কোরআনে মা-বাবার জন্য সন্তানকে আল্লাহ একটা দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। দোয়াটি হলো ‘রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগিরা।’ কেউ কেউ মনে করেন, রহমতের এ দোয়াটি মৃত মা-বাবার জন্য। দোয়াটির অর্থ হচ্ছে, ‘আমার প্রতিপালক! বাবা-মায়ের ওপর দয়া করো, যেভাবে ছেলেবেলায় বাবা-মা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।’

মা-বাবার জীবিত থাকা অবস্থায়ও এই দোয়াটি পড়া যায়। মূলত ইসলাম মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা জারি করেছে। কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন। তোমার জীবদ্দশায় ওঁদের একজন বা দুজনই বার্ধক্যে পৌঁছালেও তাঁদের ব্যাপারে “উহ-আহ্” বোলো না, আর ওঁদের অবজ্ঞা কোরো না, ওঁদের সঙ্গে সম্মান করে নম্রভাবে কথা বলবে। তুমি অনুকম্পার সঙ্গে, বিনয়ের ডানা নামাবে, আর বলবে, হে আমার প্রতিপালক! ওঁদের ওপর দয়া করো, যেভাবে ছেলেবেলায় ওঁরা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩-২৪)

সব অবস্থায় মা-বাবার সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.

)-এর কাছে এক লোক এসে প্রশ্ন করলেন, আমার কাছ থেকে সবচেয়ে ভালো আচরণ পাওয়ার অধিকার কার? নবী করিম (সা.) বললেন, তোমার মায়ের। লোকটি আবার প্রশ্ন করলে তিনি একই উত্তর দেন। তিন-তিনবার এমন উত্তর দেওয়ার পর লোকটি আবার একই প্রশ্ন করেন। নবী করিম (সা.) বলেন, তোমার বাবার। (বুখারি, হাদিস, হাদিস: ২,২২৭)

আল্লাহর ইবাদত ও মাতা-পিতার খেদমত

কোরআনে আছে, আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে (ভালো ব্যবহারের) নির্দেশ দিয়েছি। কষ্টের পর কষ্ট করে জননী সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে, আর তার দুধ ছাড়াতে ছাড়াতে দুই বছর লেগে যায়। তাই আমার প্রতি ও তোমার পিতা-মাতার ওপর কৃতজ্ঞ হও। আমার কাছেই তো প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ (সুরা লুকমান, আয়াত: ১৪)

মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ করার হাদিস অনেক রয়েছে। একটি হাদিসে আছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার মিম্বরের ওপর উঠে তিনবার আমিন বলেন। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে জিবরাইল (আ.) এসেছিলেন। এসে তিনি বলেন, হে নবী (সা.)! ওই ব্যক্তির নাক ধুলামলিন হোক, যার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হয়, অথচ সে আপনার ওপর দরুদ পড়ে না। বলুন, আমিন। সুতরাং আমি আমিন বললাম। আবার তিনি বললেন, ওই ব্যক্তি জীবনে রমজান মাস এল এবং চলেও গেল, অথচ তাকে ক্ষমা করা হলো না। বলুন, আমিন। আমি আমিন বললাম। আবার তিনি বললেন, ওই ব্যক্তিকেও আল্লাহ ধ্বংস করুন, যে তার বাবা-মা উভয়কে পেল অথবা কোনো একজনকে পেল, অথচ তাদের খিদমত করে জান্নাতে যেতে পারল না। আমিন বলুন। আমি তখন আমিন বললাম।’

মাতা-পিতার খেদমত ও রমজান

কোরআনে আরও আছে, ‘আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছি, তবে ওরা যদি তোমাকে আমার সঙ্গে এমন কিছু শরিক করতে বাধ্য করে, যার সম্পর্কে তোমার জ্ঞান নেই, তুমি তাদের কথা মানবে না। আমার কাছেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন (করতে হবে)। তারপর তোমরা ভালোমন্দ যা কিছু করেছ, আমি তা তোমাদের জানিয়ে দেব।’ (সুরা আনকাবুত, আয়াত: ৮)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মাতা-পিতার রাজি-খুশির মধ্যেই আল্লাহর রাজি-খুশি। মাতা-পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি।’ (সুনানে তিরমিজি)

অন্য একটি হাদিসে আছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া নিঃসন্দেহে কবুল হয়। তা হলো ক. মজলুমের দোয়া, খ. মুসাফিরের দোয়া এবং গ. সন্তানের জন্য মা-বাবার দোয়া।’ (সুনানে তিরমিজি)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘বাবা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা। এখন তোমাদের ইচ্ছা, এর হেফাজত করো অথবা একে নষ্ট করে দাও।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১,৯০১)

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করেন, কোন আমল মহান আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়? রাসুল (সা.) বললেন, সময়মতো নামাজ আদায় করা। তিনি বললেন, তারপর কোন কাজ? তিনি বললেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা। তিনি বললেন, তারপর? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। (বুখারি, হাদিস: ৫,৯৭০)

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, ‘এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইল। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে বললেন, তোমার বাবা-মা কি জীবিত? সে বলল, হ্যাঁ। রাসুল (সা.) বললেন, তাহলে তুমি তাদের খেদমতে জিহাদ করো।’ (মুসলিম, হাদিস: ২,৫৪৯)

ইসলামে মায়ের সম্মান ও অধিকার

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম র ক ছ ব যবহ র আল ল হ র জন য বল ছ ন বলল ন র ওপর ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইসরায়েলের হামলা

রবিবার বিকেল থেকে ইরানজুড়ে নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সামরিক স্থাপনার পাশাপাশি ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কেও লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

রবিবার রাতে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইদ খাতিবজাদেহ ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে তিনি জানান, রবিবার রাজধানী তেহরানে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

এক্স-পোস্টে সাইদ বলেছেন, “ইসরায়েলের অপরাধী শাসকগোষ্ঠী রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি ভবনে ইচ্ছাকৃত এবং নির্মম হামলা চালিয়েছে।”

আরো পড়ুন:

ইসরায়েলের নতুন হামলায় ইরানের আইআরজিসির গোয়েন্দা প্রধান নিহত

ইসরায়েলে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল ইরান, তেল আবিব ও হাইফাতে সরাসরি আঘাত

উপ-মন্ত্রী আরো বলেন, “এই হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন, আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীও আহত হয়েছেন, যাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

সাইদ বলেন, “এটি আরো একটি স্পষ্ট যুদ্ধাপরাধ, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি শাসকগোষ্ঠীর চলমান ও নিয়মতান্ত্রিক আগ্রাসন অভিযানের অংশ।”

এর আগে শনিবার ইরানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা তেহরানের অস্ত্র উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইরানের আইআরজিসি ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে রবিবার নতুন করে ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়েছে।

বিবৃতিতে  বলা হয়, এই হামলায় ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি), গার্ডস কুদস ফোর্স এবং ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আরো জানিয়েছে, ইরানজুড়ে অসংখ্য অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্রে হামলা চালানো হয়েছে। 

ইরানি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই হামলায় আইআরজিসিরি গোয়েন্দা প্রধান মোহাম্মদ কাজেমি এবং তার সহকারী হাসান মোহাকিক নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোহসেন বাঘারি নামে আইআরজিসির আরো একজন জেনারেল নিহত হয়েছেন। এর প্রতিশোধ নিতে রবিবার রাতে ইসরায়েলে ৫০টি ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও শতাধিক ড্রোন ছুড়েছে ইরান।

ইসরায়েলের ফায়ার ও রেসকিউ সার্ভিসের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, উত্তর ইসরায়েলে দুটি এবং হাইফায় একটি আবাসিক ভবনে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হানার খবর পেয়েছে তারা।

ইসরায়েলি জাতীয় জরুরি সেবা সংস্থা জানিয়েছে, হাইফায় ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সাতজন আহত হয়েছেন। এছাড়া কিরিয়াত গাটের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় একটি শহরে একজন আহত হয়েছেন।

এ ঘটনায় ইসরায়েলি সেনাপ্রধান ইয়াল জামির ইরানের ওপর আক্রমণ আরো তীব্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একটি বিবৃতি জারি করে ইসরায়েরি সেনাপ্রধান বলেছেন, “আমরা আমাদের অভিযান তীব্রতর করে যাব এবং এটি করে, আগামী বছরগুলোতে আমাদের নিরাপত্তা জোরদার করব। আমরা জানতাম এর একটি মূল্য দিতে হবে এবং এটিই বোঝায় যে, আমরা কেন এখনই পদক্ষেপ নিয়েছি, তা অনেক দেরি হওয়ার আগেই।”

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ১৩ জন নিহত এবং ৩৭০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ