মধ্যরাত। সাঁই সাঁই করে একে একে থানায় ঢুকছে অ্যাম্বুলেন্স, পিকআপ ভ্যান। ভেতরে মরদেহ। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আধা ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো তিনজনের মরদেহ আনা হয় এসব যানবাহনে। মধ্যরাতে এসব মরদেহ নিতে থানায় ভিড় করেন স্বজনরা। এতে থানায় সৃষ্টি হয় শোকাবহ পরিবেশ।

রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ১টার দিকে গোলড়া হাইওয়ে থানায় গিয়ে দেখা মেলে এমন দৃশ্যের। থানা ভবনের সিঁড়িতে বাবা-মায়ের মরদেহ গ্রহণ করতে বসে ছিল কিশোর মো.

সিফাত। পোশাক শ্রমিক বাবা-মা চাকরি করতেন ধামরাইয়ের মাহমুদা আ্যাটায়ার্স নামে একটি পোশাক কারখানায়। রাতে কাজ শেষে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচ বাড়ৈ এলাকায় বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাত পরিবহনের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন বাবুল হোসেন (৩০) ও শারমিন (২৮) দম্পতি। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন তাদের। বাবা-মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে থানায় আসে সিফাত। রাত ১২টার দিকে দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে আনা হয় ওই দম্পতির মরদেহ। কাছে ছুটে যান সিফাত ও তার সঙ্গে আসা নানা-নানি। মরদেহ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা।

বাবা-মাকে একত্রে হারিয়ে স্তব্ধ সিফাত জানালেন, রাতে ফেরার কথা ছিল বাবা-মায়ের। একসঙ্গে ফিরছিলেন। তবে সড়কে প্রাণ যায় তাদের। 

বাবুল-শারমিন দম্পতির দুই ছেলে। সিফাতকে নিয়ে তারা মানিকগঞ্জে থাকতেন। আরেক ছেলেকে রাখতে দিয়েছিলেন গ্রামের বাড়ি মায়ের কাছে। দুই বছরের সেই শিশু এখনও জানে না বাবা-মাকে হারানোর খবর। 

সিফাতের নানা (বাবুলের মামা) হানিফ বলেন, “আমরা সন্ধ্যার পর শুনি তারা দুইজনই মারা গেছে। দুই ছেলেকে রেখে গেছে তারা। ছোট ছোট বাচ্চা দুটোর কি হবে? তারা কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে? এতিম হয়ে গেলো।” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। 

কাঁপা কাঁপা স্বরে কিশোর সিফাত হোসেন (১৪) বলেন, “আমার বাবা-মা গার্মেন্টসে জব করতো। বাইক নিয়ে আসার পথে তারা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। আমরা ৯টা ১০-১৫’র দিকে শুনছি। পরে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে যাই। দেখি তারা আর জীবিত নেই। আমার আরেকটা ভাই আছে, এখানে থাকে না। ও জানে না আব্বা-মা নেই।” 

গোলড়া হাইওয়ে থানা পুলিশ জানায়, রাত ৯টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ লেন হয়ে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচ বাড়ৈ এলাকায় বাড়ি ফেরার পথে বাথুলি এলাকায় অজ্ঞাত পরিবহনের ধাক্কায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন ওই দম্পতি। উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। তারা মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পাঁচ বাড়ৈ এলাকার বাসিন্দা। 

এদিকে একই রাতে আধ ঘণ্টার ব্যবধানে অজ্ঞাত পরিবহনের ধাক্কায় প্রাণ হারান সুভাস লৌহকার (৭৫) নামে এক পথচারী। তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। এ বৃদ্ধের মরদেহ গ্রহণ করতে থানায় ভিড় করতে দেখা যায় ছেলে-নাতিসহ অন্তত ১০-১২ জনকে। 

এভাবে তার মৃত্যু মানতে পারছে না পরিবারের সদস্যরা। এ বৃদ্ধের নাতি প্রণব লোহাকার বলেন, “উনার মানসিক সমস্যার কারণে প্রায়ই এদিক সেদিক চলে যেতো। সবাই দেখেশুনে রাখতো। আজ বিকেল ৩-৪টার দিকে নিখোঁজ হয়। আমরা খুঁজতে থাকি। সন্ধ্যার পর ফোনে শুনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে তাকে মৃত দেখতে পাই। পরে লাশ থানায় আনা হলে থানায় আসি। দাদুর এমন মৃত্যু হবে কোনোদিন ভাবতেও পারিনি। কিভাবে কি হয়ে গেলো।” 

নিহতের পরিবারের বরাত দিয়ে হাইওয়ে পুলিশ জানায়, নিহত সুভাস লৌহকার মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। তিনি মানিকগঞ্জের উচুটিয়া এলাকার সাগর লৌহকারের ছেলে। প্রাথমিক ধারণা বাড়ি থেকে বের হয়ে পথে হেঁটে বেড়ানোর সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

গোলড়া হাইওয়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) রূপল চন্দ্র দাস বলেন, “রাত ৯টার দিকে ধামরাই থানার বাথুলি বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটা অজ্ঞাত পরিবহন একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে এক দম্পতি নিহত হন। তারা পোশাক কারখানার শ্রমিক ছিলেন। মোটরসাইকেলে করে তারা বাসায় ফিরছিলেন। এছাড়া নিকটবর্তী বালিথা এলাকায় এক মানসিক ভারসাম্যহীন পথচারীকে অজ্ঞাত পরিবহন ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে তিনি নিহত হন। দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে মরদেহগুলো থানায় আনা হয়েছে। উভয় ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।” 

ঢাকা/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র মরদ হ দ র ঘটন এল ক য় হ ইওয় ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে ইরানের নতুন হামলায় নিহত বেড়ে ৫, আহত ২৯

ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে অন্তত চার জায়গায় হামলা চালিয়েছে ইরান। এ হামলায় তিনজন নিহত হয় বলে জানায় জেরুজালেম পোস্ট। বিবিসি আরও দুইজন নিহতের খবর দেয়। এরপর আরেকজনের ফলে নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত বেড়ে পাঁচজনে পৌঁছাল।

আজ সোমবার আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অ্যাম্বুলেন্স ও ব্লাড ব্যাংক সংস্থাগুলো বলছে, এসব হামলায় ২৯ জন আহত হয়েছেন।

বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম জানান, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী, একজন পুরুষ। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলে হামলায় একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এছাড়াও বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়াও সেখান আরও তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

এর আগে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছিল, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ