কক্সবাজারের সাগর দ্বীপ কুতুবদিয়ার সব খানে এখন লবণ উৎপাদনের ধুম পড়েছে। কিছু জমিতে চলছে বোরো চাষ। এর মধ্যে মাত্র ১৪ হেক্টর জমিতে ঝুঁকি নিয়ে তরমুজ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন ১৭ জন চাষি।

বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপটির একসময় আয়তন ছিল ৯৯ দশমিক ১৩ বর্গকিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড়, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে এখন দ্বীপের আয়তন ২৭ বর্গকিলোমিটারে ঠেকেছে। পেশা হারিয়ে গত তিন দশকে দ্বীপ ছেড়েছেন অন্তত ৬০ হাজার মানুষ। লবণ চাষের মহা ধুমধামের মধ্যে ১৭ জন চাষি ঝুঁকি নিয়ে তরমুজ চাষ করে ভাগ্যবদলের ঘটনা মানুষের নজর কাড়ছে। প্রেরণা জোগাচ্ছে উদ্যোগী কৃষাণী কুলসুমা বেগমের গল্প।  

উপজেলার আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের পুতিন্যারপাড়ায় কুলসুমার বাড়ি। সারা উপজেলায় লবণ চাষ হলেও সেখানকার ৫০০-৬০০ একর জমিতে ধানের চাষ হয়। কুলসুমার স্বামী মো.

শাহাদাত কবির অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করতেন। কিন্তু লবণাক্ততা আর সেচের সমস্যার কারণে লাভ হচ্ছিল না। কৃষি বিভাগের লোকজনের কাছ থেকে তাঁর স্ত্রী কুলসুমা জেনেছিলেন তরমুজ চাষের কৌশল। স্বামীর সমস্যা দূর করতে পাঁচ বছর আগে জমিতে তিনি তরমুজের বীজ ফেললেন। এর পরের গল্পটা সাফল্যের। তরমুজ বিক্রি করে পরিবারে সচ্ছলতা এনেছেন এই নারী। বছরে দুই লাখ টাকার মতো লাভ হচ্ছে তাঁর। তরমুজ চাষের টাকায় ছাগল কিনেছেন তিনি, অল্প কিছু জমির বায়নাও দিয়ে রেখেছেন।  

সম্প্রতি পুতিন্যা পাড়ায় ধান চাষের জমির মাঝে কুলসুমার ২ কানি শীতকালীন তরমুজের জমি। এলাকায় বোরো চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন কুষকেরা। আর কুলসুমাকে দেখা গেল, নারী শ্রমিকদের নিয়ে খেতের তরমুজ তুলছেন। এই তরমুজ পাইকারের কাছে নিয়ে বিক্রি করেন তাঁর স্বামী মো. শাহাদাত কবির।

তরমুজ খেতে বসে কথা হয় কুলসুমা বেগমের (৪৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বছরের মতো এবারও তিনি ৮০ শতক জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। এতে খরচ হয়েছে ২ লাখ ১০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি করে পেয়েছেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। গাছে আরও ৩০ হাজার টাকার মতো তরমুজ আছে। সব মিলিয়ে খরচ বাদ দিয়ে খেতের তরমুজ বিক্রি করে এবার লাভ হচ্ছে দুই লাখ টাকা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবারও তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৭০ শতাংশ জমির তরমুজের ওজন ছিল ২ থেকে ৪ কেজি। এসব তরমুজের প্রতিটি বিক্রি হয়েছে ৩০০-৬০০ টাকায়। মৌসুমের শুরুতে তিনি ১৭ কেজি ওজনের একটি তরমুজ বিক্রি করেন ১ হাজার ৭০০ টাকায়।

কুতুবদিয়ায় এখন লবণ উৎপাদনের ধুম। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এলাকায় পানির তীব্র সংকট চলছে। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে কিছু জমিতে চলছে বোরো চাষ। তবে লবণাক্ততার কারণে বোরো ধানের উৎপাদন কমছে। গ্রামগুলোর পশ্চিম পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ। বাঁধের কিছু অংশ ভাঙাচোরা। শীতকালে বঙ্গোপসাগর শান্ত থাকায় চাষিরা কিছুটা চিন্তামুক্ত থাকেন। কিন্তু বর্ষাকালে সাগর উত্তাল হলে বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে চাষিদের ধান ও ফসলের জমি সয়লাব হয়। ফসল হারিয়ে তখন চাষিরা পথে বসেন। শাকসবজি-ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বসাতে হয় গভীর নলকূপ। এর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে তরমুজ চাষ করে লাভবান হয়েছেন আলী আকবরডেইলের ১৭ জন চাষি। তবে তাদের মধ্যে সব চেয়ে সফল বলতে হয় কুলসুমাকে।

কুলসুমার পাশে দুই কানি জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন স্থানীয় চাষি মোহাম্মদ আজম। তবে কুলসুমার মতো এতটা সাফল্য পাননি তিনি। কারণ তার জমিতে লবণাক্ততা কিছুটা বেশি। এ পর্যন্ত তরমুজ বিক্রি করে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা পেয়েছেন তিনি।  তিনি বলেন, লবণাক্ততার কারণে কিছু গাছ নষ্ট হয়েছে। এ কারণে তাঁর খেতে এবার তরমুজের উৎপাদন কমে গেছে।

কুতুবদিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কুতুবদিয়ার তরমুজ মিষ্টি এবং ভালো। শীতকালে দেশের অন্যান্য এলাকায় যখন কুয়াশা থাকে, কুতুবদিয়ায় তখন ঝলমলে রোদ পাওয়া যায়। রোদের কারণেই তরমুজ ভালো হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: তরম জ ব ক র ক লস ম র র তরম জ তরম জ র

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ