অডিওবুকের ধারণা আমাদের দেশে কিছুটা নতুন হলেও সারাবিশ্বের প্রেক্ষাপটে বেশ পুরনো। এটি এমন একটি মাধ্যম যেখানে বই পড়ে শোনানো হয়। বাংলা সাহিত্যকে ‘অডিও’ আকারে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাঙালির কাছে পৌঁছে দিতে কাজ করছে কাহিনীক অডিওবুক। এই প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। কাহিনীক একটি ইন-অ্যাপ অডিও।  

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক প্রবাসী কম্পিউটার বিজ্ঞানী ইফতেখার আলম ইভান এই অডিওবুক অ্যাপের স্বপ্নদ্রষ্টা। তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী মামুন আকবর, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম.

হামিদ, ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী মো. মিজানুর রহমান ভূঞা, নিউইয়র্ক প্রবাসী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শেহলা যামানী ইফতেখার ও উন্নয়নকর্মী ইমরাদ জুলকারনাইন ইমন।

রাজধানীর ধানমন্ডির সোবহানবাগের ১৩ নাম্বার রোডের ডরিন টাওয়ারের ৫ম তলায় অবস্থিত তাদের অফিস। এখানে বিভিন্ন বিভাগে কাজ করছেন সর্বমোট ১১ জন।

আরো পড়ুন:

বইমেলায় নতুন উপন্যাস ‘তিতাসের বুনো হাঁস’ 

বইমেলার তৃতীয় দিনে ৩২ নতুন বই প্রকাশিত

কাহিনীকের ভাবনা ও স্বপ্ন নিয়ে রাইজিংবিডির সাথে কথা বলেছেন এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান কিউরেটর ইফতেখার ইভান। তিনি বলেন, ‘‘ আমরা ১০০ বইয়ের অডিও ভার্সন নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছি। আমাদের স্বপ্ন বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে বিশ্ব দরবারে নিয়ে যাওয়া। বই সারা বিশ্বে ছড়ানো কঠিন কাজ কিন্তু আমাদের অ্যাপ হাতে নিলেই সব বই পেয়ে যাবে। বাংলাদেশের মানুষের এটা বুঝতে বা গ্রহণ করতে আরো সময় লাগবে। আমরা চেয়েছি ভাষা ও সাহিত্যকে সারা বিশ্বে পৌঁছে দিতে। ইবুক একটা মাধ্যম, অডিওবুক একটা মাধ্যম। অডিওবুক নতুন শিল্প। অডিওবুক সারাবিশ্বে জনপ্রিয় জায়গা করে নিয়েছে। ই-বুক এবং অডিওবুকের সেল প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে।’’

‘‘বাংলাদেশ থেকে অ্যাপটাকে বৈশ্বিকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা আমাদের আছে।  কিন্তু অনেক কারিগরি বাধা রয়েছে। যেমন এমন কিছু দেশ রয়েছে যেগুলো কয়েক মাস পর পরই আইন পাল্টায়। অ্যাপল মাঝে মধ্যেই আইন পাল্টায়, অ্যান্ড্রয়েডও তাই। আবার আমাদের দেশে ফরেন কারেন্সি আনা নেওয়ার ব্যাপারে অনেক বাধা রয়েছে। ফলে বিদেশে অবস্থানরত সেই দেশের বাঙালিরা কীভাবে অ্যাপসটি পাবেন সেটা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়েছে।’’— যোগ করেন ইফতেখার ইভান। 

প্রথমে অডিও পরে প্রিন্ট ভার্সনে বই প্রকাশ করার উপায় আছে কি? – প্রশ্নের উত্তরে ইফতেখার বলেন,  ‘‘আমরা তো মূলত অডিও প্রকাশক। আমরা প্রকাশকদের সঙ্গে চুক্তি করে বই অডিওবুক প্রকাশ করছি। আমাদের একটা বড় স্বপ্ন প্রকাশনা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা এবং প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে থাকা। আপনি দেখবেন যে আমাদের এখানে হুমায়ূন আহমেদের বই নেই, কারণ আমরা এখনও হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের কাছ থেকে স্বত্ব নেইনি। আমারা সমরেশ মজুমদারের সঙ্গে কন্টাক্ট রয়েছে, এগারোটা বই পেয়েছি। কেউ যদি মানসম্মত লেখা আনে। সেটা চাইলে প্রিন্ট ভার্সন প্রকাশ করার আগেও অডিও ভার্সনে আসতে পারে। পরে বই হয়ে বের হলেও সমস্যা নেই।’’

কাহিনীক অডিওবুক শোনার জন্য প্লে স্টোর বা অ্যাপেল স্টোর থেকে কাহিনীকের অ্যাপ নামাতে হবে। এরপর প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। অ্যাপ এ যাওয়ার পর কিছু বই আপনি ফ্রিতে শুনতে পারবেন। মাসিক, ষান্মাসিক ও বাৎসরিক চুক্তিতে বই শুনতে পারবেন এই কাহিনীক অডিওবুকে। সামনে আসছে কাহিনীক ভিডিওবুক বা পডকাস্ট। এই মডেলে ‘ফ্রেন্ডস অ্যান্ড ফ্যামিলি’ নামের একটি অপশন রয়েছে—এখানে একজন সাবস্ক্রাইবার তিনজন ফ্যামেলি মেম্বারকে অ্যাড করতে পারবেন। যার মাসিক ফি ২২৫ টাকা। ২২৫ টাকায় আপনি একমাসের সাবস্ক্রিপশন কিনে নিতে পারেন। ছয় মাসের ফি ১১২৫ টাকা এবং বার্ষিক ফি ২২৫০ টাকা। 

ইফতেখার ইভান অডিওবুকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে বলে জানান। তিনি উল্লেখ করেন মানুষ কাহিনী শুনতে পছন্দ করে। ‘কাহিনীক’ নামটাও আমরা বাছাই করেছি এই ভেবে যে, মানুষ যেন নামটা শুনলেই বুঝতে পারে কেউ গল্প বলছে। তাছাড়া এই নামটা ইংরেজিতে লিখলেও এর কোন উচ্চারণের পার্থক্য নেই। অনেক ভেবেই এ নামটা দেওয়া।

কাহিনীক মনে করে অডিও বুক হলো ছাপা বইয়ের সম্প্রসারিত এক রূপ। 

ঢাকা/লিপি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বই ইফত খ র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ঘাড়ব্যথার কারণগুলো কী কী, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা জেনে রাখুন

অনেক কারণে ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য—

১. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস

২. সারভাইক্যাল স্পন্ডেলোসিস

৩. সারভাইক্যাল রিবস

৪. সারভাইক্যাল ক্যানেল স্টেনোসিস বা স্পাইনাল ক্যানাল সরু হওয়া

৫. সারভাইক্যাল ডিস্ক প্রলেপস বা হারনিয়েশন যেখানে হারনিয়াটেড ডিস্ক নার্ভের ওপর চাপ প্রয়োগ করে

৬. মাংসপেশি, হাড়, জোড়া, লিগামেন্ট, ডিস্ক (দুই কশেরুকার মাঝখানে থাকে) ও স্নায়ুর রোগ বা ইনজুরি

৭. অস্বাভাবিক পজিশনে নিদ্রা

৮. উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদ্‌রোগ

৯. হাড় ও তরুণাস্থির প্রদাহ এবং ক্ষয়

১০. অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় ও ভঙ্গুরতা রোগ

১১. হাড় নরম ও বাঁকা হওয়া

১২. রিউমাটয়েড-আর্থ্রাইটিস ও সেরো নেগেটিভ আর্থ্রাইটিস

১৩. সারভাইক্যাল অস্টিও-আর্থ্রাইটিস

১৪. ফাইব্রোমায়ালজিয়া

১৫. সামনে ঝুঁকে বা পাশে কাত হয়ে ভারী কিছু তুলতে চেষ্টা করা

১৬. হাড়ের ইনফেকশন

১৭. ডিস্কাইটিস (ডিস্কের প্রদাহ)

১৮. পেশাগত কারণে দীর্ঘক্ষণ ঘাড় নিচু বা উঁচু করে রাখলে ইত্যাদি।

উপসর্গ

ঘাড়ব্যথা কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুল পর্যন্ত ছড়াতে পারে।

কাঁধ, বাহু, হাত ও আঙুলে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা অবশ ভাব।

বাহু, হাত ও আঙুল দুর্বল হতে পারে।

সব সময় ঘাড় ধরে বা জমে আছে মনে হয়।

ঘাড়ের মুভমেন্ট করলে, ঘাড় নিচু করে ভারী কিছু তোলার পর তীব্র ব্যথা।

হাঁচি, কাশি দিলে বা সামনে ঝুঁকলে ব্যথা বেড়ে যায়।

ব্যথা মাথার পেছন থেকে শুরু হয়ে মাথার সামনে আসতে পারে।

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

ঘাড়ব্যথার কারণ নির্ণয় করার জন্য প্রয়োজনীয় ল্যাবরেটরি পরীক্ষা হতে পারে—রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা, ঘাড়ের এক্স-রে, এমআরআই বা সিটি স্ক্যান।

চিকিৎসা

চিকিৎসা এর কারণগুলোর ওপর নির্ভর করে।

কনজারভেটিভ চিকিৎসা: ১. ব্যথা বা প্রদাহনাশক ওষুধ ২.ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। বিভিন্ন ধরনের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যেমন ম্যানুয়াল বা ম্যানুপুলেশন থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রোমেডিকেল ইকুইপমেন্ট যেমন ইন্টারফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, অতি লোহিত রশ্মি, মাইক্রোওয়েভ ডায়াথারমি, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, শর্টওয়েভ ডায়াথার্মি ও ইন্টারমিটেন্ট ট্র্যাকশন ইত্যাদির মাধ্যমে চিকিৎসা করা যায়।

সার্জিক্যাল চিকিৎসা: মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো না হলে, ব্যথা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকলে, স্নায়ু সমস্যা দেখা দিলে, বাহু, হাত ও আঙুলে দুর্বলতা এবং অবশ ভাব দেখা দিলে এবং প্রস্রাব বা পায়খানার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে দ্রুত সার্জিক্যাল চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।

ঘাড়ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়

১. সামনের দিকে ঝুঁকে দীর্ঘক্ষণ কাজ করবেন না।

২. মাথার ওপর কোনো ওজন নেবেন না।

৩. প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে হবে।

৪. শক্ত বিছানায় ঘুমাবেন।

৫. শোবার সময় একটা মধ্যম সাইজের বালিশ ব্যবহার করবেন, যার অর্ধেকটুকু মাথা ও অর্ধেকটুকু ঘাড়ের নিচে দেবেন।

৬. তীব্র ব্যথা কমে গেলেও ঘাড় নিচু বা উঁচু করা, মোচড়ানো (টুইসটিং) বন্ধ করা।

৭. সেলুনে কখনোই ঘাড় মটকাবেন না।

৯. কাত হয়ে শুয়ে পড়বেন না বা টেলিভিশন দেখবেন না।

১০. কম্পিউটারে কাজ করার সময় মনিটর চোখের লেভেলে রাখবেন।

১১. গরম প্যাড, গরম পানির বোতল দিয়ে গরম সেঁক দেবেন।

১২. ঘাড়ের পেশি নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে।

এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ঢাকা

আরও পড়ুনকাঁধের ব্যথা বা কাঁধ জমে যাওয়ার কারণ ও করণীয়১৭ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ