বুয়েটের চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
Published: 13th, February 2025 GMT
২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তির জন্য চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বুয়েট ক্যাম্পাসে লিখিত পরীক্ষায় উপস্থিতি ছিল ৯৮.৮৭ শতাংশ।
ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু বোরহান মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.
পরিদর্শনকালে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ ও মনোযোগ বিনষ্টের কথা বিবেচনা করে ভর্তি পরীক্ষার কোনো কক্ষে প্রবেশ করেননি।
দুই শিফটে প্রকৌশল বিভাগসমূহ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের জন্য মডিউল-‘এ’ এবং প্রকৌশল বিভাগসমূহ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, স্থাপত্য বিভাগের জন্য মডিউল-‘বি’ ভর্তি পরীক্ষা হয়।
প্রথম শিফটে মডিউল-‘এ’ পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হয়। এ শিফটে ‘ক’ ও ‘খ’ গ্রুপের জন্য গণিত, পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন বিষয়ে পরীক্ষা হয়। দ্বিতীয় শিফটে মডিউল-‘বি’ পরীক্ষা বেলা ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত হয়। এই শিফটে ‘খ’ গ্রুপের জন্য উন্মুক্ত পাঠ্যসূচিতে মুক্তহস্ত অঙ্কন (Freehand Drawing) এবং দৃষ্টিগত ও স্থানিক ধীশক্তি (Visual-Spatial Intelligence) বিষয়ে পরীক্ষা হয়।
বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা হয় দুই ধাপে— প্রাক-নির্বাচনি ও লিখিত পরীক্ষা। এর আগে নির্বাচিত আবেদনকারীদের মধ্যে থেকে ২৪ হাজার ২১১ জন গত ২৩ জানুয়ারি তিন শিফটে প্রাক-নির্বাচনি পরীক্ষায় অংশ নেন।
প্রাক-নির্বাচনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মেধাক্রম অনুসারে প্রতি শিফটের প্রথম থেকে ২৫০০তম পর্যন্ত তিন শিফটে (মডিউল-এ ও মডিউল-বি) মোট ৭ হাজার ৫৫২ জন শিক্ষার্থী মূল ভর্তি পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হন। তাদের মধ্যে প্রথম শিফটে ২ হাজার ৫২০ জন, দ্বিতীয় শিফটে ২ হাজার ৫১২ জন ও তৃতীয় শিফটে ২ হাজার ৫২০ জন নির্বাচিত হন। নির্বাচিতদের মধ্যে ৫ হাজার ৮৯১ জন ছাত্র এবং ১ হাজার ৬৬১ জন ছাত্রী।
কেমিক্যাল অ্যান্ড ম্যাটেরিয়ালস কৌশল, পুরকৌশল, যন্ত্রকৌশল, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল এবং স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের অধীনে ১৩টি বিভাগে স্নাতক শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হবে। এবারের ভর্তি পরীক্ষায় পার্বত্য চট্টগ্রাম ও অন্যান্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিভুক্ত প্রার্থীদের জন্য প্রকৌশল বিভাগসমূহ এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের জন্য মোট ৩টি (কোনো বিভাগে একটি আসনের বেশি নয়) ও স্থাপত্য বিভাগের জন্য একটি সংরক্ষিত আসনসহ সর্বমোট ১ হাজার ৩০৯টি আসনের জন্য ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়।
চূড়ান্ত ভর্তির জন্য নির্বাচিত ও অপেক্ষমান প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশের সর্বশেষ তারিখ ৮ মার্চ, ২০২৫।
ঢাকা/সৌরভ/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ভ গ র জন য পর ক ষ য় উপ চ র য
এছাড়াও পড়ুন:
মুহাম্মদ ইলিয়াসের তাবলিগি দর্শন
মানুষের হৃদয়ে ঈমানের আগুন জ্বালানোর প্রয়াসে শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভী (১৮৮৫-১৯৪৪) গড়ে তুলেছিলেন জামায়াতে তাবলিগ, যা বিশ্বব্যাপী দাওয়াতের এক অপূর্ব নজির। তাঁর বাণী ও উপদেশের সংকলন ‘মালফুজাত’ নামে আরবি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে, যা তাঁর দাওয়াতি দর্শন ও তরবিয়তি পদ্ধতির এক জীবন্ত দলিল। দামেস্কের দারুল কলম থেকে প্রকাশিত এই গ্রন্থ, শায়খ আদিল হাররাজি আল-ইয়ামানি আন-নাদভির তত্ত্বাবধানে সম্পাদিত, তাবলিগ জামায়াতে মূল দর্শনের প্রাথমিক উৎস হিসেবে বিবেচিত। এটি শুধু মুহাম্মদ ইলিয়াসের বাণীর সংকলন নয় বরং একটি ঐতিহাসিক ও দাওয়াতি দলিল, যা আধুনিক ইসলামি আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্মূল্যায়নের দাবি রাখে।
‘মালফুজাত’-এর শিক্ষা
শায়খ মুহাম্মদ ইলিয়াসের মজলিস মালফুজাত সংরক্ষণ করেছেন তাঁর শিষ্য মুহাম্মদ মানজুর। তাবলিগ জামায়াতে ছয়টি মূলনীতি—কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকর, ইকরামুল মুসলিমিন, ইখলাস ও নিয়ত এবং আল্লাহর পথে বের হওয়ার ভিত্তিতে গ্রন্থটি রচিত। তিনি তাওহিদকে (আল্লাহর একত্ব) নাজাতের মূল ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘তাওহিদের দুর্বলতা মুসলিমদের অধঃপতনের কারণ’। তিনি ফরজ ইবাদতের প্রাধান্য, জিকিরের প্রাচুর্য এবং তাকওয়ার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ফরজগুলোর মর্যাদা নফলের চেয়ে অনেক উঁচুতে। নফলের উদ্দেশ্য ফরজগুলোর ঘাটতি পূরণ করা’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
তাঁর দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল সরল কিন্তু গভীর। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে আত্মশুদ্ধির মাধ্যম হিসেবে দেখতেন, যা তাবলিগের একটি বৈশিষ্ট্য। তিনি রিয়া (লোকদেখানো) ও বিতর্ক এড়ানোর পরামর্শ দেন, বলেন, ‘ইখলাস (খাঁটি আল্লাহর জন্য) ছাড়া কোনো কাজ কবুল হয় না।’ তাঁর দৃষ্টিতে, দাওয়াতের লক্ষ্য হলো আল্লাহর আদেশকে মানুষের স্বভাবে পরিণত করা, যাতে নিষিদ্ধ কাজ তার কাছে অপছন্দনীয় হয়। তিনি জিকিরকে এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রধান উপায় হিসেবে বিবেচনা করতেন।
শায়খ ইলিয়াসের দাওয়াতি পদ্ধতি ছিল তাওয়াজ্জুহ বা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের পরিবর্তে তাজকিয়া (আত্মশুদ্ধি) ও ইখলাসের ওপর কেন্দ্রীভূত। তিনি জটিল তাত্ত্বিক আলোচনার পরিবর্তে সরল নসিহতের ওপর জোর দিতেন। তাঁর মতে, দাওয়াত হবে এমন, যেন ‘আল্লাহর আদেশ মানুষের স্বভাব হয়ে যায়’। তিনি আল্লাহর পথে বের হওয়াকে তুলনা করতেন সাহাবিদের ত্যাগের সঙ্গে, যা দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করে আধ্যাত্মিক উন্নতি আনে। তিনি বলেন, ‘দাওয়াতে আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার ফরজ, কিন্তু কতজন এই ফরজ পালন করে?’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
আরও পড়ুনসুরা হুমাজাতে চারটি পাপের শাস্তির বর্ণনা০৬ মে ২০২৫ঐতিহাসিক পটভূমি
মুহাম্মদ ইলিয়াস ভারতের কান্ধলায় একটি আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। দেওবন্দি সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে তাঁর শৈশব কাটে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন, সাধারণ মুসলিমদের ধর্মীয় অজ্ঞতা এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ তাঁর দাওয়াতি চিন্তার পটভূমি। তিনি বিশ্বাস করতেন, শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মুসলিমদের সংস্কার করতে পারবে না। তাই তিনি একটি জনগণভিত্তিক, বিকেন্দ্রীকৃত আন্দোলন শুরু করেন, যেখানে সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীরা দাওয়াতে অংশ নেয়। তিনি নবীর (সা.) মক্কার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হন, যেখানে তিনি ঘুরে ঘুরে মানুষকে দাওয়াত দিতেন। তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) মক্কায় তাওয়াফ করে মানুষকে হকের দাওয়াত দিতেন’ (মালফুজাত, দারুল কলম, ২০২৫)।
গ্রন্থের গঠন ও সম্পাদনা
মালফুজাত তাঁর মজলিসের সংকলন হলেও এটি একটি সুশৃঙ্খল দাওয়াতি দলিল। সম্পাদনা করেছেন আবুল হাসান আলী নাদভি (রহ.)-এর শিষ্য শেখ আদিল হাররাজি। মুফতি মুহাম্মদ তকী উসমানী, ড. খালিদ সাইফুল্লাহ রাহমানি ও নূরুল হাসান রাশিদ কান্ধলভী প্রমুখের মতো পাকিস্তান ও ভারতের শীর্ষস্থানীয় ইসলামবেত্তাদের ভূমিকা গ্রন্থটিকে মহামূল্য করে তুলেছে। তাদের ভূমিকাগুলো গ্রন্থের দাওয়াতি ও ঐতিহাসিক পটভূমি বুঝতে সাহায্য করবে। আলী নাদভির সঙ্গে মুহাম্মাদ ইলিয়াসের আধ্যাত্মিক সম্পর্ক এবং তাবলিগের বিশ্বব্যাপী প্রভাবও এতে তুলে ধরা হয়েছে।
আজ যখন মুসলিম বিশ্ব নানা সংকটের মুখোমুখি, এই গ্রন্থ আমাদের তাওহিদ, ইখলাস ও তাজকিয়ার প্রতি ফিরে যেতে আহ্বান জানায়। এটি প্রতিটি দাঈ ও মুসলিমের জন্য একটি পাঠ্য, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ‘দাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনকে জীবন্ত করে তুলতে হবে।’
সূত্র: আল-জাজিরা ডটনেট
আরও পড়ুন সুরা ইউসুফের সারকথা১৫ জুলাই ২০২৪