মুদ্রানীতি ঘোষণা, নীতি সুদহার অপরিবর্তিত
Published: 10th, February 2025 GMT
চলতি ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ের জন্য নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ও নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এ সময় ডেপুটি গভর্নরগণ, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি ৭ থেকে ৮ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি আগের মতো রাখা হয়েছে। গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ। আগামী জুন পর্যন্ত বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৮ শতাংশে নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ধার্য করা করেছে। যদিও গত ছয় মাসে লক্ষ্য ছিল ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে (রিজার্ভ মানি) মুদ্রার সরবরাহ বাড়াবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে।
গত জুনে রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ। ডিসেম্বরে এ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ২ শতাংশ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী জুন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ১ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ঠিক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
আহসান এই মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব নেওয়ার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর স্বল্পমেয়াদি ধারে ব্যবহৃত রেপো সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। তিন দফায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট করে বাড়িয়ে তা ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার বেড়ে এখন ১৫ শতাংশ হয়েছে। এরপরও মূল্যস্ফীতি না কমায় আরেক দফা নীতি সুদহার বাড়ানোর আলোচনা থাকলেও তা বাড়ানো হয়নি।
উল্লেখ্য, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে সেসবের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক বছরে দুই বার (জানুয়ারি থেকে জুন এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ের জন্য) মুদ্রানীতি নীতি ঘোষণা করে।
ঢাকা/এনএফ/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ম বর সরক র দশম ক ব সরক
এছাড়াও পড়ুন:
২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, ১ আগস্ট থেকে ভারতের রপ্তানি পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এই সিদ্ধান্তে ভারতের ইলেকট্রনিকস, জেনেরিক ওষুধ, গয়না ও অটো পার্টসসহ একাধিক খাত ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বুধবার ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে ট্রাম্প বলেন, ভারতের শুল্ক বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ এবং দেশটি সবচেয়ে কঠিন ও দুর্বিষহ প্রকৃতির বাণিজ্য–প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রেখেছে। সেই সঙ্গে রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনার কারণে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার যে চেষ্টা ভারত করে আসছিল, এই ঘোষণা তার জন্য বড় ধাক্কা। গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হোয়াইট হাউস সফরের পর থেকেই ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছিল। কিন্তু শেষমেশ ভূরাজনৈতিক কারণে তা এক রকম ভেস্তে গেল। প্রতিযোগীদের মধ্যে ভিয়েতনামের ২০ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার জন্য ১৯ শতাংশ ও জাপানের জন্য ১৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
ব্লুমবার্গ নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি শুল্কহার ২৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যায়, তাহলে ভারতের মোট রপ্তানির প্রায় ১০ শতাংশ ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। ২০২৪ সালে ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২৯ দশমিক ২ বিলিয়ন বা ১২ হাজার ৯২০ কোটি ডলারের।
তবে শুল্কের মূল প্রভাব নির্ভর করবে অন্য প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় ভারতের অবস্থানের সাপেক্ষে। কোন খাতে কত শুল্ক বসানো হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়, তবে নিচের খাতগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে—
রত্ন ও গয়নাশিল্প
ভারতীয় রত্ন ও গয়না রপ্তানিকারক পর্ষদ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক এই খাতের জন্য ‘গভীর উদ্বেগজনক’। সরবরাহ শৃঙ্খল ব্যাহত হবে এবং হাজার হাজার কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর এই খাত থেকে ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি রপ্তানি হয়। কিন্তু নতুন এই শুল্ক পুরো মূল্যশৃঙ্খলে—শ্রমিক থেকে বড় বড় উৎপাদক পর্যন্ত—ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে।
ওষুধশিল্প
যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি জেনেরিক ওষুধ সরবরাহ করে ভারত। এর বার্ষিক মূল্য প্রায় ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার। সান ফার্মা, ড. রেড্ডিজ, সিপলার মতো শীর্ষ ওষুধ কোম্পানিগুলোর আয়ের ৩০ শতাংশের বেশি আসে মার্কিন বাজার থেকে।
তথ্যানুসারে, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত প্রতিটি ১০টি প্রেসক্রিপশনের মধ্যে চারটিতেই ভারতীয় কোম্পানির ওষুধের পরামর্শ ছিল। সে বছর ভারতীয় ওষুধের কল্যাণে মার্কিন স্বাস্থ্য খাতের সাশ্রয় হয়েছিল ২২০ বিলিয়ন বা ২২ হাজার কোটি ডলার। ২০১২-২২ পর্যন্ত এই সাশ্রয়ের পরিমাণ ছিল মোট ১ দশশিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার।
টেক্সটাইল ও পোশাক খাত
যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান যেমন গ্যাপ, ওয়ালমার্ট ও কস্টকোর মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য পোশাক, হোম ফ্যাব্রিক ও জুতা সরবরাহ করে ভারত। এই খাতের দাবি ছিল— ভিয়েতনাম বা অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতের ওপর শুল্ক কম থাকুক।
কিন্তু কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির মতে, এখন এই খাতকে ‘গুরুতর চ্যালেঞ্জ’ মোকাবিলা করতে হবে। ভারতের উৎপাদকেরা শুল্কে কোনো প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাবেন না। ভার্ডমান টেক্সটাইলস ইতিমধ্যে জানিয়েছে, মার্কিন বাজারে অনিশ্চয়তার কারণে কার্যাদেশ কমছে। ওয়েলস্পান, ইন্ডো কাউন্ট, অরবিন্দ ফ্যাশনসের মতো কোম্পানিগুলোর অবস্থাও দুর্বল হবে।
ইলেকট্রনিকস
অ্যাপল কিছু আইফোন ভারতে তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে; এটা মূলত চীনের শুল্ক এড়ানোর কৌশল। কিন্তু এখন ভারতের ওপর যদি ২৫ শতাংশ শুল্ক থাকলে, তবে এই পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্স বিশ্লেষকদের মতে, ভারত থেকে আইফোন আমদানিতে যদি ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়, তাহলে অ্যাপলকে তার পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন আনতে হতে পারে।
পরিশোধন ও জ্বালানি খাত
রিলায়েন্স, ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের মতো সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। বর্তমানে ভারত মোট অপরিশোধিত তেলের ৩৭ শতাংশের বেশি আমদানি করে রাশিয়া থেকে। বাজারদরের চেয়ে কম দামে তারা এই তেল কিনছে। ফলে পরিশোধনাগারগুলো মুনাফা ধরে রাখতে পারছে। কিন্তু রাশিয়ার তেল আর পাওয়া না গেলে বা তা নিষিদ্ধ হলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। তাতে ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলোর মুনাফা কমবে।
ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য আলোচনা চলছে। আগামী অক্টোবরে তাদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তার আগ পর্যন্ত ২৫ শতাংশ শুল্কহার প্রযোজ্য হবে।