হাইওয়ে থানায় যেন লাশের মিছিল, শোকাবহ পরিবেশ
Published: 17th, February 2025 GMT
মধ্যরাত। সাঁই সাঁই করে একে একে থানায় ঢুকছে অ্যাম্বুলেন্স, পিকআপ ভ্যান। ভেতরে মরদেহ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো তিনজনের মরদেহ আনা হয় এসব যানবাহনে। মধ্যরাতে এসব মরদেহ নিতে থানায় ভিড় করেন স্বজনরা। এতে থানায় সৃষ্টি হয় শোকাবহ পরিবেশ।
রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১টার দিকে গোলড়া হাইওয়ে থানায় গিয়ে দেখা মেলে এমন দৃশ্যের। থানা ভবনের সিঁড়িতে বাবা-মায়ের মরদেহ গ্রহণ করতে বসে ছিল কিশোর মো.
বাবা-মাকে একত্রে হারিয়ে স্তব্ধ সিফাত জানালেন, রাতে ফেরার কথা ছিল বাবা-মায়ের। একসঙ্গে ফিরছিলেন। তবে সড়কে প্রাণ যায় তাদের।
বাবুল-শারমিন দম্পতির দুই ছেলে। সিফাতকে নিয়ে তারা মানিকগঞ্জে থাকতেন। আরেক ছেলেকে রাখতে দিয়েছিলেন গ্রামের বাড়ি মায়ের কাছে। দুই বছরের সেই শিশু এখনও জানে না বাবা-মাকে হারানোর খবর।
সিফাতের নানা (বাবুলের মামা) হানিফ বলেন, “আমরা সন্ধ্যার পর শুনি তারা দুইজনই মারা গেছে। দুই ছেলেকে রেখে গেছে তারা। ছোট ছোট বাচ্চা দুটোর কি হবে? তারা কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে? এতিম হয়ে গেলো।” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
কাঁপা কাঁপা স্বরে কিশোর সিফাত হোসেন (১৪) বলেন, “আমার বাবা-মা গার্মেন্টসে জব করতো। বাইক নিয়ে আসার পথে তারা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আমরা ৯টা ১০-১৫’র দিকে শুনছি। পরে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে যাই। দেখি তারা আর জীবিত নেই। আমার আরেকটা ভাই আছে, এখানে থাকে না। ও জানে না আব্বা-মা নেই।”
গোলড়া হাইওয়ে থানা পুলিশ জানায়, রাত ৯টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ লেন হয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচ বাড়ৈ এলাকায় বাড়ি ফেরার পথে বাথুলি এলাকায় অজ্ঞাত পরিবহনের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন ওই দম্পতি। উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। তারা মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচ বাড়ৈ এলাকার বাসিন্দা।
এদিকে একই রাতে আধ ঘণ্টার ব্যবধানে অজ্ঞাত পরিবহনের ধাক্কায় প্রাণ হারান সুভাস লৌহকার (৭৫) নামে এক পথচারী। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। এ বৃদ্ধের মরদেহ গ্রহণ করতে থানায় ভিড় করতে দেখা যায় ছেলে-নাতিসহ অন্তত ১০-১২ জনকে।
এভাবে তার মৃত্যু মানতে পারছে না পরিবারের সদস্যরা। এ বৃদ্ধের নাতি প্রণব লোহাকার বলেন, “উনার মানসিক সমস্যার কারণে প্রায়ই এদিক সেদিক চলে যেতো। সবাই দেখেশুনে রাখতো। আজ বিকেল ৩-৪টার দিকে নিখোঁজ হয়। আমরা খুঁজতে থাকি। সন্ধ্যার পর ফোনে শুনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে তাকে মৃত দেখতে পাই। পরে লাশ থানায় আনা হলে থানায় আসি। দাদুর এমন মৃত্যু হবে কোনোদিন ভাবতেও পারিনি। কিভাবে কি হয়ে গেলো।”
নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে হাইওয়ে পুলিশ জানায়, নিহত সুভাস লৌহকার মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তিনি মানিকগঞ্জের উচুটিয়া এলাকার সাগর লৌহকারের ছেলে। প্রাথমিক ধারণা বাড়ি থেকে বের হয়ে পথে হেঁটে বেড়ানোর সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
গোলড়া হাইওয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) রূপল চন্দ্র দাস বলেন, “রাত ৯টার দিকে ধামরাই থানার বাথুলি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটা অজ্ঞাত পরিবহন একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে এক দম্পতি নিহত হন। তারা পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। মোটরসাইকেলে করে তারা বাসায় ফিরছিলেন। এছাড়া নিকটবর্তী বালিথা এলাকায় এক মানসিক ভারসাম্যহীন পথচারীকে অজ্ঞাত পরিবহন ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে তিনি নিহত হন। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে মরদেহগুলো থানায় আনা হয়েছে। উভয় ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র মরদ হ দ র ঘটন এল ক য় হ ইওয় ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।
এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক