঠান হলো– জিএমজি, ইউনাইটেড ও রিজেন্ট এয়ারলাইন্স। বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, ইউনাইটেডের এমডি তাসবিরুল আলম চৌধুরী, জিএমজির এমডি সাহাব সাত্তার ও রিজেন্টের এমডি ইয়াসিন আলীর বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৯০০ কোটি টাকার বেশি বকেয়ার অভিযোগে জিএমজির বিরুদ্ধে ৮টি, সাড়ে তিনশ কোটি টাকার বেশি বকেয়ার অভিযোগে ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে ৪টি এবং প্রায় তিনশ কোটি টাকা বকেয়ার অভিযোগে রিজেন্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা করা হয়।
২০০৭ সালে দেশে ফ্লাইট অপারেশন শুরু করে ইউনাইটেড। আগাম ঘোষণা ছাড়াই ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ করে দেয় তারা। সে সময় ইউনাইটেডের বহরে থাকা ৮টি উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেবিচকের দ্বারস্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। দুই সপ্তাহ পর ফিরে আসার আশা ব্যক্ত করলেও ৯ বছরেও আর ফিরতে পারেনি তারা। ফলে এত বছর ধরে শাহজালাল বিমানবন্দরের জায়গা দখল করে আছে ইউনাইটেডের উড়োজাহাজগুলো। বর্তমানে এসব উড়োজাহাজ রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ইউনাইটেডের কাছে বেবিচকের পাওনা ৩৫০ কোটি টাকা। পাওনা আদায়ে বেবিচক গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার ইউনাইটেডকে চিঠি দিলেও পাওনা আদায়ে কোনো সাড়া মেলেনি।
২০২২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পর্ষদ ভেঙে নতুন সাত স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলমকে করা হয় পর্ষদের চেয়ারম্যান। যদিও ২০২৩ সালে পরিষদ বিলুপ্তি ঘোষণা করা হয়। তার পরও প্রতিষ্ঠানটির বকেয়া প্রসঙ্গে কাজী ওয়াহিদুল আলম সমকালকে বলেন, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স ৮-৯ বছর ফ্লাইট পরিচালনার পর ২০১৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় বেবিচকের মূল বকেয়া পাওনা ৫৫ কোটি টাকা। বেবিচকের হিসাব অনুযায়ী সারচার্জসহ তা ৩৫০ কোটি টাকা। এয়ারলাইন্স আবার চালু হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে মূল পাওনা পরিশোধ করা হবে। এ কারণে সারচার্জের টাকা মওকুফ চেয়ে বেবিচক কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আমরা আবেদন করেছিলাম। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে এয়ারলাইন্স পরিচালনায় এওসি নবায়ন করতে পারিনি।
১৯৯৮ সালে চালু হওয়া জিএমজি বন্ধ হয় ২০১২ সালে। তাদের একটি উড়োজাহাজ এখনও রয়েছে বেবিচকের জিম্মায়। তাদের কাছে বেবিচকের পাওনা সারচার্জসহ ৯০০ কোটি টাকার বেশি। অন্যদিকে ২০১০ সালে চালু হওয়া রিজেন্ট বন্ধ হয় ২০২০ সালের মার্চে। তাদের দুটি উড়োজাহাজ আছে বেবিচকের কাছে। রিজেন্টের কাছে পাওনা সারচার্জসহ প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। পাওনা আদায় বিষয়ে এই প্রতিষ্ঠান দুটির কাউকে পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ আছে, বেবিচকের এক শ্রেণির কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এতদিন পাওনা আটকে রেখেছে এয়ারলাইন্স তিনটি। যদিও এ বিষয়ে বেবিচকের কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। বিষয়টি নিয়ে বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, বন্ধ থাকা তিনটি এয়ারলাইন্সের কাছে প্রায় ১ হাজার ৬০০ কোটি বকেয়া পাওনা রয়েছে। টাকা আদায়ে এয়ারলাইন্সগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা জজ আদালতে মামলা করা হয়েছে। আদালতের রায় অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে বকেয়া পাওনা আদায় করা হবে। এয়ারলাইন্সগুলোর যে ১২টি উড়োজাহাজ পড়ে আছে বিমানবন্দরে, সেগুলো নিয়েও মামলা করা হয়েছে। উড়োজাহাজগুলো নিলামে বিক্রি করতে আদালতের অনুমতির অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ২০২৬: সূচি ও ভেন্যু ঘোষণা
নারী ক্রিকেটের বৈশ্বিক মঞ্চে আবারও আলো ছড়াতে প্রস্তুত হচ্ছে ইংল্যান্ড। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) এবং ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি) যৌথভাবে ঘোষণা করেছে ২০২৬ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময়সূচি ও ভেন্যুর তালিকা। ১২ জুন শুরু হয়ে এই ক্রিকেট উৎসব চলবে ৫ জুলাই পর্যন্ত, যার সমাপ্তি ঘটবে ঐতিহ্যবাহী লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে জমকালো ফাইনালের মাধ্যমে।
এই আসরে প্রথমবারের মতো ১২টি দল অংশ নিচ্ছে, যারা দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে মোট ৩৩টি ম্যাচে। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য ২৪ দিনের রোমাঞ্চকর এক প্রতিযোগিতা অপেক্ষা করছে।
টুর্নামেন্টের সূচি উন্মোচনের অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হয় লর্ডসে। যেখানে উপস্থিত ছিলেন আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ, ইসিবি প্রধান রিচার্ড গুল্ড, ইংল্যান্ড নারী দলের কোচ চার্লট এডওয়ার্ডস এবং বেশ কয়েকজন তারকা ক্রিকেটার।
বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে সাতটি ঐতিহাসিক ও আধুনিক ভেন্যুতে— লর্ডস (লন্ডন), ওল্ড ট্রাফোর্ড (ম্যানচেস্টার), হেডিংলি (লিডস), এজবাস্টন (বার্মিংহাম), হ্যাম্পশায়ার বোল (সাউদাম্পটন), দ্য ওভাল (লন্ডন) এবং ব্রিস্টল।
আরো পড়ুন:
স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের সুপার সিক্স অনুর্ধ্ব-১৯ মেয়েরা
অস্ট্রেলিয়াকে নাড়িয়ে দিয়েও বাংলাদেশের হৃদয় ভাঙা হার
আগামী আসরে সরাসরি জায়গা করে নিয়েছে আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ আট দল: স্বাগতিক ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। বাকি চারটি দল আসবে কোয়ালিফায়ার পর্ব পেরিয়ে, যেখানে বাংলাদেশসহ আরও বেশ কিছু দলকে লড়াই করতে হবে মূলপর্বে জায়গা পাওয়ার জন্য।
আইসিসি চেয়ারম্যান জয় শাহ এক বার্তায় জানান, “২০১৭ সালে নারী ক্রিকেট ইতিহাসে যে অধ্যায় লর্ডসে রচিত হয়েছিল, এবার আমরা সেই আবহে ফিরে যেতে চাই। ২০২৮ সালের অলিম্পিকে ক্রিকেট অন্তর্ভুক্তির দিকেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
ইসিবি প্রধান রিচার্ড গুল্ড বলেন, “আমরা গর্বিত যে বিশ্বের সেরা কয়েকটি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে পারছি। নারী ক্রিকেটকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে এই আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আর লর্ডসে ফাইনাল আয়োজন—এটা প্রতিটি ক্রিকেটারের স্বপ্নপূরণের এক সম্ভাবনা।”
ঢাকা/আমিনুল