কিম কি এবার ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন
Published: 13th, February 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বলেছেন যে তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য নতুন উদ্যোগ নিতে চান। ৭ ফেব্রুয়ারি ওয়াশিংটনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিগেরুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলন হয়েছিল। সেখানে ট্রাম্প মনে করিয়ে দেন, ২০১৭ সালে কোরীয় উপদ্বীপে তাঁর উদ্যোগে যুদ্ধ ঠেকানো সম্ভব হয়েছিল।
তিনি আরও জানান যে সঠিক পরিস্থিতি তৈরি হলে তিনি কিমের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। ২০১৮ সালে তিনি প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করেছিলেন।
এই ধারণা আরও জোরালো হয়েছে, বিশেষ করে যখন প্রতিরক্ষাসচিব পিট হেগসেথ ও ট্রাম্প উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ব্যাপারটি চমকপ্রদ।
দীর্ঘদিন ধরে ওয়াশিংটন আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ক্ষমতাকে স্বীকার করেনি। এখন জল্পনা হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র নতুন কৌশল নিয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিষয়ে আলোচনা আবার শুরু করতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসন উত্তর কোরিয়া নিয়ে নীতিতে কোনো বড় পরিবর্তন আনেনি।
যদি ট্রাম্প প্রশাসন উত্তর কোরিয়া নিয়ে আগের নীতিই বহাল রাখে, তবে কিম কোনো আলোচনার প্রস্তাব সহজে গ্রহণ করবেন না। তিনি এখনো দক্ষিণ কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক মহড়া এবং এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক উপস্থিতিকে তাঁর দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখেন।
এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্প আবারও সাময়িকভাবে যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া স্থগিত করার কথা বিবেচনা করতে পারেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার রক্ষণশীলেরা এই সামরিক মহড়া নিয়ে কখনোই আপস করার পক্ষে নন। তবে ২০১৮ ও ২০১৯ সালে এই মহড়া স্থগিত হয়েছিল। তখন কিম একাধিক শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে রাজি হয়েছিলেন।
বর্তমানে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতা চালু হয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। কিম রাশিয়াকে গোলাবারুদ সরবরাহ করেছেন। তাঁর সেনাও সেখানে মোতায়েন করেছেন। বিনিময়ে তিনি মস্কোর কাছ থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা ও সমর্থন পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে তিনি এখন ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য কোনো তাড়না অনুভব করছেন না।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্যের একটি হিসেবে রাশিয়া এখন কিমের জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করছে। রাশিয়া নতুন নিষেধাজ্ঞা জারিতে বাধা দিচ্ছে। আগের নিষেধাজ্ঞাগুলোর বাস্তবায়নও ঠেকাচ্ছে। এই বাস্তবতায় উত্তর কোরিয়ার পরমাণু আলোচনা আবার শুরু করতে হলে প্রথম শর্ত হতে পারে দীর্ঘদিনের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটানো। তাহলে রাশিয়া-উত্তর কোরিয়ার সামরিক জোট কিছুটা দুর্বল হবে।
এদিকে চীনের ওপর চাপ প্রয়োগ করে উত্তর কোরিয়াকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা আগেও করা হয়েছে। তবে দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রয়োজন হবে নতুন কৌশল। এমন কৌশল যেখানে শান্তি ও সংলাপই হবে মূল লক্ষ্য। এর মানে ট্রাম্পকে ‘বড় চুক্তি’ করার আশা ছেড়ে দিতে হবে। কারণ, মার্কিন বিশ্লেষকদের মতে, উত্তর কোরিয়ার নেতা কখনোই তাঁর পারমাণবিক অস্ত্র পুরোপুরি ত্যাগ করবেন না। যদিও কিম তাঁর পারমাণবিক অস্ত্রকে আলোচনার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চান না, তবে তিনি হয়তো আবার ইয়ংবিয়ন পারমাণবিক স্থাপনা নিষ্ক্রিয় করা বা আংশিক ধ্বংস করার বিনিময়ে কিছু বড় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারেন।
যদি আমেরিকা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে কোরীয় উপদ্বীপের নিরাপত্তাসংকট সমাধান করতে চায় আর তা যদি মার্কিন দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের সমর্থন পায়, তাহলে কিম আবারও ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করতে আগ্রহী হতে পারেন। এমন জটিল পরিস্থিতির মধ্যেই দক্ষিণ কোরিয়া নেতৃত্ব–সংকটের মুখে পড়েছে।
কিছুদিন আগে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল সামরিক শাসনের অবৈধ ঘোষণা দিয়ে অভিশংসিত হয়েছেন। ফলে ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদের মতো এবারও দক্ষিণ কোরিয়ার এক ‘অস্থায়ী নেতৃত্বের’ সঙ্গে কাজ করছেন। এখন তাঁদের কূটনৈতিক প্রভাব খুবই সীমিত।
● মিচ শিন ডিপ্লোম্যাটের কোরীয় উপদ্বীপের প্রধান বার্তা প্রেরক
ডিপ্লোম্যাটের ইংরেজি থেকে অনুবাদ জাভেদ হুসেন
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর স থ ত হয় ছ ল র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
মানুষ চিন্তা করতে পারেনি, তারা মনের কথা নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে পারবে: জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, ‘আমাদের সন্তানেরা জীবন বাজি রেখে রাস্তায় নেমেছিল, আমরাও তাদের সঙ্গে ছিলাম। তারা ফ্যাসিবাদকে বিদায় করেছে। এক বছর আগেও মানুষ চিন্তা করতে পারেনি যে তারা মনের কথা নির্বিঘ্নে প্রকাশ করতে পারবে। কিন্তু আজ সারা দেশের জনগণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনই সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দেন এবং ইচ্ছেমতো কেড়েও নেন। তা আমরা জুলাই বিপ্লবে সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছি।’
আজ সোমবার সন্ধ্যায় খুলনার খানজাহান আলী থানা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত ‘সহযোগী সদস্য সংগ্রহ অভিযান-২০২৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথাগুলো বলেন।
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচন নিয়ে মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘২০১৪ সালে তারা ষড়যন্ত্র করে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন করেছিল। কেউ নির্বাচনে যায়নি। ২০১৮ সালের নির্বাচন ছিল ইতিহাসের আরেক কালো অধ্যায়। যেখানে রাতেই ভোট হয়ে গিয়েছিল। আর এসব নির্বাচনে হাসিনাকে সঙ্গ দিয়েছে জাতীয় পার্টি। আমরা একটা কালো যুগ পার করেছি। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার মানুষের সব অধিকার হরণ করেছিল। মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। মানুষকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে দেয়নি। তারা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে দেয়নি।’ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘যারা হাত-পা হারিয়েছে, যারা নির্যাতিত হয়েছে, তারা কখনোই এসব খুনিকে ক্ষমা করবে না। খুনিদের বিচার করতে হবে এবং সব স্তরে সংস্কার করে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে, যেখানে কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব থাকবে না। নির্বাচন জনগণের অধিকার। জনগণই তাঁদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। যাঁরা নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির ব্যবহার করতে চাইবেন, জনগণ তাঁদের প্রতিহত করবেন।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতার দম্ভে মানুষের ওপর লাগামহীন জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবিলা না করে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, জেল-জুলম, গুপ্তহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। তারা মনে করেছিল যে তাদের এমন অপশাসন ও দুঃশাসন কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী হবে। কিন্তু আল্লাহ জালিমদের ছাড় দিলেও ছেড়ে দেন না।’
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের প্রসঙ্গে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই, যেখানে ন্যায়বিচার থাকবে, বেকারত্ব ও চাঁদাবাজি থাকবে না। যেখানে মা-বোনেরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে না। আমরা সাম্যের ও মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
খানজাহান আলী থানা জামায়াতের আমির সৈয়দ হাসান মাহমুদের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি গাজী মোর্শেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও বায়তুল মাল সেক্রেটারি হাফেজ আমিনুল ইসলাম। গণসংযোগের সময় স্থানীয় মার্কেটের ব্যবসায়ী, পথচারী, স্থানীয় বাসিন্দা, গাড়িচালকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মাঝে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দাওয়াত দেওয়া হয়।