যশোরের গদখালী পাইকারি মোকামে এবার মাত্র ১৮ কোটি টাকার ফুল বিক্রি
Published: 14th, February 2025 GMT
বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের এক দিন আগেও পাইকারি পর্যায়ে ফুলের দর পড়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার যশোরের গদখালী পাইকারি মোকামে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরাসহ সব ধরনের ফুলেরই এবার দরপতন ঘটেছে। এতে ফুলচাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পয়লা ফাল্গুন মানে বসন্ত উৎসব ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস—এই তিন দিবস ঘিরেই চাষিরা ফুল চাষ ও বাগানের পরিচর্যা করেন। এ বছর দিবস তিনটিকে কেন্দ্র করে গদখালী বাজারে শতকোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ফুলচাষিরা। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ হবে না বলে মনে করেন তাঁরা।
যশোর ফুল উৎপাদক ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, পয়লা ফাল্গুন ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে ঘিরে এ বছর যশোরে শতকোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য ছিল। ৪ থেকে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুটি দিবসে প্রায় ১৮ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। সামনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাজার কেমন হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর ফুলের চাহিদা কম, দামও কম।
গতকাল ঝিকরগাছা উপজেলার পানিসারা গ্রামের ফুলচাষি আজিজুর সরদার আড়াই হাজার গোলাপ, ৭০০ জারবেরা ও ২০০টি লিলিয়াম ফুল নিয়ে গদখালী মোকামে নিয়ে আসেন। তিনি প্রতিটি গোলাপ ৩ টাকা, জারবেরা ৪ টাকা ও লিলিয়াম ফুল ২০ টাকা দরে বিক্রি করেন তিনি। আজিজুর সরদার বলেন, ‘এ বছর ১২ ফেব্রুয়ারি (গত বুধবার) সবচেয়ে বেশি দামে ফুল বেচাকেনা হয়েছে। তা–ও গত বছরের তুলনায় অর্ধেক দাম পেয়েছি। তবে আজ (গতকাল) একদমই দাম ছিল না। এই সময়ে ফুলের ভালো দাম পাওয়ার আশায় সারা বছর অপেক্ষায় থাকি। কিন্তু এ বছর মাঠে মারা গেছি। উৎপাদন খরচই উঠছে না।’
ব্যবসায়ীরা জানান, বিশ্ব ইজতেমাসহ ওরস ও শবে বরাত—এসব ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরপর পড়ে গেছে। এগুলোর প্রভাব পড়েছে ফুলের বাজারে। তাতে ফুলের চাহিদা কম। ফলে দরপতন ঘটেছে।
তাওরা গ্রামের গোলাপচাষি মিলন হোসেন বলেন, ‘এ বছর গোলাপের বাজার ভালো না। প্রতিটি গোলাপের দাম সাত–আট টাকার বেশি কেউ বলছেন না। ব্যাপারীরা যে দাম বলেন, তাতে উৎপাদন খরচই উঠছে না। গত বছরের তুলনায় এ বছর দাম অর্ধেকের কম।’
কাকডাকা ভোরে শীত ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও ভ্যানে করে ফুলচাষিরা গোলাপ, গাঁদা, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, মল্লিকা ও জিপসি ফুল এবং কামিনীপাতা নিয়ে গদখালী পাইকারি মোকামে আসেন। দুই হাজারের বেশি চাষি এই মোকামে ফুলের পসরা সাজিয়ে বসেন। সেই ফুল সারা দেশের পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নেন।
পটুয়াপাড়া গ্রামের গোলাপচাষি মনিরুল ইসলাম বাবু জানান, ৩৬ শতক জমিতে তিনি গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন। ৩৩ শতকের এক বিঘা গোলাপ চাষ করতে দেড় লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
ফুলচাষি জালাল উদ্দীন বলেন, ‘এ বছর ৩৮ শতক জমিতে ফুল চাষে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র ২৫ হাজার টাকার গোলাপ ফুল বিক্রি হয়েছে।’
ব্যবসায়ীরা জানান, মানভেদে প্রতিটি গোলাপ সাড়ে ৭ থেকে ৮, গ্লাডিওলাস ২ থেকে ১০, রজনীগন্ধা ১ থেকে ৪, জারবেরা ৫ থেকে ৮ ও প্রতি হাজার গাঁদা ফুল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং জিপসি ও কামিনীপাতা প্রতি মুঠা ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গদখালী ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, ‘এ বছর হঠাৎ গরম পড়ায় ফুল বেশি ফুটেছে। এতে গোলাপ ও গ্লাডিওলাসের দাম কমেছে। এ ছাড়া এ বছর বিশ্ব ভালোবাসা দিবসেই মুসলিম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শবে বরাত পড়ায় ফুলের খুচরা ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিচ্ছেন না।’
জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর জেলার প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা আবু তালহা বলেন, যশোর জেলায় ৬৩৭ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়েছে। এখানে প্রায় তিন হাজার চাষি ফুল চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় র এ বছর গদখ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শেয়ারবাজারে লেনদেন-খরা কাটছে না, হতাশ বিনিয়োগকারীরা
ঈদের ১০ দিনের ছুটির পর লেনদেন শুরুর প্রথম দিনেই বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করতে পারেনি দেশের শেয়ারবাজার। দীর্ঘ ছুটির পর আজ রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় দরপতনে। যদিও দিন শেষে সূচক ও লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। তবে তা বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী হওয়ার মতো নয়। উল্টো ভালো মৌল ভিত্তির কিছু শেয়ারের দরপতন বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।
ঢাকার বাজারে রোববার লেনদেন হওয়া ৩৯২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৯টিরই দরপতন হয়েছে, দাম বেড়েছে ১৪৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৬৮টির দাম। লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর দামের উত্থান–পতনের প্রভাবে দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে। আর লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৯ কোটি টাকা বেশি।
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারের লেনদেন বর্তমানে যে পর্যায়ে নেমেছে, তাতে বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কারও জন্যই তা আশান্বিত হওয়ার মতো না। এই লেনদেনে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর পরিচালন খরচ তোলায় দুঃসাধ্য হয়ে গেছে। ফলে অনেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক মাস শেষে বাজার থেকে পরিচালন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে। একইভাবে লেনদেন থেকে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো যে কমিশন আয় করে তা দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালন খরচ উঠছে না।
সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বাজেটকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশান্বিত হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘোষিত বাজেটে সরাসরি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো সুখবর ছিল না। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার নিয়ে হতাশা আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে বাজারে কোনো বিনিয়োগকারী তো আসছেনই না, উল্টো বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরাও সুযোগ পেলে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাজার দীর্ঘ মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ রোববার সূচকের পতনে যেসব কোম্পানি বড় ভূমিকা রেখেছে তার মধ্যে ছিল ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো ফার্মা, বিএসআরএম লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক, রেনাটা, ওরিয়ন ইনফিউশন, ইউনাইটেড পাওয়ার ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এসব কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে আজ ডিএসইএক্স সূচকটি ৭ পয়েন্ট কমেছে। তার বিপরীতে সূচকের উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, স্কয়ার ফার্মা, লাভেলো আইসক্রিম, সিটি ব্যাংক, এসিআই, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও বীকন ফার্মা। এসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইএক্স সূচকটি ১৮ পয়েন্টের বেশি বেড়েছে।
লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, একদিকে ভালো মৌল ভিত্তির কিছু কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে সূচক কমেছে, অন্যদিকে কিছু ভালো কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি সেই পতনকে রোধ করেছে। এই কারণে দিন শেষে সূচকটি ইতিবাচক ধারায় ছিল।
ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনের এক–পঞ্চমাংশ বা প্রায় ২০ শতাংশই ছিল খাদ্য খাতের দখলে। এ খাতের লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫২ কোটি টাকা। যার প্রায় অর্ধেকই আবার একটি কোম্পানির, সেটি লাভেলো আইসক্রিম। রোববার ঢাকার বাজারে লেনদেনের শীর্ষে ছিল কোম্পানিটি। দিন শেষে ২৫ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। মূলত লাভেলো আইসক্রিমের লেনদেনের ওপর ভিত্তি করেই এদিন খাদ্য খাত লেনদেনের শীর্ষে জায়গা করে নেয়। খাতভিত্তিক লেনদেনের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল ব্যাংক খাত। এই খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৪ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতকে এদিন লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে রাখার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল ব্র্যাক ব্যাংকের। ঢাকার বাজারে আজ রোববার ব্র্যাকের ব্যাংকের ১৫ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। সেই হিসাবে ব্যাংক খাতের সম্মিলিত লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই ছিল ব্যাংকটির একক লেনদেন।
বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় এক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে এখন নতুন করে কোনো আশা দেখছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন। বাজেটকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেটি পূরণ না হওয়ায় হতাশা আরও বেড়েছে। যার প্রভাব বাজারে পড়ছে।