নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় মহাসড়কের দুই পাশে সওজের জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ফলের দোকানসহ পাঁচ শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। শুধু দায়সারা উচ্ছেদের নয়, এর স্থায়ী সমাধান চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

গতকাল বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন এ উচ্ছেদ অভিযান চালায়। সোনারগাঁ উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মঞ্জুর মোর্শেদ এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন। 

জানা যায, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় রাস্তার দুই পাশে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের জায়গা দখল করে তিনটি কাঁচাবাজারসহ দুই হাজারের বেশি অবৈধ দোকানপাট গড়ে তোলেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা। অভিযোগ রয়েছে, প্রভাবশালীরা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে মাসে কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগসাজশে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী মাসোহারা পেয়ে থাকেন।

ব্যবসায়ীরা জানান, উপজেলা প্রশাসন একদিকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে যান অপরদিকে, প্রভাবশালীরা আগের চেয়ে বেশি দামে দোকান দিতে উঠেপড়ে নামেন। কোনো জায়গায় আগে ব্যবসা করা ব্যবসায়ী তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারলে অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নিয়ে জায়গা দিয়ে দেন। জায়গার জন্য অগ্রিম প্রায় ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা ও  দৈনিক ১০০  থেকে ১২শ টাকা ভাড়া বাবদ আদায় করা হয়। 

ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দাবি, কিছুদিন পরপর লোক দেখানো উচ্ছেদ অভিযান না করে, মহাসড়কে যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে ও ব্যবসায়ীদের জন্য স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ওসি কাজী ওয়াহেদ মোর্শেদ বলেন, কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, যাতে এই জায়গাগুলোতে কোনোভাবেই অবৈধ দোকানপাট না বসতে পারে। এই উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলেও জানান তিনি।

সোনারগাঁ ইউএনও ফারজানা রহমান বলেন, তিনি এর আগেও এখানে উচ্ছেদ করেছেন। উচ্ছেদের পর নতুন করে দোকানপাট বসাতে টাকা নেওয়ার বিষয়টি তাঁর জানা নেই। কেউ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা নিলে এবং এর প্রমাণ পেলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, যারা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী তাদের জন্য স্থায়ীভাবে কিছু করার চিন্তাভাবনা চলছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ