বিপদে হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল পাঠের মাহাত্ম্য
Published: 9th, February 2025 GMT
হজরত ইব্রাহিম (আ.)–কে যখন অবিশ্বাসী অত্যাচারী শাসক নমরুদ আগুনে নিক্ষেপ করে, তখন তিনি পড়েন ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল’। যার ফলে আল্লাহ হজরত ইব্রাহিম (আ.)–কে আগুন থেকে রক্ষা করেছিলেন।
পবিত্র কোরআনে সুরা আলে ইমরানের ১৭৩ নম্বর আয়াতের অংশ ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল।’ অর্থ: আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনিই কত ভালো কর্মবিধায়ক।
‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল।’ এই দোয়া জিকির যেকোনো সময় করা যায়। অসুস্থ বা উদ্বিগ্ন অবস্থায়, কোনো ক্ষতির আশঙ্কায় অথবা শত্রুর হাত থেকে মুক্তির জন্য এ দোয়া বিশেষ কার্যকর। এই দোয়ায় আল্লাহর কাছে সরাসরি কিছু চাওয়া হয় না। আল্লাহই যথেষ্ট এবং উত্তম সাহায্যকারী। অন্য দোয়ার মতো আল্লাহর কাছে কোনো আবেদন করা হয় না। দোয়াটি এত গুরুত্বপূর্ণ যে হজরত ইব্রাহিম (আ.
এই আয়াতের প্রেক্ষাপট হলো মুসলিমরা প্রথমবারের মতো জানতে পারে তাদের বদরের যুদ্ধে অংশ নিতে হবে। আবু সুফিয়ানের বাণিজ্যযাত্রা, মক্কার কুরাইশদের এক হাজার সদস্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে আগমন সব তথ্য মুসলিমরা পাচ্ছিল। মুসলিমরা বদরের ময়দানে যুদ্ধের জন্য উপস্থিত হলেও তাদের তখনো প্রস্তুতি চলছিল।
আরও পড়ুন‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া’ কেন পড়ব২৪ মার্চ ২০২৪এ অবস্থায় সাহাবিদের মানসিকতা কেমন ছিল, আল্লাহ সে প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তাদেরকে লোকে বলেছিল যে তোমাদের বিরুদ্ধে লোক জমায়েত হয়েছে। সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো । তখন এ তাদের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছিল আর তারা বলেছিল ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনিই কত ভালো কর্মবিধায়ক।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৩)
এটি পড়ার কথা সহিহ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত। রাসুল (সা.) মুশরিকদের হামলা হবে, এমন খবর শুনে হামরাউল আসাদ নামক জায়গায় দোয়াটি পাঠ করেন। (বুখারি, হাদিস: ৪৫৬৩)
এখানে আল্লাহকে ওয়াকিল বলা হয়েছে। ওয়াকিল মানে হলো অভিভাবক। মানুষ যখন আল্লাহর হাতে নিজেদের কোনো সংকটকালীন মুহূর্তে সোপর্দ করে, তখন আল্লাহ নিজেই তাদের হেফাজত করা এবং সমস্যা সমাধান করার যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন। একইভাবে সুরা তওবার ৫৯ নম্বর আয়াতে আছে, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ওদেরকে যা দিয়েছেন, তাতে যদি ওরা তুষ্ট হতো, তাহলে বলা হতো আর যদি বলত আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ অবশ্যই শিগগিরই নিজের অনুগ্রহ থেকে আমাদের দান করবেন ও তাঁর রাসুল দান করবেন; আমরা আল্লাহরই ভক্ত। (সুরা তওবা, আয়াত: ৫৯)
আরও পড়ুনস্রষ্টা ও সৃষ্টি কি এক হতে পারে২৪ মার্চ ২০২৪আবার সুরা তওবার শেষ আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারপর ওরা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে তুমি বলো আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; তিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। আমি তাঁর ওপরই নির্ভর করি আর তিনি মহা আরশের অধিপতি।’ (সুরা তওবা, আয়াত: ১২৯)
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যখন ইব্রাহিম (আ.)–কে আগুনের কুণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন—হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল। ফলে তিনি রক্ষা পেয়েছিলেন। সেই জ্বলন্ত আগুন তাঁর জন্য শীতল হয়ে পড়েছিল। মুহাম্মদ (সা.) তখন বলেছিলেন, ‘যখন লোকেরা বলেছিল, (কাফির) লোকেরা তোমাদের মোকাবিলার জন্য সমবেত হয়েছে। ফলে তোমরা তাদের ভয় করো। কিন্তু এ কথা তাদের ইমান বাড়িয়ে দিল এবং তারা বলল—হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল। অর্থাৎ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক।’ সাহাবিরা এই দোয়া আমল করেছিলেন খন্দকের যুদ্ধের সময়। যখন সাহাবিরা জানতে পারলেন ১০ হাজার সেনা এসে মদিনা শহরকে ঘেরাও করতে যাচ্ছে, তখনো তাঁরা আল্লাহর কাছে এই বলে সাহায্য কামনা করেছিলেন—হাসবুনাল্লাহি ওয়া নিমাল ওয়াকিল। (বুখারি: ৪৫৬৩-৪৫৬৪)
আরও পড়ুনতিনি কলমকে বললেন, সময়ের শেষ পর্যন্ত লেখো২৩ মার্চ ২০২৪তিরমিজি শরিফে একটি হাদিস আছে। হাদিসটি যে পরিচ্ছেদে আছে, তার নাম হলো, ‘বিপদে আপনি যা করবেন।’ অর্থাৎ বিপদে পড়া অথবা বিপদের আশঙ্কা থাকে, তখন করণীয় কী? হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কেমন করে হাসিখুশি থাকব, অথচ শিঙাওয়ালা (ইসরাফিল ফুৎকার দেওয়ার জন্য) শিঙা মুখে ধরে আছেন। আর তিনি কান লাগিয়ে আছেন যে তাঁকে কখন ফুৎকার দেওয়ার আদেশ করা হবে এবং তিনি ফুৎকার দেবেন।’ এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ (সা.)–এর সাহাবিরা রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন। এমনটি দেখে মহানবী (সা.) তাঁদের বললেন, ‘তোমরা বলো, হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল।’ অর্থাৎ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনিই কত ভালো কর্মবিধায়ক। (তিরমিজি: ২৪৩১, ৩২৪৩
আরও পড়ুনইয়াজুজ–মাজুজের কাহিনি০৬ এপ্রিল ২০২৪উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: হ সব ন ল ল হ এই দ য় কর ছ ল আল ল হ আর ত ন বল ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার
২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।
মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।
ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।
স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।
শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’
তার জন্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”
"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।
প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"
ঢাকা/ইয়াসিন