অসহায়ত্ব থেকেও নতুনের মতো কিছু জন্মাতে পারে: আনিফ রুবেদ
Published: 8th, February 2025 GMT
‘জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার, ২০১২’ প্রাপ্ত সাহিত্যিক আনিফ রুবেদ। ২০২৫ বইমেলায় প্রকাশ হয়েছে তার অণুগল্প গ্রন্থ ‘‘যে জীবের হাত নেই পা নেই পুরোটাই পেট’। আনিফ রুবেদ কীভাবে একটি গল্প বুনন করেন, তার গল্প ভাবনা কি—এসব বিষয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার গ্রহণে স্বরলিপি।
রাইজিংবিডি: গল্পে আপনি দারুণ নিরীক্ষা করেন। গল্পে অর্জন করেছেন জেমকন তরুণ কথাসাহিত্য পুরস্কার, ২০১২ আপনার গল্পভাবনা জানতে চাই।
আনিফ রুবেদ: প্রতিটা মানুষ আলাদা। তাদের মাংসপেশীর গঠন, তাদের দেহের কাঠ আর কাঠামো, মগজ আর হৃৎমাংসের সংস্থান, চিন্তা ও চিন্তার ক্ষমতা, চলনফেরন, সারাদিনের শ্বাস-প্রশ্বাসের সংখ্যা আর স্বরযন্ত্র থেকে বের হওয়া স্বর সবই আলাদা। ফলে প্রকাশভঙ্গি আলাদা হবেই। যখন এই পার্থক্যটা একটু বেশি লক্ষ্য করা যায় তখন সেটাকে আমাদের মনে হয়, এটা বুঝি নিরীক্ষা। আবার অসহায়ত্ব থেকেও নতুনের মতো কিছু জন্মাতে পারে; এ অসহায়ত্ব হলো, কোনো একটা ভাব প্রকাশের জন্য আকুলিবিকুলি আছে কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো ছক জানা নেই; এসময় সেই ভাবের প্রচণ্ড চাপের জন্য নতুনের মতো একটা পথ বেরিয়ে আসে; এটাকেও তখন আমাদের নীরিক্ষা বলে মনে হতে পারে। অবশ্য সচেতনভাবেও আলাদা কিছু করা যায় এবং আমরা নিরীক্ষা বলতে পারি। আমার ক্ষেত্রে নিরীক্ষা ব্যাপারটাকে এসবের সমন্বিত একটা রূপ ধরে নেওয়া যায়।
পৃথিবীতে প্রতি মুহূর্তে গল্প ঘটে চলেছে। এই যে আপনি আমার সাক্ষাৎকার নিতে চাইলেন এবং আমি দিতে চাইলাম এবং সেই সাক্ষাৎকারের উত্তর করছি এখন। এটা একটা গল্প। এই একটা গল্পের ভেতরে দুটো ব্যাপার আছে। একটা বাইরের ব্যাপার একটা ভেতরের ব্যাপার। বাইরের ব্যাপারটা বর্ণিত হয়েই গেছে। কিন্তু এখানেই থামতে চাই না আমি। আমি এই গল্পের একেবারে ভেতরটাও বলতে চাই। সাক্ষাৎকার চাওয়ার সময় আপনার মনের ভেতর কি কি তৈরি হয়েছিল এবং আমার মনের ভেতর কি কি তৈরি হয়েছিল তা বলতে চাই। আমি বলতে চাই পৃথিবীর বনগুলো, পৃথিবীর জলগুলো, পৃথিবীর পাখিগুলোর কে কি করছিল। আমি বলতে চাই, পৃথিবী যখন সৃষ্টি হচ্ছিল তখনও তার ভেতর এই গল্পটা ছিল।
আমার শব্দ [ওয়ার্ড] এবং শব্দের [সাউন্ড] প্রতি বেশ দুর্বলতা আছে। এগুলোর ভেতরেই দর্শন আছে এবং এদের ভেতর থেকে যে দর্শন জাগে তাও রাখি এগুলোর ভেতরেই। ফলে শব্দ অনেক সময় আমার গল্পের চরিত্রগুলো চরিত্র ঠিক করে দেয়।
আরো পড়ুন:
বইমেলায় ভ্রমণগদ্য ‘পূর্ব আফ্রিকার তিনকাহন’
বইমেলায় ‘আবৃত্তির কলাকৌশল ও নির্বাচিত কবিতা’
রাইজিংবিডি: নতুন অণুগল্পের বই সম্পর্কে কিছু বলুন।
আনিফ রুবেদ: এবার যে বই বেরুচ্ছে সেটার নাম ‘যে জীবের হাত নেই পা নেই পুরোটাই পেট’। বইটাতে যে লেখা আছে তার প্যাটার্নটাকে আসলে কী নামে ডাকব তা নিজেই ঠিক করতে পারিনি। এর নির্মেদ দেহসংস্থান অনেকটা কবিতার মতো; এর মাংস এবং রক্তের রঙ অনেকটা গল্প বা অণুগল্পের মতো; আবার বাউল কবিরা যেমন নিজের নাম ব্যবহার করে ভনিতা দেন তেমন ভনিতাও রয়েছে এই লেখাগুলোতে। বরং পাঠক এবং সমালোচকগণেরই ভার পড়ল এই প্যাটার্নটাকে একটা বিশেষ্য বা বিশেষণ দান করার জন্য।
রাইজিংবিডি: লেখা এবং পড়ার সমন্বয় করেন কীভাবে?
আনিফ রুবেদ: সারাদিনের জন্য আমার একটা টার্গেট থাকে পড়া, শোনা এবং লেখার জন্য। যদিও সবসময় এটা পূর্ণ হয় না। আমি চাই প্রতিদিন ৫০ পৃষ্ঠা পড়তে, বিভিন্ন কাজের মধ্যেই তিন চার ঘণ্টা গান শুনতে, কিছু সময় নিজে কোনো বাদ্যযন্ত্র বাজাতে এবং কয়েকটি বাক্য হলেও লিখতে।
এক্ষেত্রে সবসময় একটা বই আমার সাথে রাখি যাতে যেকোনো জায়গায় পড়তে পারি; বিশেষ করে অপেক্ষার সময়গুলো। গানটা শোনা হয় নিজের লেখা বা লেখা সংশোধন করার সময়। নিজে যখন বাজাতে চেষ্টা করি সেটার জন্য আলাদা সময় ঠিক করতে হয়। লিখতে ইচ্ছে করলে অন্যগুলোকে সরিয়ে রাখি; লিখি। এই তো; এভাবেই সমন্বয়; এভাবেই যাপন।
রাইজিংবিডি: প্রকাশনীরগুলোর মধ্যে কোনটির সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সুখকর?
আনিফ রুবেদ: যখন প্রথম বই বের হয় তখন বেশ কান্নাকাটি করার মতো অবস্থা। আসছে আসছে বলতে বলতে একেবারে বইমেলা শেষ হবার সপ্তাহ খানেক আগে বইয়ের কাজ শেষ হয়। কিন্তু দেখা গেল বইয়ের নাম ভুল ছাপা হয়েছে। তারপর আবার ঠিক করার পর বই এলো মেলা শেষ হবার দুদিন আগে। এবার দেখা গেল আমার নামের বানান ভুল ছাপা হয়েছে। আবার উঠিয়ে নেওয়া হলো। বইটি আর মেলাতে নামতে পারেনি। পরবর্তীতে সংশোধিত অবশ্য হয়েছিল। এটা যেহেতু বড়ো ধাক্কার মতো ছিল আমার কাছে ফলে পরবর্তীতে যে ধাক্কাগুলো পেয়েছি সেগুলোকে আর তেমনকিছুই মনে হয়নি।
পরে ঐতিহ্য এবং নৈঋতা ক্যাফের সাথে কাজ করেছি। তারা ভালো করেছেন আমার সাথে। এবার প্রতিকথা থেকে বই এসেছে। তাদের সাথে কাজ করেও আনন্দ পেলাম।
রাইজিংবিডি: লেখকের বই প্রচার কৌশল কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
আনিফ রুবেদ: এখন প্রচার মাধ্যম বলতেই ফেসবুক। লেখকগণ ফেসবুকে বইয়ের প্রচ্ছদ পোস্ট করে প্রচার করেন। কিন্তু প্রচারের ভাষাটা বেশিরভাগ লেখকই রপ্ত করতে পারেননি। কেউ কেউ পেরেছেন এবং তাতে ভালো ফলও হয়। আমিও খুব ভালো প্রচার দিতে পারি না।
এগুলো সকল লেখকের খুব ভালো পারার কথাও নয়। সুতরাং লেখকের বই প্রচারের কৌশল কেমন হতে হবে তা বলতে পারব না। মনে হয়, এগুলো প্রকাশকের পক্ষ থেকে হলেই সবচেয়ে ভালো হয়। দেশে পাঠকের সংখ্যা বাড়ানোর জন্যও প্রকাশকদের বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নেওয়া উচিত বলে মনে করি।
ঢাকা/লিপি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র জন য ঠ ক কর বইম ল
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল
ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।
বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।
প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে
জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সাড়ে চারটায় জামায়াতআজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলনজোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসআসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।