সারাদেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনা করে প্রথম ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মহানগর এলাকায় ২৭৪ জন এবং রেঞ্জে ১ হাজার ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাজীপুরেই গ্রেপ্তার ৮১ জন। পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব জানা গেছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মী রয়েছেন। এদিকে হাতিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তার হয়েছেন পাঁচজন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র বলছে, অপারেশন ডেভিল হান্টে করণীয় নিয়ে গতকাল রোববার পুলিশ সদরদপ্তরে একাধিক বৈঠক হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। 

গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, যারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেই অভিযানে নেমেছেন তারা। আর যতক্ষণ না ‘ডেভিল’ শেষ হচ্ছে, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ ততক্ষণ চলবে।
এ অভিযান কাদের বিরুদ্ধে– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘ডেভিল মানে কী? শয়তানই তো টার্গেট এটায়।’ 

গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর এবং পাল্টা হামলায় কয়েকজন আহতের ঘটনার পর সারাদেশে শনিবার থেকে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরুর ঘোষণা দেয় সরকার। এ অভিযান শুরুর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব নাসিমুল গনি বলেন, ‘বিপ্লব যে দেশে হয়, সে দেশে পরাজিত শক্তিকে কেউ রাখে না। তবে বাংলাদেশে সরকার অতটা অমানবিক হতে পারেনি। আমরা কিছুটা রিফর্ম করেছি। কিছুটা রিয়ালাইজ করেছি যে কিছু লোক ভয়ে (গত সরকারের কর্মকাণ্ড সমর্থন) করেছে, প্রেশারে করেছে, বিভিন্ন কারণে করেছে। কিছু ডাইহার্ড (একনিষ্ঠ) ছিল, তারা পালিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন হচ্ছে।’

অপারেশন ডেভিল হান্ট কেন প্রয়োজন হলো– জানতে চাইলে সচিব বলেন, ‘এখন দেখা গেল র‍্যান্ডম শুরু হয়ে গেছে দেশকে আনস্টেবল (অস্থিতিশীল) করার চেষ্টা। এই জিনিসটা যেন না থাকে। যাতে মানুষের মনকে উদ্বেলিত না করে, সেজন্য এই প্রচেষ্টা। আরেকটু ফোকাসড ওয়েতে।’
অভিযানের নামকরণ নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি অপারেশনের একটা কোড নেম হয়, ফোকাস করার জন্য। পুলিশের ও ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আছে, সেই ক্ষমতাই ডেভিল হান্ট অপারেশনে প্রয়োগ করা হচ্ছে।’ 

এ অভিযানে পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে নাসিমুল গনি বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে।’
অন্তর্বর্তী সরকার আসার পর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের জামিন পাওয়া নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘অনেকে মনে করেছে ওই সময় বের হলে আমার অসুবিধা হবে। কিন্তু এখন যারা সাজা খেটে বের হয়েছে, তারা ২৫ বছর ২০ বছর জেলে থেকেছে। হতে পারে সন্ত্রাসী, এখনও হতে পারে হয়তো। যদি সে রকম কোনো অ্যাকশন হয়, তাহলে ধরব।’ 

সারাদেশে অপারেশন ডেভিল হান্ট
অপারেশন ডেভিল হান্ট পরিচালনা করে গাজীপুরে ৮১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক জানান, জেলার পাঁচটি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মহানগর ও জেলা পুলিশের অভিযানে মোট গ্রেপ্তার ৮১ জন।
এদিকে রোববার রাত ১২টার দিকে শ্রীপুর উপজেলা থেকে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের সাবেক এমপি চয়ন ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। উপজেলার টেপিরবাড়ি গ্রামের মাটির মসজিদ এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মণ্ডল।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী ওবায়দুল কাদের হেলালকে শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া হবিগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েলের ব্যক্তিগত সহকারী জামাল হোসেনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শনিবার রাতে হবিগঞ্জ শহরের কালিবাড়ী এলাকা থেকে জামালকে ধরে পুলিশে দেয় ছাত্র-জনতা। এদিন রাতে হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান আল রিয়াদ ও ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুস ছালাম মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়।

রোববার ভোরে শেরপুর জেলা ওলামা লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম ও ছাত্রলীগের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় শনিবার রাতে নুরুল করিম নামে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পাবনার ঈশ্বরদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার ঘটনায় রোববার ভোরে অভিযান চালিয়ে দুই যুবলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এক শিক্ষার্থীর করা নাশকতা মামলায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের অফিসে নাশকতার মামলায় পৌর ছাত্রলীগের সদস্য রাহুল কুমার আকাশকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

পটুয়াখালীর কলাপাড়ার লালুয়া ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন গাজীকে শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কলাপাড়া থানার ওসি জুয়েল ইসলাম জানান, শাহাবুদ্দিনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা রয়েছে। রোববার রাঙামাটিতে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আলীসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে নোয়াখালীর হাতিয়ায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ইউপি চেয়ারম্যানসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার রাতে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে হাতিয়ার বিভিন্ন স্থানে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়। অভিযানে ৫ নম্বর চর ঈশ্বর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ, আব্দুল মাজেদ পলাশ, আব্দুল জাহের পিন্টু, সিরাজুল ইসলাম রাফসান ও আবুল কালাম বিটুকে আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে হাতিয়ায় ডাকাতি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। 

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি)

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ছ সরক র উপজ ল ইসল ম আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

সংস্কারের একাল-সেকাল

ওয়ান-ইলেভেনকালে জরুরি অবস্থার গর্ভে জন্ম নেওয়া সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়ও দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে ‘সংস্কারের জিগির’ তোলা হয়েছিল। সে সংস্কারের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলেন দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক নেত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা, যা ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ হিসেবে চিহ্নিত।

দল দুটির যেসব নেতা ওই তৎপরতার সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন, পরবর্তী সময়ে তারা ‘সংস্কারপন্থি’ হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত হন। এক পর্যায়ে ‘সংস্কারপন্থি’ শব্দটিই রাজনৈতিক গালিতে পরিণত হয়।  

সময়ের বিবর্তনে অনেক কিছুরই পরিবর্তন ঘটে। ২০০৭ সালের নিন্দিত ‘সংস্কার’ ২০২৪ সালে এসে নন্দিত ‘সংস্কার’ হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, লন্ডভন্ড নির্বাচন ব্যবস্থার প্রেক্ষাপটে আর যাতে কোনো দল সরকারে গিয়ে আওয়ামী লীগের মতো ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠতে না পারে, সে জন্য রাষ্ট্রব্যবস্থার ‘প্রয়োজনীয়’ সংস্কার শেষে নির্বাচন দেওয়া হবে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত দলগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানায় এবং এ জন্য পর্যাপ্ত সময় ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে আসছে। 

ধারণা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানকে গণমুখী করা এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করতে বিধিবিধান পরিবর্তনের মধ্যেই সংস্কার কার্যক্রম সীমিত রাখবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে অস্ত্রোপচার করে রাষ্ট্রের আকার-আকৃতি, চেহারা-সুরত পাল্টে দেওয়ার এক মহাযজ্ঞের সূচনা করেছে। গঠন করেছে ছোট-বড় ১১টি সংস্কার কমিশন: সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন, পুলিশ, জনপ্রশাসন, গণমাধ্যম, স্বাস্থ্য খাত, শ্রম, নারীবিষয়ক, স্থানীয় সরকার এবং গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। আবার এসব বিষয়ে যাতে ‘জাতীয় ঐকমত্য’ প্রতিষ্ঠিত হয় সে জন্য গঠন করা হয় ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’।

সন্দেহ নেই, জাতীয় স্বার্থে দেশের সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের মধ্যে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। সাধারণত প্রয়োজনের নিরিখে সে ঐক্য স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার প্রয়োজনে। এবারও দেশকে আক্ষরিক অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হলে এমনিতেই জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। সে জন্য আলাদা কমিশন গঠন করার প্রয়োজন কেন হলো, বোধগম্য নয়।

গঠিত ১১টি কমিশনের বেশ কয়েকটি তাদের সুপারিশ জমা দিয়েছে সরকারের কাছে। সেসব প্রস্তাব নিয়ে এখন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। প্রস্তাবগুলোর কিছু বিষয়ে সবাই একমত হলেও অধিকাংশ বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে। বিশেষত একই ব্যক্তি দু’বারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না বা একই ব্যক্তি দলীয় প্রধান, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা না হওয়ার যে প্রস্তাব সংস্কার কমিশন করেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, এসব সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর হাত-পায়ে বেড়ি পরিয়ে দেওয়ার চেষ্টার শামিল। কেননা, একটি দল সরকারে গেলে সরকারপ্রধান, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান কে হবেন বা থাকবেন, সেটা সংশ্লিষ্ট দলের গঠনতান্ত্রিক বিষয়। রাষ্ট্র সেখানে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন প্রণীত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ দ্বারা রাজনৈতিক দলগুলো এখন নিয়ন্ত্রিত। নতুন করে রাজনৈতিক বিধিবিধান গণতন্ত্র বিকাশে প্রতিবন্ধক হয়ে উঠতে পারে। 

এদিকে গত ১৯ এপ্রিল নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে রিপোর্ট প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পেশ করেছে, তা নিয়ে আপত্তি তুলেছে কয়েকটি সংগঠন। ১৫টি মূল বিষয়সহ ৪৩৩টি প্রস্তাবনার একটিতে জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর জন্য মোট আসন ৬০০ করে ৩০০ আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। নারীদের জন্য সংসদে আসন সংরক্ষিত রাখার সুপারিশকে ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মূল চেতনার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক মনে করছেন অনেকে। কেননা, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বিলোপের দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনই পরবর্তী সময়ে রূপ নিয়েছিল গণঅভ্যুত্থানে।

এটা বলা অসমীচীন নয়, ৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থান রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে, সর্বস্তরে কোটা পদ্ধতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। সে প্রত্যাখ্যাত কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের সুপারিশ নারী কমিশন কেন করল, বোধগম্য নয়। তা ছাড়া এ ধরনের কোটা নারীদের জন্য অবমাননাকর নয় কি? জাতীয় সংসদে নারীদের কোটায় আবদ্ধ রাখার অর্থ তাদের অনগ্রসর হিসেবে চিহ্নিত করা। অথচ আমাদের দেশের নারীরা এখন রাষ্ট্র ও সমাজের নানা ক্ষেত্রে পুরুষের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম।

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে আমাদের গ্রামের মাথার বাস স্টপেজকে কেন্দ্র করে একটি ছোট্ট বাজার গড়ে উঠেছে। সেখানে আজিমের চায়ের দোকানে প্রায়ই আড্ডা জমে। ঢাকা থেকে গেলে আমিও অংশীজন হই। সেদিনও সে আড্ডায় অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার নিয়ে কথা হচ্ছিল। কবে সংস্কার শেষ হবে, কবে নির্বাচন হবে– তা নিয়ে একেকজন তাদের জ্ঞানগর্ভ অভিমত ব্যক্ত করছিলেন। এরই মধ্যে কলেজপড়ুয়া এক কিশোর ফোড়ন কেটে বলল, এর পর হয়তো সরকার ‘জাতিসংঘ সংস্কার কমিশন’ গঠন করে বলবে, নির্বাচন ওই সংস্কারের পর। ছেলেটির কথায় হাসির ফোয়ারা ছুটল আসরে। কারও কারও কাপ থেকে ছলকে পড়ে গেল কিছুটা চা।

মহিউদ্দিন খান মোহন: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক   

সম্পর্কিত নিবন্ধ