অবিলম্বে মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, ছিনিমিনি খেলা চলবে না: আবদুল মঈন খান
Published: 17th, February 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেছেন, ‘দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে অবিলম্বে। এটা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলবে না। মানুষ ভোট দিতে চায়।’
আজ সোমবার বিকেলে টাঙ্গাইলে জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মঈন খান এসব কথা বলেন। নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো ও দ্রুত নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ বিভিন্ন দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের মানুষের রক্তে গণতন্ত্র রয়েছে উল্লেখ করে সমাবেশে মঈন খান বলেন, ‘আমরা আজ থেকে ৫৩–৫৪ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম কেন? কেন আমরা পাকিস্তান থেকে বের হয়ে এসেছিলাম কেন? গণতন্ত্রের জন্য। যদি সেই গণতন্ত্র না থাকে, তাহলে সেই স্বাধীনতা মূল্যহীন হয়ে যাবে। কাজেই আমরা সেই ভোটাধিকার ফিরে পেতে চাই।’
আরও পড়ুনষড়যন্ত্রকারীরা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন চান: আবদুল আউয়াল মিন্টু১ ঘণ্টা আগেসমাবেশে আসা নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে আবদুল মঈন খান প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আপনারা কি ভোট না দিয়ে সংস্কার নিয়ে ডক্টরেট গবেষণা করবেন বছরের পর বছর ধরে, সেটা চান?’ তখন জনতা হাত তুলে ‘না না’ উচ্চারণ করেন। এ সময় মঈন খান বলেন, ‘আমরা ভোট দিতে চাই। সংস্কারের গবেষণা নিয়ে ছয় মাস, ছয় বছর কাটাতে চাই না। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের কথা।’
মঈন খান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ এই অন্তর্বর্তী সরকারকে সাদর সম্ভাষণ করে দেশে এনেছে। একটি গুরুদায়িত্ব দিয়েছে, তাদেরকে একটি ম্যান্ডেট দিয়েছে। সেই ম্যান্ডেটটি কী? স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ থেকে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তর করতে হবে। এই ম্যান্ডেট বাংলাদেশের মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারকে দিয়েছে। আমরা অনুরোধ করব, এই অন্তর্বর্তী সরকার যেন তাদের সে গুরুদায়িত্বের প্রতি সজাগ হয়ে জনগণের যে প্রত্যাশা, তা অবিলম্বে পূরণ করে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করে বাংলাদেশে পুনরায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে।’
আরও পড়ুনবাংলাদেশে আর কোনো দিন নিশিরাতের ভোট হবে না: জহির উদ্দিন স্বপন৩ ঘণ্টা আগেটাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন (টুকু), শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক কাজী সাইয়েদুল আলম, সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ, সহসাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক সাঈদ সোহরাব, নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম ওবায়দুল হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল।
বেলা সাড়ে তিনটায় সমাবেশে শুরু হলেও দুপুরের আগে থেকেই বিএনপিসহ এর বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন। দুপুরের মধ্যে সমাবেশস্থল পূর্ণ হয়ে যায়। সেখানে জাতীয়তাবাদী সামাজিক, সাংস্কৃতিক দলের (জাসাস) শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন।
আরও পড়ুনসংস্কারের নামে আর অযথা সময়ক্ষেপণ চায় না বিএনপি: এমরান সালেহ প্রিন্স১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণতন ত র ব এনপ র মঈন খ ন আবদ ল
এছাড়াও পড়ুন:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যেভাবে সুষ্ঠু ভোটে বাধা হতে পারে
বাংলাদেশের মতো একটি উন্নয়নশীল দেশে, যেখানে নির্বাচনপ্রক্রিয়া নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেখানে এআইয়ের (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহার এক নতুন ধরনের হুমকি নিয়ে এসেছে। এটি শুধু প্রচলিত কারচুপির পদ্ধতিগুলোকেই আরও সফিসটিকেটেড বা কৌশলী করে তুলবে না; বরং আমাদের গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি যে জনগণের বিশ্বাস, সেটিই নষ্ট করে দিতে পারে।
নির্বাচনে এআইয়ের প্রভাব কোনো কাল্পনিক গল্প নয়, এটি একটি বাস্তব ঝুঁকি। এআই-চালিত টুলগুলো ব্যবহার করে রাজনৈতিক নেতা বা কর্মকর্তাদের অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য ‘ডিপফেক’ (ভুয়া অডিও, ভিডিও এবং ছবি) তৈরি করা সম্ভব।
এই ডিপফেকগুলো সহজেই মিথ্যা কেলেঙ্কারি ছড়াতে পারে, যা ভোটারদের বিভ্রান্ত করে তাঁদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এআই-চালিত বটগুলো সেকেন্ডের মধ্যে এমন সব মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারে, যা একটি রাজনৈতিক দলের জন্য ব্যাপক জনসমর্থনে বা বিরোধিতায় ভূমিকা রাখতে পারে।
যখন জনগণ দেখতে পাবে, তারা যা দেখছে বা শুনছে, তার মধ্যে কোনটা আসল আর কোনটা নকল, তা বোঝা কঠিন, তখন স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে সংবাদমাধ্যম, নির্বাচন কর্তৃপক্ষ এবং পুরো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বিষয়ে সন্দেহ ঢুকে যাবে। এটি একটি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি।
এআই অ্যালগরিদমগুলো বিশাল পরিমাণ ডেটা বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট ভোটারদের লক্ষ করে তাদের ব্যক্তিগত আগ্রহ ও দুর্বলতা অনুযায়ী রাজনৈতিক বার্তা পাঠাতে পারে। এই ‘মাইক্রো টার্গেটিং’-এর মাধ্যমে ভোটারদের মনোভাবকে প্রভাবিত করা বা নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে ভোটদানের সময় বা স্থান সম্পর্কে ভুল তথ্য ছড়িয়ে দিয়ে তাদের ভোটদান থেকে বিরত রাখাও সম্ভব।
আমাদের গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে হলে এই নতুন প্রযুক্তির ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবেএআই শুধু মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি নির্বাচনী পরিকাঠামোর ওপর সাইবার হামলাও জোরদার করতে পারে। এআই-চালিত টুলগুলো আরও সফিসটিকেটেড ফিশিং আক্রমণ তৈরি করে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে বা এমন ম্যালওয়্যার তৈরি করতে পারে, যা প্রচলিত নিরাপত্তাব্যবস্থা এড়িয়ে যেতে সক্ষম। এ ধরনের আক্রমণ ভোটার ডেটাবেজ বা ভোটিং মেশিনকে লক্ষ্য করে করা যেতে পারে। সেটি নির্বাচনের ফলাফল পরিবর্তন বা পুরো প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিপত্তির সমাধান কী? এ প্রশ্নের জবাব হিসেবে প্রথমেই মনে রাখা দরকার, এই গুরুতর চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় একটি সমন্বিত ও কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। এখানে এক্সপ্লেইনেবল এআই (এক্সএআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এআই মডেলের সিদ্ধান্তগুলো মানুষের কাছে বোধগম্য করে তোলে এক্সএআই। এটি এআইয়ের স্বচ্ছতা বাড়ায়।
ডিপফেক শনাক্তকরণ: এক্সএআই ব্যবহার করে এমন টুল তৈরি করা সম্ভব, যা কেবল ডিপফেক শনাক্ত করে না; বরং কেন একটি বিষয়বস্তু জাল বলে চিহ্নিত হয়েছে, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যাও দেয়। এর ফলে মানব ফ্যাক্ট-চেকাররা বিশ্লেষণ যাচাই করতে পারেন এবং জনগণের আস্থা তৈরি হয়।
প্রচারণার নিরীক্ষা: এক্সএআই রাজনৈতিক প্রচারণায় এআই ব্যবহারের নিরীক্ষা করতে পারে। এটি বিশ্লেষণ করে দেখাতে পারে, কীভাবে একটি অ্যালগরিদম তার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা পক্ষপাতদুষ্ট বা কারসাজিমূলক টার্গেটিং কৌশলগুলো প্রকাশ করতে সাহায্য করে।
নিরাপত্তা বৃদ্ধি: সাইবার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক্সএআই হুমকির শনাক্তকরণ সিস্টেমকে উন্নত করতে পারে। এটি ব্যাখ্যা করতে পারে, কেন একটি নির্দিষ্ট কার্যকলাপকে ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়া নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের দ্রুত এবং কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে সাহায্য করে।
অংশগ্রহণকারীদের করণীয়: এআইয়ের হুমকি মোকাবিলায় সব গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারীকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। প্রথমত, রাজনৈতিক দলগুলো এবং নেতাদের প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, তাঁরা প্রতারণামূলক এআই জেনারেটেড কনটেন্ট বা ভুল তথ্য ছড়ানোর প্রচারে জড়িত হবেন না। তাঁদের উচিত এআইয়ের যেকোনো বৈধ ব্যবহার সম্পর্কে স্বচ্ছ থাকা এবং এআই জেনারেটেড কনটেন্টে সুস্পষ্ট লেবেল ব্যবহার করা। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক প্রচারে এআই ব্যবহারের বিষয়ে সুস্পষ্ট নিয়ম ও প্রবিধান তৈরি এবং প্রয়োগ করতে হবে। তাদের উচিত এআই-চালিত টুলগুলোতে বিনিয়োগ করা এবং ভোটারদের সচেতন করার জন্য বড় আকারের প্রচার চালানো।
এ ছাড়া একটি যৌথ গবেষণা ও উন্নয়ন দল গঠন করা প্রয়োজন, যারা নির্বাচনের আগপর্যন্ত কমিশনকে এআই এবং সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা দেবে। তৃতীয়ত, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, সংবাদমাধ্যম এবং সুশীল সমাজকে এআইয়ের হুমকি সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তা দ্রুত মোকাবিলা করার জন্য একটি সুস্পষ্ট প্রটোকল স্থাপন করা জরুরি। সংবাদমাধ্যম এবং সুশীল সমাজের উচিত ফ্যাক্ট-চেকিং এবং জনগণের মধ্যে মিডিয়া লিটারেসি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।
আমাদের গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত রাখতে হলে এই নতুন প্রযুক্তির ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে। এআইয়ের ক্ষমতা যেমন বিশাল, তেমনি এর অপব্যবহারের বিপদও কম নয়।
জনগণের বিশ্বাস এবং একটি ন্যায্য নির্বাচনের অধিকার নিশ্চিত করতে এখনই আমাদের সবাইকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো, বাংলাদেশ সরকারের একটি সম্মিলিত গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএনডি) দল গঠন করা। এই বিশেষজ্ঞ দল এআই-সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলো ক্রমাগত বিশ্লেষণ ও অনুমান করবে এবং দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করবে।
অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন এআইয়ের সাবেক অধ্যাপক, যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজে অবস্থিত এআরআইটিআইয়ের সাবেক পরিচালক