যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান চলাচল প্রশাসনের (এফএএ) কর্মী ছাঁটাই কার্যক্রম শুরু করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এ জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের সরকারের দক্ষতা বৃদ্ধিসংক্রান্ত বিভাগের (ডিওজিই) সদস্যরা এফএএর সদর দপ্তরে যাচ্ছেন।

গত রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে মার্কিন পরিবহনমন্ত্রী সোন ডাফি বলেছিলেন, ‘ডিওজিই কর্মীরা এফএএ সদর দপ্তরে যাবেন। তাঁরা সেখান থেকে বর্তমান ব্যবস্থার প্রাথমিক তথ্য নেবেন, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রকেরা বর্তমান নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার কোনটি পছন্দ আর কোনটি অপছন্দ করেন, সে সম্পর্কে জানবেন এবং কীভাবে আমরা একে নতুন, আরও ভালো ও উন্নত এবং নিরাপদ ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি, তা ভেবে দেখবেন।’

এবারের নির্বাচনী প্রচারের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকারি ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভোটে জয়ের পর প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজে নেমে পড়েন তিনি। সরকারি ব্যয় হ্রাস কার্যক্রম পরিচালনার জন্য গঠন করেন ডিওজিই। দপ্তরটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ককে।

অভিযোগ উঠেছে, ডিওজিইর কর্মকর্তারা সরকারি তথ্যভান্ডারে প্রবেশ করছেন এবং বিতর্কিত উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীসংখ্যা কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন।

এফএএ থেকে যাঁদের ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাঁদের মধ্যে শতাধিক সদ্য নিয়োগ পাওয়া কর্মী রয়েছেন বলে জানা গেছে। অথচ কর্মীদের ওপর কাজের অতিরিক্ত ভার কমিয়ে আনতে সম্প্রতি এফএএ কর্তৃপক্ষ নতুন কর্মী নিয়োগ দিয়েছিল।

বেশ কয়েক বছর ধরেই এফএএ কর্মীদের ওপর কাজের অতিরিক্ত চাপ এবং বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেম) দীর্ঘস্থায়ী কর্মী–সংকটে পড়তে চলেছে বলে প্রতিষ্ঠানটির ভেতর থেকে সতর্ক করা হচ্ছিল।

আরও পড়ুনআরও প্রায় ১০ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করলেন ট্রাম্প ও মাস্ক১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কর্মী ছাঁটাইপ্রক্রিয়া নিয়ে শনিবার একটি বিবৃতি দিয়েছে প্রফেশনাল এভিয়েশন সেফটি স্পেশালিস্ট (পিএএসএস) ইউনিয়ন। এতে বলা হয়েছে, ‘কর্মদক্ষতা বা আচরণের ওপর ভিত্তি করে বা কোনো কারণ দেখিয়ে এভাবে প্রশাসন এফএএর প্রবেশনারি কর্মীদের ছাঁটাইয়ের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে আমরা উদ্বিগ্ন ও হতাশ।’

কর্মী ছাঁটাইয়ের নোটিশ এফএএর নিজস্ব সরকারি যোগাযোগব্যবস্থায় নয় বরং তার বাইরের কোথাও থেকে আসতে পারে বলেও ওই বিবৃতিতে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।

ই–মেইলে থাকা তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডের তথ্য জমা রাখতে ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এফএএর নিজস্ব যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন এমন একটি সময়ে এফএএ থেকে কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক বিমান পরিবহনব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

আরও পড়ুনট্রাম্পের স্বেচ্ছা পদত্যাগ কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন ৭৫ হাজার সরকারি কর্মী১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মাত্র সপ্তাহ তিনেক আগে গত ২৯ জানুয়ারি রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির রোনাল্ড রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল বিমানবন্দরের কাছে মাঝ আকাশে একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের সঙ্গে একটি সামরিক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ হয়। দুটি আকাশযানই বিধ্বস্ত হয়ে সব আরোহী প্রাণ হারান। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৬৪ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ৩ জন সেনাসদস্য।

পরে তদন্তে জানা যায়, ব্যস্ততম ওই বিমানবন্দরে দুর্ঘটনার দিন একজন মাত্র কন্ট্রোলার বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার উভয় ধরনের আকাশযানের ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। ওই দুর্ঘটনা নিয়ে তদন্ত এখনো শেষ হয়নি।

এফএএ প্রতিদিন গড়ে ৪৫ হাজার ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে।

পিএএসএস ইউনিয়ন কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে বলেছে, কঠোর এই ব্যবস্থা কর্মীদের ওপর কাজের চাপ আরও বাড়াবে এবং আগে থেকেই কাজের চাপে পিষ্ট কর্মীদের ওপর নতুন দায়িত্ব পড়বে।

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কর্মচারীদের স্বেচ্ছায় পদত্যাগ নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাব স্থগিত করলেন আদালত০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে মাঝ আকাশে উড়োজাহাজ-হেলিকপ্টার সংঘর্ষ ৩০ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর ম দ র ওপর ব যবস থ র কর ম সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে: সলিমুল্লাহ খান

লেখক ও অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, আমাদের বুকে হাত দিয়ে স্বীকার করতে হবে, পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। পুলিশের যে পজিশনে থাকার কথা ছিল সে পজিশনে নেই। পুলিশ যেই আইনে চলে সেখানে পদে পদে সমস্যা আছে। এসব বিষের মাঝেমধ্যে আলোচনা করা উচিত এবং খোলাখুলি আলোচনা হওয়া উচিত।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, পুলিশ শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ নয়, সমাজেরও অংশ। পুলিশের সঙ্গে জনতার বিভক্তির মূলে যেতে হবে, এটা হলো জনতার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভক্তি। আর এই সমস্যার সমাধান হলো গণতন্ত্র।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক আইজিপি আব্দুল কায়ুম বলেন, এত বড় একটা পরিবর্তন হয়ে গেল, একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল; ছাত্র-জনতা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছে, তারা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায়। একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতার পর। কিন্তু সঠিকভাবে আমরা এগোতে পারিনি, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এই যে একটা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক স্বপ্ন, এই স্বপ্ন যেন ব্যর্থ না হয়। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ থেকে ২৪ পর্যন্ত আমরা যা দেখলাম, তা কল্পনা করা যায় না। আগেও গণতন্ত্র ছিল না, কিন্তু আমরা সেবা দিতে পেরেছি। তবে গত ১৫ বছরের মতো আমরা দারোয়ানে পরিণত হইনি। গণতন্ত্র থাকলে যে সুবিধাটা হয়, সেটা হলো, পাঁচ বছর পর আপনাকে ভোটারদের কাছে যেতে হবে এবং মেন্ডেট নিতে হবে আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন না। ২০০৯ সালের নির্বাচন যে খুব নিখুঁত হয়েছে, তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব না। তার পরবর্তী তিনটা নির্বাচনে যা হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। যখন একচ্ছত্র ক্ষমতা এসে যায় তখন প্রশাসন ভেঙে পড়ে। এটা ভয়, খুন-গুম ও সন্ত্রাস দ্বারা সম্ভব হয়েছে। এ সময়টাতে শুধু এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তা না সব সেক্টরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা অতি উৎসাহিত হয়ে কাজ করেছে।

তিনি বলেন, যা হওয়ার হয়েছে, আমাদের আবার নতুন করে মানুষের সেবা দিতে হবে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং করতে হবে।

সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা পুলিশ সংস্কার কমিশনকে ব্যর্থ উল্লেখ করে বলেন, সংস্কার কমিশন পুলিশের বিষয়ে বলছে, অনেক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার–যদি এই কথা বলা হয়, তাহলে এই সংস্কার কমিশনের কী দরকার। এই পুলিশ কমিশন ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন নিয়ে কিছু বলে না গণ্ডগোল কিন্তু ওইখানেও আছে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি না থাকে তাহলে পুলিশ কীভাবে কাজ করবে। যাদের সুবাদে আমরা আজ কথা বলতে পারছি, সেটা কতদিন বলতে পারবো সেটার কোনও গ্যারান্টি নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর যদি সদিচ্ছা না থাকে তাহলে সম্ভব না।

তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কিন্তু ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার। এটা বদলানো পুলিশের হাতে নাই। পুলিশের অনেক অফিসাররা দুর্নীতিতে জড়িয়েছে।

পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন– নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল হুদা, এপেক্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির মঞ্জু, কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সায়মা চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ