সাইকেল ও ভ্যানে করে বিভিন্ন ধরনের ফুল নিয়ে বাজারে এসেছেন কৃষক। কারও কাছে গোলাপ, গ্লাডিওলাস ও রজনীগন্ধা। আবার জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকাসহ বাহারি ফুল এনেছেন অনেকে। দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যাপারীরা সেসব কিনে নিচ্ছেন। ফুল বেচাকেনার এমন হাঁকডাক যশোর-বেনাপোল মহাসড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা ফুলের রাজধানীখ্যাত গদখালীতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হঠাৎ গরম শুরু হওয়ায় ফুল ফুটে গেছে বেশি। এতে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা ফুলের জোগান বেড়ে যাওয়ায় দাম কমেছে। ঊর্ধ্বমুখী গোলাপের দাম। দু’দিন আগেও যে গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে ৫ টাকায়, এবার বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ টাকা বা তারও বেশি। গত বছর এ ফুলের দাম ২৫ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।
একশটি করে ১৩ আঁটি গোলাপ এনেছিলেন পানিসারার হাঁড়িয়া গ্রামের কৃষক আবদুল মান্নান। সাইকেলের পেছনে বেঁধে গদখালী বাজারে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, ‘এ বছর ফুলের তেমন দাম নেই। দুই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করে বাজারে ১ হাজার ৩০০ ফুল এনেছি। প্রতিটি ৭ টাকা ধরে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। বাকি ৩০০ কম দাম বলায় দিইনি। এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে লোকসানে আছি। সামনের অনুষ্ঠানগুলোয় ভালো দাম পেলে লাভবান হতে পারব।’
কৃষকরা বলছেন, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস ও বসন্তবরণ সামনে রেখে বাড়তে শুরু করেছে ফুলের দাম। আজ বুধবার এবং বৃহস্পতিবার পুরোদমে বেচাকেনা চলবে। এ সময় দাম বাড়লে লাভবান হবেন। অন্যবার ভিন্ন ভিন্ন সময় ফুল উঠলেও এবার একসঙ্গে সব বাজারে সরবরাহ হতে শুরু করায় দাম কম।
১৪ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ফুলের দাম বাড়তে শুরু করেছে বলে জানান জালাল হোসেন। তিনি বলেন, শুরুতে ৩ থেকে ৫ টাকায় বিক্রি হওয়া গোলাপ এখন ১০ টাকার বেশি বিক্রি হচ্ছে। জারবেরা ১০ থেকে ১৫ ও চন্দ্রমল্লিকা ২ থেকে ৩ টাকা। আকবর হোসেন বলছিলেন, প্রথম দিকে গোলাপের দাম কম ছিল। ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে বাড়ছে। যে ফুল রয়েছে, তা ১৫-১৬ টাকা দরে বিক্রি হবে বলে আশা তাঁর। এ ফুলের দাম সাইজ, রং ও সৌন্দর্যের ওপর নির্ভর করে। 
গদখালীর টাওরা গ্রামের ফুলচাষি কামাল সরকার বলেন, ‘আমার কাছে যে চায়না গোলাপ রয়েছে, তার দাম প্রতিটি ২৫ টাকা, দেখতেও সুন্দর। বেশ কয়েক দিন রাখা যায় বলেই এর দাম বেশি। ২৫ কাঠা জমিতে রয়েছে চায়না গোলাপ। আশা করছি, ১৪ ফেব্রুয়ারি সামনে রেখে ৩০ টাকার বেশি দাম পাব।’
জানা গেছে, বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে গোলাপ ফুলের চাহিদা বৃদ্ধি পায় কয়েক গুণ। ফুলচাষিরা এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোলাপ ফুল বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করেন। এবার মাঘেও শীত নেই। অনুভূত হচ্ছে গরম। এতে ফুল স্বাভাবিক সময়ের আগেই ফুটে যাচ্ছে। এ কারণে দ্রুত কেটে ফেলতে হচ্ছে। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফুলচাষিরা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ফুলের সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করছেন ক্যাপ। ফুল যাতে আগাম ঝরে না পড়ে, সে জন্য কলি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্যাপ পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আজ বুধবার সকাল থেকে বেশির ভাগ ফুল কাটা হবে। কিছু কাটা হবে বসন্তের দিন সকালে। আগাম কেটে রাখলে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। ফলে চাহিদা যেমন থাকে না, দামও পান কম। কলি যেন না ফোটে এবং পাতা ঝরে না পড়ে, সে জন্য কলিতে ক্যাপ পরিয়ে দেন।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, যশোরে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়। এ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক মানুষ জড়িত। বসন্ত, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ব্যাপক বিক্রি হলে চাষিদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
আড়াই বিঘা জমিতে গোলাপ চাষ করেছেন পানিসারা নীলকণ্ঠ নগরের ফুলচাষি ইব্রাহিম খলিল। তিনি বলেন, ‘ফুল ফুটেছে অনেক। তবে এখন কাটলে দাম বেশি পাবো না। তাই কলিতে ক্যাপ পরিয়ে রাখছি। আগে রাবার দিয়ে বেঁধে রাখতাম। এতে পাতা নষ্ট হয়ে যেত। এ কারণে ক্যাপ ব্যবহার করছি। বিক্রির আগ পর্যন্ত পরানো থাকে। এতে পাপড়ি ঝরে পড়ে না।’
গত বছর তিন দিবস ঘিরে ২৫ কোটি টাকার বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছিল ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতি। এবার আরও বেশি বিক্রির আশা তাদের। সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, চলতি মৌসুমে ফুলের উৎপাদন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সামনের তিনটি বিশেষ দিবস ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। দুর্যোগ বা অন্য কোনো প্রভাব না পড়লে বছরজুড়ে অন্তত শতকোটি টাকার ফুল বিক্রির বিষয়ে আশাবাদী তারা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বসন ত

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন

রাজশাহীতে জুলাই শহীদদের স্মরণে মিনি ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার দিকে নগরের বিনোদপুর এলাকা থেকে এ দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হয়। আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) রাজশাহী মহানগর শাখা এ ম্যারাথনের আয়োজন করে।

ম্যারাথনে অংশ নিতে প্রতিযোগীরা আজ ভোর সাড়ে পাঁচটার পর থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন বিনোদপুর বাজারে জমায়েত হতে থাকেন। সকাল ছয়টার পর শুরু হয় পাঁচ কিলোমিটারের ম্যারাথন প্রতিযোগিতা।

অংশগ্রহণকারীরা বিনোদপুর থেকে শুরু হয়ে নগরের তালাইমারী মোড় হয়ে আবার বিনোদপুর হয়ে চৌদ্দপায় ফায়ার সার্ভিস মোড় হয়ে আবার বিনোদপুরে ফিরে আসেন।পরে সেখানে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রথম পুরস্কার ১০ হাজার টাকা, দ্বিতীয় পুরস্কার ৮ হাজার টাকা, তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী তিন নারীসহ আরও ১০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়।

ম্যারাথন উপলক্ষে আগে থেকেই মেডিকেল টিমসহ একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। এ ছাড়া সবার জন্য টি-শার্ট, গ্লুকোজ পানিসহ বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হয়। ম্যারাথনে অংশ নেওয়াদের বেশির ভাগই ছিল তরুণ। তাঁদের মধ্যে বেশি বয়সী নারীরাও অংশ নেন।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া ৫৮ বছর বয়সী পিয়ারুল ইসলাম বলেন, এ উদ্যোগ খুবই ভালো হয়েছে। অসুস্থমুক্ত জীবন গড়তে হলে দৌড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শারীরিক বিভিন্ন অ্যাকটিভিটিসের মধ্যে থাকলে সুস্থ জীবন গড়া যায়। এ বয়সে তাঁর কোনো ওষুধ লাগে না। তাঁরও অনেক সিনিয়র আছেন, কারও বয়স ৭৫, তাঁদেরও ওষুধ লাগে না। তাই এ ধরনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে হবে। সবাইকে উদ্ধুব্ধ করতে হবে। যাতে নিজেদের শরীরকে সব সময় উপযুক্ত রাখে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, অনেক দিন পর তিনি দৌড়াবেন। সাধারণত দৌড়ানো হয় না। আজকের পর থেকে তিনি প্রতিদিন সকালে উঠে দৌড়াবেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নাঈম হাসান বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থান শুধু সরকারের পতন নয়। এর মাধ্যমে এ দেশের মানুষ একটি নতুন নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। সেই নতুন নিশ্বাস নিয়ে ম্যারাথনে তিনি অংশ নিয়েছেন।

ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় ১৩ জনকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। আজ শুক্রবার সকালে রাজশাহী নগরের বিনোদপুর এলাকায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ