আপনি কি জানেন মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়ার জঙ্গলের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া রেললাইনের পাশেই ঘুরে বেড়াতো বাঘ। ১৯৫০ সালের কাছাকাছি সময়ে সেখানে হয়েছে বাঘ শিকার। এক সময় কাসালং রিজার্ভে হাতি এতো বেশি ছিল যে, খেদার মাধ্যমে বুনোহাতি ধরে পোষ মানানো হতো। চমকপ্রদ এই তথ্য পাওয়া যাবে উইথ দ্য ওয়াইল্ড অ্যনিমেলস অব বেঙ্গল বইটিতে। ইউসুফ এস আহমেদের বইটি রূপান্তর করেছেন ইশতিয়াক আহমেদ। 

এই বইটিসহ ২০২৫ সালের বইমেলায় ইশতিয়াক আহমেদের নতুন বই এসেছে পাঁচটি। এর মধ্যে তিনটি থ্রিলার, আর দুটি সত্যিকারের অ্যাডভেঞ্চার কাহিনি। বইগুলো কল্পনার জগতে ঘুরিয়ে আনবে পাহাড়, অরণ্য ও রোমাঞ্চপ্রেমীদের। এগুলো প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য (প্যাভিলিয়ন ২৮) ও কথাপ্রকাশ (প্যাভিলিয়ন ২৫)।

কথাপ্রকাশ থেকে বের হয়েছে দুটি বই। একটি মৌলিক থ্রিলার, অপরটি অনুবাদ। কিশোর থ্রিলারের নাম ‘ফগ সাহেবের অভিশাপ’। পঁয়ত্রিশ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া এক স্কটিশ সাহেবের অপ্রত্যাশিত আবির্ভাবে ঘটছে নাটকীয় ঘটনাপ্রবাহ। পরিত্যক্ত এক বাংলো ও পুরোনো এক অভিশাপ আরও জটিল করল পরিস্থিতি। কিশোর ছেলেকে নিয়ে রহস্যভেদে এসে যেন অথৈ সাগরে পড়লেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নাবিলা। কী সেই ঘটনা?

চা বাগানের ভেতরে পরিত্যক্তই বাংলো সবাই এড়িয়ে চলে কেন? এটা কি সত্যি ভূতুড়ে? পাহাড় জঙ্গল কাঁপিয়ে দেওয়া ওই অশুভ চিৎকারের রহস্য কী? এসব জানতে পড়তেই হবে ‘ফগ সাহেবের অভিশাপ’। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। দাম ৩০০ টাকা।

অপর বইটির কথা শুরুতেই বলা হয়েছে। পুরনো দিনের কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সুন্দরবন, সিলেট ও ডুয়ার্সের জঙ্গলে বাংলাদেশি বন কর্মকর্তা ইউসুফ এস আহমেদের রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা পাবেন এতে। দেশের পুরনো দিনের অরণ্য ও বন্যপ্রাণীর এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে এমনকি গবেষকদেরও বইটি আকৃষ্ট করবে আশা করি।

শুধু রূপান্তরই নয়, এ বইটিতে সংযোজিত হয়েছে বেশ কিছু টিকা, পুরোনো দিনের ছবি ও নতুন করে আঁকা চমৎকার কিছু ইলাস্ট্রেশন, যা মূল বইয়ে ছিল না। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন দেওয়ান আতিকুর রহমান। ভেতরের অংকনের কারিগর তন্ময় শেখ। বইটির মূল্য ৫০০ টাকা।

ঐতিহ্য থেকে বের হয়েছে লেখকের নতুন তিনটি বই। লেখকের পাহাড় ও জঙ্গলে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিয়ে বই ‘কখনো পাহাড় কখনো অরণ্য’। দেড় যুগের বেশি সময় ধরে ইশতিয়াক আহমেদ পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের অরণ্য-পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এই গল্প পাহাড়ের, জঙ্গলের, বন্যপ্রাণীর আর চলার পথে পরিচয় হওয়া দুর্গম এলাকার অসংখ্য মানুষের।     
পাঠকদের জন্য বাড়তি পাওয়া ভ্রমণসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য, টিপস ও ১৬ পৃষ্ঠা চাররঙা ছবি। এ বইটির প্রচ্ছদও দেওয়ান আতিকুর রহমানের করা। মূল্য ৩৫০ টাকা।

এ প্রকাশনী থেকে এসেছে ইশতিয়াক আহমেদের ‘নাহিদ দ্য ইনভেস্টিগেটর’ সিরিজের চতুর্থ বই ‘ফাদার মরিসনের ভূত’। বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে পুরোনো, পরিত্যক্ত এক গির্জাকে কেন্দ্র করে ঘটতে শুরু করল আধিভৌতিক কাণ্ড-কারখানা। গভীর রাতে ভেসে আসে ঘণ্টার আওয়াজ। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে অদ্ভূত এক কুয়াশা। নিখোঁজ হচ্ছে একের পর এক মানুষ। বাঘের পিঠে চড়া ওই ভূতুড়ে ছায়ামূর্তিই বা কে? তবে কি পাহাড়ের কিংবদন্তিই সত্যি? ফিরে এসেছে ফাদার মরিসনের অতৃপ্ত প্রেতাত্মা? এসব অজানা রহস্যের সমাধান মিলবে ‘ফাদার মরিসনের ভূতে’। বইটির প্রচ্ছদ ও ভেতরের অলংকরণ করেছেন জাহিদ জামি। মূল্য ২২০ টাকা।

মূল চরিত্র নাহিদ জামি পেশায় সাংবাদিক। দুর্গম পাহাড় ও গভীর অরণ্য টানে তাকে। কখনো অফিসের অ্যাসাইনম্যান্টে, কখনো নিছক শখে বেরিয়ে পড়েন রোমাঞ্চকর অভিযানে। জড়িয়ে পড়েন নানা রহস্যজালে। এই সিরিজের আগের তিনটি বই হলো ‘ফরাসি ম্যামের ধাঁধা’, ‘পাহাড়চূড়ার খুনি’ ও ‘মানিকপুরের নেকড়ে রহস্য’। 

ঐতিহ্য থেকে এবারের মেলাতেই বের হয়েছে অ্যাডভেঞ্চার সিরিজের প্রথম বই ‘হলুদ পাহাড়ে মৃত্যু’। বন কর্মকর্তা অনিক ফিল্ড ট্রেনিংয়ে এলো বান্দরবানের দুর্গম এক এলাকায়। আর এসেই আবিষ্কার করল এখানে কাঠ পাচার কিংবা চোরাশিকার ছাড়াও আরও নানা ধরনের ঝামেলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে তাকে। রহস্যময় হলুদ পাহাড়ের গাছ কাটলেই কি বরণ করতে হয় যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু? সেখানে কী প্রবল ক্ষমতাধর কোনো শক্তির বাস? স্থানীয়দের মুখে শোনা ভয়ানক দানব কিং কোবরার কিংবদন্তি কি সত্যি? এর মধ্যেই নিখোঁজ ভাইকে খুঁজতে আসা এক তরুণী জটিল করল পরিস্থিতি। এ বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন মানব। মূল্য ১৯০ টাকা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বইম ল আহম দ র কর ছ ন দ র গম রহস য

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ