সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আনবে, সেটাও টেকসই হবে না। তাই দুটোই দরকার। শুধু সম্প্রীতি নয়, রাষ্ট্রও যেন মেরামত হয়।

ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে আজ সোমবার সকালে ‘সম্প্রীতি সংলাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বদিউল আলম মজুমদার এসব কথা বলেন। বেসরকারি সংস্থা দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের আয়োজনে এবং যুক্তরাজ্যের ইউকেএইডের সহযোগিতায় এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে  হাঙ্গার প্রজেক্টের ‘এজেন্টস অব চেঞ্জ: আ বাংলাদেশ ফ্রিডম অব রিলিজিয়ন অর বিলিফ লিডারশিপ ইনিশিয়েটিভ’ কর্মসূচি এবং সম্প্রীতি রক্ষায় চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নিয়ে বক্তারা আলোচনা করেন।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ বিভেদ ভুলে একসঙ্গে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হলেই আমরা শক্তিশালী হই। বিভক্তি দুর্বলতা আনে। দুর্বল সমাজ বেশি দূর এগোতে পারে না। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছে। অনেকে আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা নিয়েই আমরা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি।’

এখন নতুন বাংলাদেশের দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ করেছি উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা কতগুলো সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হতে হবে। নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে গেছে। নির্বাচনে দুর্বৃত্তায়ন, টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘অনেক জায়গায় আলোচনা দেখি, সংস্কার না নির্বাচন? আমি তো এ দুটোর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখি না। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও  গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্যই সংস্কার দরকার। ভাঙা পদ্ধতি তো জোড়া লাগাতে হবে। সব অসংগতি, অপরিচ্ছন্নতা দূর করে একটি পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেন সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।’

বাংলাদেশে সম্প্রীতির সুদীর্ঘ ঐতিহ্য বিস্তৃত করে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। তারই অংশ হিসেবে দেশের আটটি জেলায় ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং সামাজিক সম্প্রীতি সুরক্ষায় তরুণ স্বেচ্ছাব্রতীদের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় নেতারা সহায়তা করছেন। উল্লিখিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের অন্তর্বর্তী কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা বলেন, ‘সমাজের বৈচিত্র্যকে রাষ্ট্র ধারণ করতে পারলে সমাজ ও রাষ্ট্রে সম্প্রীতির সৃষ্টি হবে। সহজাতভাবেই জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে এক জোট হয়ে কাজ করার যে বিষয়, আমরা অনেক সময় সেটা হারিয়ে ফেলি। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সেটি রক্ষা করতে হবে।’

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রক্ষায় মুসলিমদের দায়িত্ব বেশি উল্লেখ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মুহাম্মদ রফিক-উল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি ধর্মের মূল বাণী হলো সম্প্রীতি, শান্তি ও ভালোবাসা। এই শান্তি ও অধিকারের কথা ছড়িয়ে দিতে হবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া আমাদের কর্তব্য। সামাজিক সংহতি তৈরি ও বাধা দূর করতে ইমাম ও ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

এজেন্টস অব চেঞ্জ প্রকল্পের পরিচালক (অপারেশনস) ও চার্চ অব ইংল্যান্ডের পলিসি অ্যাডভাইজার চার্লস রীড বলেন, ‘রাজনীতি, ধর্ম এবং জাতীয়তার ভিত্তিতে আমাদের মধ্য অনেক বিভেদ চলে এসেছে। সে সবের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এই কাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। বাংলাদেশ এখন ক্রান্তিকাল পার করছে।’

আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক স্বরূপানন্দ ভিক্ষু, জেসাস কল চার্চ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান রেভারেন্ড ডেভিড বৈদ্য, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বিমল চন্দ্র চক্রবর্তী, আহমদিয়া মুসলিম জামাতের এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্সের ডিরেক্টর আহমেদ তাবসির চৌধুরী এবং আটটি জেলা থেকে আগত বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃত্ব, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং তরুণদের প্রতিনিধিরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর চ ল দ র বল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপ‌দেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন: জামায়া‌তে ইসলামী

প্রধান উপ‌দেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূ‌সের স‌ঙ্গে বিএন‌পির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তা‌রেক রহমা‌নের বৈঠ‌ককে স্বাভা‌বিক বল‌লেও, দুইজ‌নের যৌথ বিবৃতি‌ নি‌য়ে প্রশ্ন তু‌লে‌ছে জামায়া‌তে ইসলামী। 

শ‌নিবার জামায়া‌তের নির্বাহী প‌রিষ‌দের বৈঠ‌কের পর বিবৃ‌তি‌তে দল‌টি ব‌লে‌ছে, ‘যৌথ বিবৃ‌তি প্রদান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে আমরা মনে করি। এর মাধ্যমে প্রধান উপ‌দেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে।’

দ‌লের আ‌মির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হ‌য়ে‌ছে ব‌লে বিবৃ‌তি‌তে বলা হ‌য়ে‌ছে। এ‌তে আরও বলা হয়, ‘১৩ জুন লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মাদ ইউনূসের স‌ঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা‌কে জামায়াত খুবই স্বাভাবিক মনে করে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে এবং যৌথভাবে বৈঠক করেছেন।’

লন্ডন বৈঠ‌কের যৌথ বিবৃ‌তি নি‌য়ে প্রশ্ন তু‌লে জামায়াত ব‌লে‌ছে, ‘গত ৬ জুন জাতির উদ্দেশে ভাষণে ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেন প্রধান উপ‌দেষ্টা। তার এই ঘোষণার পর লন্ড‌ন সফরে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিদেশে যৌথ প্রেস ব্রিফিং এবং বৈঠকের বিষয় সম্পর্কে যৌথ বিবৃতি প্রদান করা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ব্যত্যয় বলে জামায়াত ম‌নে ক‌রে। এর মাধ্যমে প্রধান উপ‌দেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন, যা তার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন ক‌রে।’

‌লন্ডন বৈঠ‌কের যৌথ বিবৃ‌তিতে মধ্য ফেব্রুয়া‌রি‌তে নির্বাচ‌নের সম্ভাবনার কথা বলা হ‌য়ে‌ছে। জামায়াত এ প্রস‌ঙ্গে বিবৃ‌তি‌তে ব‌লে‌ছে, ‘আমরা মনে করি দেশে ফিরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে প্রধান উপ‌দেষ্টার অভিমত প্রকাশ করাই সমীচীন ছিল।’

জামায়াত ফেব্রুয়া‌রি‌তে নির্বাচ‌নের বি‌রোধী নয় বিবৃ‌তি‌তে স্পষ্ট করা হয়। এ‌তে বলা হ‌য়েছে, ‘গত ১৬ এপ্রিল জামায়াত আ‌মির দলীয় দৃ‌ষ্টিভঙ্গী তু‌লে ধ‌রে জা‌নি‌য়ে‌ছি‌লেন ২০২৬ সালের রসজা‌নের পূর্বে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হতে পারে।’ 

বিবৃ‌তিতে বলা হ‌য়ে‌ছে, ‘জামায়াত মনে করে সরকার প্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে কিছুতেই যথার্থ নয়। প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ‌বিবৃ‌তি দেওয়ায় আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যেখানে বাংলাদেশে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সক্রিয়ভাবে বিদ্যমান, সেখানে শুধু একটি দলের সঙ্গে আলাপে দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সঠিক বলে বিবেচিত হতে পারে না। জামায়াত আশা ক‌রে, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান অন্তর্বতীকালীন সরকার নিরপেক্ষ থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে এবং বিচার ও সংস্কারের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করবে। সরকারের নিরপেক্ষতা এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য  নির্বাচন নিয়ে যে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা জাতির সামনে স্পষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’

এর আগে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠ‌কের দিন জামায়াত আনুষ্ঠা‌নিক প্রতি‌ক্রিয়া না জানা‌লেও দল‌টির শীর্ষস্থানীয় নেতারা সমকালকে বলেছি‌লেন, ‘জামায়াতই প্রথম বলেছে, রমজানের আগে নির্বাচন হওয়া উচিত। তাই নির্বাচনের যে নতুন সময়সীমা বলা হচ্ছে, এ নিয়ে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সরকার যেভাবে শুধু বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে সময়সীমা নির্ধারণ করেছে, তা অগ্রহণযোগ্য।’

জামায়াত নেতারা শুক্রবার রা‌তেই সমকাল‌কে ব‌লে‌ছি‌লেন, যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে– সরকার এবং বিএনপি সমশক্তি। এর পর আর সরকারের নিরপেক্ষতা থাকে না। এ বক্তব্য ড. ইউনূসকে জানাবে জামায়াত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে ট্রাম্প-পুতিনের মধ্যে কী আলোচনা হলো
  • প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে
  • একটি দলের নেতার সঙ্গে যৌথ বিবৃতি প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
  • প্রধান উপ‌দেষ্টা একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রকাশ করেছেন: জামায়া‌তে ইসলামী
  • একটি দলের প্রতি বিশেষ অনুরাগ প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন করেছে: জামায়াত
  • লন্ডন বৈঠকে নির্বাচনের তারিখ সম্পর্কিত বক্তব্যে দ্বিমত প্রিন্সের