সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না: বদিউল আলম মজুমদার
Published: 17th, February 2025 GMT
সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেছেন, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া আনবে, সেটাও টেকসই হবে না। তাই দুটোই দরকার। শুধু সম্প্রীতি নয়, রাষ্ট্রও যেন মেরামত হয়।
ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে আজ সোমবার সকালে ‘সম্প্রীতি সংলাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বদিউল আলম মজুমদার এসব কথা বলেন। বেসরকারি সংস্থা দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের আয়োজনে এবং যুক্তরাজ্যের ইউকেএইডের সহযোগিতায় এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে হাঙ্গার প্রজেক্টের ‘এজেন্টস অব চেঞ্জ: আ বাংলাদেশ ফ্রিডম অব রিলিজিয়ন অর বিলিফ লিডারশিপ ইনিশিয়েটিভ’ কর্মসূচি এবং সম্প্রীতি রক্ষায় চ্যালেঞ্জ ও করণীয় নিয়ে বক্তারা আলোচনা করেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী, পুরুষ বিভেদ ভুলে একসঙ্গে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হলেই আমরা শক্তিশালী হই। বিভক্তি দুর্বলতা আনে। দুর্বল সমাজ বেশি দূর এগোতে পারে না। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছে। অনেকে আহত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তা নিয়েই আমরা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছি।’
এখন নতুন বাংলাদেশের দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশ করেছি উল্লেখ করে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমরা কতগুলো সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপন করেছি। প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হতে হবে। নির্বাচনব্যবস্থা ভেঙে গেছে। নির্বাচনে দুর্বৃত্তায়ন, টাকার খেলা বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘অনেক জায়গায় আলোচনা দেখি, সংস্কার না নির্বাচন? আমি তো এ দুটোর মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখি না। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্যই সংস্কার দরকার। ভাঙা পদ্ধতি তো জোড়া লাগাতে হবে। সব অসংগতি, অপরিচ্ছন্নতা দূর করে একটি পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেন সবার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।’
বাংলাদেশে সম্প্রীতির সুদীর্ঘ ঐতিহ্য বিস্তৃত করে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাব্রতী সংস্থা দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করছে। তারই অংশ হিসেবে দেশের আটটি জেলায় ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা এবং সামাজিক সম্প্রীতি সুরক্ষায় তরুণ স্বেচ্ছাব্রতীদের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় নেতারা সহায়তা করছেন। উল্লিখিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের অন্তর্বর্তী কান্ট্রি ডিরেক্টর প্রশান্ত ত্রিপুরা বলেন, ‘সমাজের বৈচিত্র্যকে রাষ্ট্র ধারণ করতে পারলে সমাজ ও রাষ্ট্রে সম্প্রীতির সৃষ্টি হবে। সহজাতভাবেই জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে এক জোট হয়ে কাজ করার যে বিষয়, আমরা অনেক সময় সেটা হারিয়ে ফেলি। পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সেটি রক্ষা করতে হবে।’
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রক্ষায় মুসলিমদের দায়িত্ব বেশি উল্লেখ করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মুহাম্মদ রফিক-উল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি ধর্মের মূল বাণী হলো সম্প্রীতি, শান্তি ও ভালোবাসা। এই শান্তি ও অধিকারের কথা ছড়িয়ে দিতে হবে। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া আমাদের কর্তব্য। সামাজিক সংহতি তৈরি ও বাধা দূর করতে ইমাম ও ধর্মীয় নেতাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
এজেন্টস অব চেঞ্জ প্রকল্পের পরিচালক (অপারেশনস) ও চার্চ অব ইংল্যান্ডের পলিসি অ্যাডভাইজার চার্লস রীড বলেন, ‘রাজনীতি, ধর্ম এবং জাতীয়তার ভিত্তিতে আমাদের মধ্য অনেক বিভেদ চলে এসেছে। সে সবের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এই কাজের গুরুত্ব অনেক বেশি। বাংলাদেশ এখন ক্রান্তিকাল পার করছে।’
আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক স্বরূপানন্দ ভিক্ষু, জেসাস কল চার্চ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান রেভারেন্ড ডেভিড বৈদ্য, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু সমাজসংস্কার সমিতির যুগ্ম সম্পাদক বিমল চন্দ্র চক্রবর্তী, আহমদিয়া মুসলিম জামাতের এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্সের ডিরেক্টর আহমেদ তাবসির চৌধুরী এবং আটটি জেলা থেকে আগত বিভিন্ন ধর্মীয় নেতৃত্ব, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং তরুণদের প্রতিনিধিরা।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নেগেটিভ ইক্যুইটি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার সময় বাড়াল বিএসইসি
পুঁজিবাজারে মার্জিন হিসাবে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির ওপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুনের মধ্যে কমিশনে জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে অনেক বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান। তাই এ সময়সীমা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) অনুষ্ঠিত ৯৬৫তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিএসইসি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নেগেটিভ ইক্যুইটি বা আনরিয়েলাইজড লসের উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ ৩০ জুন, ২০২৫ এর মধ্যে কমিশনে জমা প্রদানের শর্ত সাপেক্ষে স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্টব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে আনরিয়েলাইজড লস বা সৃষ্ট নেগেটিভ ইক্যুইটির উপর প্রভিশন সংরক্ষণের সময়সীমা ডিসেম্বর ৩১, ২০২৫ পর্যন্ত বর্ধিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন।
আরো পড়ুন:
৭ ব্যাংকের অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ
ক্যাপিটেক গ্রামীণ ব্যাংক গ্রোথ ফান্ডের লভ্যাংশ ঘোষণা
ওই সময়সীমার মধ্যে শর্ত পরিপালনে অনেকে ব্যর্থ হওয়ায় এবং ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) এর অনুরোধের প্রেক্ষিতে কর্মপরিকল্পনা জমা দানের বিষয়ে আজকের কমিশন সভায় নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়:
* গ্রাহকের মার্জিন অ্যাকাউন্টে নেগেটিভ ইক্যুইটির বিপরীতে এবং স্টক ব্রোকারদের ডিলার অ্যাকাউন্ট ও মার্চেন্ট ব্যাংকারের নিজস্ব পোর্টফলিওতে আনরিয়েলাইজড লসের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের একটি সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য কর্ম পরিকল্পনা প্রস্তুত করে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনসহ কমিশনে জমা দেয়ার জন্য স্টক ব্রোকার এবং মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজারদের ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত সময় প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
* পূর্বে যারা বোর্ড অনুমোদন ব্যতিত কর্মপরিকল্পনা দাখিল করেছেন, সেসকল বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখের মধ্যে পুনরায় বোর্ড অনুমোদনসহ কর্মপরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করতে হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ঢাকা/এনটি/ফিরোজ