ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে মানুষের চাপ কমানোর উপায় কী
Published: 9th, February 2025 GMT
অভিবাসন একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কর্মসংস্থানের সন্ধানে মানুষ বিভাগীয় শহরগুলোয় ছুটে যান। কিন্তু ক্রমাগত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এসব শহর ঘনবসতিপূর্ণ হয়ে উঠছে, যা মানুষের বসবাসের জন্য অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের অন্যতম দুটি বিভাগীয় শহর ঢাকা ও চট্টগ্রাম কর্মসংস্থানের জন্য মানুষের প্রধান গন্তব্য হয়ে উঠেছে। ঢাকার জনসংখ্যা এতটাই বেড়েছে যে কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শীতকালেও মানুষ গরম অনুভব করছে। ময়লা-আবর্জনার পরিস্থিতিও ভয়াবহ; বুড়িগঙ্গা নদী তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আইকিউএয়ারের মানসূচক অনুযায়ী ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২৫২, যা বিশ্বের ১২৪টি নগরীর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান তিনটি কারণ হলো ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলা।
অন্যদিকে বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামেও ঘনবসতি ক্রমেই বাড়ছে। অনেকের ধারণা, বিভাগীয় শহরে থাকলে জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়। তাই অনেকে গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে ছুটছেন।
চট্টগ্রাম শহরে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষের স্থায়ী নিবাস চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরে। একজনের কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে যাওয়া থেকে শুরু হয়ে সেখানে কয়েকটি পরিবারের স্থায়ী বসবাস গড়ে উঠেছে। ফলে শহরের জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে চট্টগ্রামে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মাণ করতে হচ্ছে ও পানিনিষ্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার অভাব দেখা দিচ্ছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে আইকিউএয়ারের মানসূচক অনুযায়ী চট্টগ্রামের বায়ুর মান ছিল ৯৮, যা ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে।
এসব সমস্যার মূল কারণ হলো কর্মসংস্থান প্রধানত ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক। দেশের অধিকাংশ শিল্পকারখানা এ দুটি শহরের আশপাশে স্থাপন করা হচ্ছে। অথচ সরকার প্রতিটি বিভাগে বড় পরিসরে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করেছে। পদ্মা সেতু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯টি জেলাকে ঢাকার সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। ফলে এসব জেলায় শিল্পকারখানা গড়ে তোলার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যেমন বরিশাল বিভাগ এখন শিল্পায়নের উপযোগী। এখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে বরিশাল বিভাগের মানুষ নিজ এলাকায় কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন, ফলে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ওপর চাপ কমবে। এই দুই শহরের জনসংখ্যার চাপ কমাতে ও অভিবাসনের হার নিয়ন্ত্রণে আনতে নিচের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে—
১.
২. চাকরির ক্ষেত্রে নিজ বিভাগের আওতাভুক্ত জেলায় পোস্টিং দেওয়া (নিজ জেলা ব্যতীত)।
৩. প্রশাসনিক কার্যক্রম বিভাগীয় পর্যায়ে ভাগ করে দেওয়া, যাতে মানুষকে বারবার ঢাকায় আসতে না হয়।
৪. গ্রামেও শহরের মতো মৌলিক সুবিধা নিশ্চিত করে জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।
৫. পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা রেখে ও পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের সুযোগ রেখে স্থাপনা নির্মাণ করা।
উল্লিখিত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অভিবাসনের হার ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামকে বসবাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
মুরশিদ আলম
শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি প্রশাসন অনুষদ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জনস খ য শহর র বসব স
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে কিছু কিছু জায়গায়: আইন উপদেষ্টা
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় সরকার গঠিত কমিটির প্রধান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেছেন, তাঁর কাছে মনে হয়েছে, অবশ্যই কিছু কিছু জায়গায় অধ্যাদেশটির পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে। এ নিয়ে আজ বিকেলে পর্যালোচনা কমিটি বৈঠকে বসবে।
আজ সোমবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠান শেষে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি তখন (অধ্যাদেশটি অনুমোদনের সময়) বিদেশে ছিলাম। আমি আইনটি প্রণয়নের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলাম না। তো পরবর্তীকালে যখন আমি আইনটি দেখেছি, তারপর আমার কাছে মনে হয় যে, অবশ্যই এটা পুনর্বিবেচনার সুযোগ রয়েছে কিছু কিছু জায়গায়।’
আরও পড়ুনসচিবালয়ে আবারও বিক্ষোভ কর্মচারীদের৩৪ মিনিট আগেসরকার কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে অধ্যাদেশটি করেনি বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তিনি শুধু একটা কথা বলতে পারেন, সরকার কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে আইনটি করেনি। অসৎ উদ্দেশ্যে করা না হলেও কোনো আইনে এমন বিধান থাকতে পারে, যেটা যাঁরা আইনের সাবজেক্ট, তাঁদের কাছে মনে হতে পারে, তাঁরা বিড়ম্বনা ও হয়রানির শিকার হতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, ‘সেটি আমরা স্বীকার করি যে, এ রকম সম্ভাবনা এই আইনে থাকতে পারে।’
পর্যালোচনা কমিটির প্রধান আইন উপদেষ্টা জানান, কমিটি আজ বিকেল চারটায় বৈঠকে বসে সরকারি কর্মচারীরা যেসব দাবি দিয়েছেন, সেগুলোর কী কী বিবেচনা করা হবে, কীভাবে করা হবে, তা ঠিক করা হবে। ঠিক করার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কমিটি একটি প্রতিবেদন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তুলবে। কমিটি শুধু প্রতিবেদন দেবে। কমিটি সিদ্ধান্ত দেওয়ার মালিক না।
এ রকম পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরে কর্মসূচি দেওয়ার জন্য আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীদের প্রতি অনুরোধ জানান আইন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, কমিটির কাজ যদি পছন্দ না হয়, তাহলে (কর্মসূচি) দেন। সরকারি কাজে যেন ব্যাঘাত না হয়, সেটি লক্ষ্য রাখার জন্য কর্মচারীদের প্রতি অনুরোধ করেন তিনি।
‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ বাতিলের দাবিতে পবিত্র ঈদুল আজহার আগে থেকে বেশ কিছু দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা। তাঁরা বিক্ষোভ, কর্মবিরতি ও স্মারকলিপি দেওয়ার মতো কর্মসূচি পালন করেছেন।
ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার এক দিন পর আজ সোমবার আবার সচিবালয়ের ভেতরে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারী কর্মচারীরা। বিক্ষোভ শেষে আজ সরকারের আরও তিন উপদেষ্টার কাছে তাঁদের স্মারকলিপি দেওয়ার কথা রয়েছে।
সরকার ঈদের ছুটি শুরু আগে আগে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫’ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে। অধ্যাদেশটি বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ের কর্মচারীদের আন্দোলনের মুখে এ কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ।