দরিদ্র পরিবারে জন্ম অপূর্ব সুন্দরী চান্দবী চাকমার। বেড়ে ওঠা পাহাড়ি ছড়া আর নদীর ধারে। চান্দবী এক সময় জড়িয়ে পড়েন বিত্তশালী পরিবারের ছেলে নুয়ারাম চাকমার প্রেমে। ছড়ার পানির মতো স্বচ্ছ সে প্রেম। পানি ছুঁয়েই নুয়ারাম একদিন শপথ করেন। চান্দবীকে বলেন, চাঁদ-সূর্য  ধ্বংস হয়ে গেলেও দুজনের প্রেম টিকে থাকবে অন্ততকাল। কিছুদিন না যেতেই আসে শপথ রক্ষার কঠিন পরীক্ষা। চান্দবীর পরিবার পুরোনো বসতি ছেড়ে চলে যায় অনেক দূরে। বিরহ-যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েন দুজন। বিক্রয়ের জন্য বাঁশ সংগ্রহের ছলে নুয়ারাম একদিন চলে যান চান্দবীর কাছে। দুজনের সাময়িক মিলন ঘটলেও পরে চিরদিনের জন্যই বিচ্ছেদ হয় দুজনের।

যুগ যুগ ধরে চান্দবী চাকমার এই প্রেমের কাহিনি টিকে রয়েছে চাকমা সমাজে। প্রেমে ব্যর্থ চান্দবীর কাহিনি বর্ণনা করে এখনো চোখের পানি ফেলেন চাকমা জনগোষ্ঠীর মানুষ। শত বছরেরও বেশি সময় আগে এই প্রেমকাহিনি নিয়ে একটি বারোমাস্যা কাব্য রচনা করেন চাকমা কবি ধর্মধন চাকমা, ধর্মধন পণ্ডিত নামেই যিনি বেশি পরিচিত। তাঁর রচিত ‘চান্দবী বারোমাস’ লেখা হয়েছে পয়ারের ছন্দে। চান্দবীর প্রেম-বিরহ, প্রতারণা শিকার হওয়াসহ সমাজের নানা অন্যায়-অবিচার ফুটে উঠেছে এই কাব্যের কাহিনিতে।

কাহিনিতে দেখা যায়, রাঙামাটির সলকে (বর্তমানে সুবলং) বসবাস সুন্দরী চান্দবীর। সলক ছড়ার স্বচ্ছ পানিতে গোসল করে আর বড়গাঙের (কর্ণফুলী) পাড়ে ঘুরে বেড়িয়ে তার বেড়ে ওঠা। বিত্তশালী পরিবারের নুয়ারাম তাঁর প্রেমে জড়িয়ে শপথ করে—‘মোর পরাণী চান্দবী, এই সলকছড়া সাক্ষী, চন্দ্র-সূর্য ধসে গেলেও তোমার-আমার ভালোবাসা থাকবে অনন্তকাল ধরে’। কিছুদিন পর সলক ছেড়ে ঠেগা এলাকায় চলে যায় চান্দবীর দরিদ্র পরিবার। সলক থেকে বহু দূরে অগম্য বনাঞ্চল ঠেগা। বিত্তশালী পরিবারের সন্তান নুয়ারাম সেখানে যাওয়া সহজ নয়। তবু প্রেম কী কোনো বাধা মানে! আশ্বিন বা কার্তিক মাসের কোনো একদিন কার্তনে (বিক্রয়ের জন্য বাঁশ সংগ্রহ, চাকমা সমাজে এটি কার্তন হিসেবে পরিচিত) যাওয়ার ছল করে নুয়ারাম পৌঁছে যায় ঠেগায়। ঠেগার গহিন বনে হয় অভিসার।

কার্তন শেষে নুয়ারাম ঠেগা ছেড়ে চলে যায়। তখন চান্দবী অন্তঃসত্ত্বা। নুয়ারামের খবর আর পাওয়া যায় না। চান্দবীকে ধিক্কার দেয় মা-বাবা ও পাড়াপ্রতিবেশী। চান্দবীর মনে হয়—সে প্রতারিত। নিজে নিজে সে বলে, ‘মিলে জীংহানি ভজনেজেবার ঠগানির বিজের থুমসং চেইম (নারীর জীবন ধ্বংসের এই প্রতারণা শেষ দেখে ছাড়ব)’। চান্দবী কার্বারীর (পাড়াপ্রধান) কাছে বিচার দেয়। তবে লাভ হয় না। বিত্তশালী ও প্রভাবশালী চন্দ্রধন চাকমার ছেলে নুয়ারাম চাকমার বিচার করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন হেডম্যান (মৌজাপ্রধান)।

ভাগ্যবিড়ম্বিত প্রেমিকা চান্দবী শেষে বাবা জয়সিং চাকমাকে সঙ্গে নিয়ে রাজার দরবারে বিচারের জন্য যায়। সেখানেও ধিক্কার, তিরস্কার ও ঘৃণাবাক্য ছাড়া কিছুই মেলে না। বিচার না পেয়ে ক্ষোভ-দুঃখ নিয়ে ফেরার পথে মৃত এক মেয়েশিশুর জন্ম দেয় চান্দবী। চান্দবীর চোখে আর জল নেই। শোকে পাথর হয়ে সেই মৃত শিশুকে কবর দেওয়ার সময় সে বলে ‘মরি যেইনে বাঁচি গেলে, লগে আনিনে লগে নেজেলে ফি, বাঁচি থেদে লগে থেলুন নিত্য শাপ, মানেই জাদত মিলে অইনে জনম লনা পাপ’।  অর্থাৎ মরে বেঁচে গেলে, সঙ্গে নিয়ে আসা দুঃখ সঙ্গে নিয়ে গেলে। বেঁচে থাকলে অভিশপ্ত হয়ে থাকতে; কারণ, মেয়ে হয়ে জন্ম নেওয়াই আজন্ম পাপ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র ন চ কম র জন য চ কম র

এছাড়াও পড়ুন:

রুয়া নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুয়া) কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। এর আগে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রুয়া অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ মে পুনর্মিলনী এবং ১০ মে রুয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপিপন্থী সাবেক শিক্ষার্থীরা। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই পক্ষের নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তি চলতে থাকে।

এদিকে গতকাল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রুয়া নির্বাচন কমিশনের প্রধান কমিশনার পদত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদের বাসভবনে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নোটিশ জারি করেন রুয়ার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করছেন।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘সিলেকশন না ইলেকশন, ইলেকশন ইলেকশন’, ‘প্রশাসন জবাব দে, রুয়া কি তোর বাপের রে’, ‘রুয়া নিয়ে টালবাহানা, চলবে চলবে না’, ‘অ্যাডহক না নির্বাচন, নির্বাচন নির্বাচন’, ‘সিন্ডিকেট না রুয়া, রুয়া রুয়া’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।

এ সময় ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা-কর্মীদেরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। পরে জামায়াত ইসলামীর কয়েকজন নেতাও কর্মসূচিতে যোগ দেন। একপর্যায়ে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। বিকেল ছয়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ মে রুয়া নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ সেই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। যারা রুয়া নির্বাচন দিতে পারে না, তারা রাকসু নির্বাচন কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? ১০ মের নির্বাচন সেই একই তারিখে হতে হবে। এই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ