গত বছরের ৬ আগস্ট ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখে বাবা-মা জানতে পারেন, তাঁদের সন্তান হাসান (১৮) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। খোঁজ না পেয়ে রাজধানী ঢাকায় ছুটে যান। সেখানে সব হাসপাতাল খুঁজেও ছেলের সন্তান পাননি তাঁরা। পরে নানাভাবে প্রচার চালিয়ে জানুয়ারি মাসে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে এক তরুণের লাশের খবর পান। প্রাথমিকভাবে সেটিকে হাসানের বলে দাবি করেন তাঁরা। অবশেষে গতকাল বৃহস্পতিবার ডিএনএ প্রতিবেদন পেয়ে নিশ্চিত হন লাশটি নিজেদের ছেলের।

আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে হাসানের মরদেহের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আগামীকাল শনিবার সকাল ১০টায় ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের সাহমাদার গ্রামে দ্বিতীয় জানাজার পর হাসানের দাফন করার কথা আছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসানের বাবা মো.

মনির হোসেন (৪৮) ও ভগ্নিপতি মো. ইসমাঈল (২৯) জানান, আজ (শুক্রবার) থেকে এক মাস আগে তাঁরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে হাসানের লাশ শনাক্ত করেন। তারপর সিআইডি ডিএনএ পরীক্ষা শেষে গতকাল বৃহস্পতিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

মনির হোসেন আরও জানান, দুই ছেলে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীর সংসারে হাসানের উপার্জনের অনেকটা নির্ভর করতে হতো। নদীভাঙনে সব হারিয়ে কাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদ–সংলগ্ন অন্যের বাড়িতে ঘর তুলে বসবাস করছেন। দিনমজুরের কাজ করে কোনোরকমে সংসার চালান। সংসারে অভাবের কারণে হাসান আট বছর আগে রাজধানীর গুলিস্তানে কাপ্তানবাজার এলাকায় একটি ইলেকট্রনিকসের দোকানে কাজ নেন। সেখানে কাজ করে নিজের খরচ চালিয়ে মাসে মাসে কিছু টাকা সংসারের জন্য পাঠাতেন। আর থাকতেন যাত্রাবাড়ীর বালুর মাঠের কাছে ধলপুর এলাকায় ভগ্নিপতি ইসমাইলের বাসায়।

এ পর্যায়ে কান্নারত অবস্থায় মনির জানান, হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে তাঁর সর্বশেষ কথা হয়েছে ৫ আগস্ট দুপুরের দিকে। বিকেলে তাঁর মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর ছেলের সঙ্গে আর কথা হয়নি। ঢাকায় আত্মীয়স্বজনও হাসানের খবর পাননি। ইসমাইলের কাছে জানতে পারেন, যাত্রাবাড়ী এলাকায় গত ৫ আগস্ট দুপুরের পর কয়েক দফায় গোলাগুলি হয়েছে। হাসান তখন গোলাগুলির মধ্যে পড়েন। ওই সময় তাঁর কাছে দুটি মুঠোফোন ছিল। সেগুলো নিয়ে যায় কেউ। পরদিন গত ৬ আগস্ট ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখে হাসানের গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হন।

হাসানের খোঁজ চেয়ে ঢাকা ও ভোলার বিভিন্ন স্থানে তাঁর নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তির পোস্টার সেঁটে দেন। দুই শহরেই মাইকিং, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তাঁর পরিবার সরকারের কাছে দাবি করেন, জীবিত বা মৃত হোক, তাঁর ছেলেকে যেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পোস্টারে হাসানের নাম-ঠিকানা ও যোগাযোগের মুঠোফোন নম্বর দেন। একপর্যায়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে এক তরুণের লাশের খোঁজ পেয়ে আবার ছুটে যান। গত মাসের শুরুর দিকে সেখানে মরদেহটি হাসানের বলে শনাক্ত করেন তাঁর বাবা-মা। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গতকাল মরদেহটি বাবা-মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ছেলেকে হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন হাসানের মা গোলনূর বেগম। আরও ভেঙে পড়েন তাঁর লাশের খোঁজ না পেয়ে। তবে ছেলের লাশ পাওয়াকেই এখন তাঁর জন্য সবচেয়ে বড় সান্ত্বনা বলে মনে করে তিনি বলেন, ‘আল্লার কাছে আবেদন করছিলাম, আমার পুতেরে আমার কোলে ফিরাইয়া দেন। যদি বাইচ্চা থাহে, তাও খুঁইজ্জা দেন। আর যদি মোইররা যায়, তা–ও লাশ খুঁইজ্জা দেন। আল্লায় আমার কতা হোনছেন, আমি আমার জাদুর লাশ খুঁইজ্জা পাইছি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

গভীর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আমল মাসঊদের বাড়িতে ককটেল বিস্ফোরণ করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিনোদপুরের মণ্ডলের মোড় এলাকায় তাঁর বাড়ির দরজার সামনে এ ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ আহত হয়নি।

মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। সেখানে তিনটি ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়েছে। তবে কে বা কারা এটি করেছে, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগও কেউ করেনি। তাঁরা দুর্বৃত্তদের শনাক্তের চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইফতিখারুল আমল মাসঊদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি সাড়া দেননি। তবে ঘটনার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে লিখেছেন, ‘ফ্যাসিবাদী অপশক্তির জুলুম-নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলাম। কোনো রক্তচক্ষুর ভয়ংকর হুমকি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। তবে তারা কখনো বাড়ি পর্যন্ত আসার ঔদ্ধত্য দেখাতে পারেনি। কিন্তু আজ আমার বাড়ির দরজায় গভীর রাতের অন্ধকারে হামলার সাহস দেখিয়েছে কাপুরুষের দল! এরা কারা? এদের শিকড়সহ উৎপাটনের দাবি জানাই।’

এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ভেবেছিলাম বাড়ির গেটে কিংবা গেটের বাইরে। কিন্তু গিয়ে দেখলাম একেবারে বাড়িতে হামলা হয়েছে। গতকালই ওনার অসুস্থ বাবা হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় এসেছেন। জানি না শেষ কবে একজন শিক্ষকের বাড়িতে রাতের আঁধারে এভাবে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। আমরা শঙ্কিত, স্তম্ভিত।’

এদিকে হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এ সমাবেশের আয়োজন চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ