পুলিশ পরিদর্শক মামুন হত্যা মামলার রায় ৫ মার্চ
, ঢাকা  
বাংলাদেশ
ট্যাগ: পুলিশ, হত্যা, অপরাধ
ছবি মিডিয়া গ্যালারি থেকে (পুলিশ পরিদর্শক মামুন এমরান খান ফাইল ছবি)
মেটা:
একসার্প্ট:

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান হত্যা মামলায় যুক্তি–তর্ক শুনানি শেষ হয়েছে। আগামী ৫ মার্চ রায় ঘোষণার তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো.

জাকির হোসেন আজ মঙ্গলবার এ তারিখ ঠিক করেন।

প্রথম আলোকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আজিজুল হক দিদার।

এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে যুক্তি–তর্ক উপস্থাপন করা হয়। অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাঁদের মক্কেলদের নিরপরাধ দাবি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত রায় ঘোষণার তারিখ ঠিক করেন। আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এ হত্যা মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৬ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।

২০১৮ সালের ৮ জুলাই বন্ধু রহমত উল্লাহর সঙ্গে রাজধানীর বনানীর এক বাসায় গিয়ে খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা মামুন। পরদিন গাজীপুরের জঙ্গল থেকে তাঁর আধপোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামুনের বড় ভাই জাহাঙ্গীর আলম খান বাদী হয়ে বনানী থানায় হত্যা মামলা করেছেন।

মামলাটি তদন্ত করে ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ আটজনের নামে অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর এই মামলায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এ মামলার অন্যতম আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। তিনি হত্যাকাণ্ডের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। প্রথমে ভারতে গিয়ে আরাভ খান নামে পাসপোর্ট নিয়ে দুবাইয়ে যান তিনি। সেখানে এখন একজন বড় স্বর্ণ ব্যবসায়ী এই পলাতক আসামি।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন রবিউল ইসলামের স্ত্রী সুরাইয়া, রহমত উল্লাহ (৩৫), স্বপন সরকার (৩৯), দিদার পাঠান (২১), মিজান শেখ (২১), আতিক হাসান (২১) ও সারোয়ার হোসেন (২৩)। আসামিদের মধ্যে রবিউল ও তাঁর স্ত্রী পলাতক রয়েছেন। বাকিরা কারাগারে আছেন।

মামলার অভিযোগপত্র অনুযায়ী, রহমত উল্লাহর সঙ্গে অভিনয়ের সূত্র ধরেই পুলিশ পরিদর্শক মামুন ইমরান খানের পরিচয়। টেলিভিশনে দুজন ক্রাইম ফিকশন অনুষ্ঠানে অভিনয় করতেন। এই সূত্রে তাঁদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাঁদের সঙ্গে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরী অভিনয় করত।

২০১৮ সালের ৮ জুলাই ওই কিশোরী রহমত উল্লাহকে জন্মদিনের দাওয়াত দেয়। রহমত উল্লাহ তখন মামুনকেও জন্মদিনের দাওয়াতে আসার আমন্ত্রণ জানান। সেদিন বনানীর ওই বাসার নিচে আসেন মামুন ও রহমত উল্লাহ। কিশোরী বাসার নিচে নেমে তাঁদের বাসার ভেতরে নিয়ে যায়।

বাসায় গিয়ে দেখেন জন্মদিনের আয়োজনই নেই। মামুন ও রহমত উল্লাহকে খুনিরা বলেন, ‘তোরা কারা, এখানে কেন এসেছিস?’ তখন মামুন পুলিশ পরিচয় দিলে খুনিরা তাঁর ঘাড়ে আঘাত করেন। তাঁর হাত-পা বেঁধে ফেলেন। রাত ১২টার দিকে খুনিরা বুঝতে পারেন, মামুন মারা গেছেন।

আরও পড়ুনআঙুল কেটে খুনিরা নিশ্চিত হয় পুলিশ কর্মকর্তা মৃত১১ এপ্রিল ২০১৯

মামুন মারা যাওয়ার পর রহমত উল্লাহ সবাইকে বলেন, লাশ গুম না করলে তাঁরা সবাই বিপদে পড়ে যাবেন। কারণ, মামুন তাঁর বন্ধু। তিনি মামুনকে ফোন করে সেখানে ডেকে এনেছেন। রহমত উল্লাহর মুঠোফোনের শেষ কলটিও তাঁর (মামুন)। তখন স্বপন মুঠোফোনে রবিউলকে মামুনের মৃত্যুর বিষয়টি জানান। স্বপন বলেন, ‘এখন আমরা কী করব? আপনি সকালে এখানে আসেন।’

পরে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে দুটি বস্তা ও একটি সাদা কাপড় নিয়ে বাসার নিচে আসেন রবিউল। রহমত উল্লাহ, আতিক ও মিজানকে সঙ্গে নিয়ে বাসার নিচে গিয়ে তাঁর ব্যবহৃত প্রাইভেট কারটি লিফটের দরজার কাছে নিয়ে রাখেন। সকাল সাতটার দিকে স্বপন, দিদার ও আতিক মিলে মামুনের লাশ লিফটে করে নিচে নামান। সবাই মিলে গাড়ির পেছনের অংশে লাশ তোলেন। পরে রহমত উল্লাহ ওই গাড়ি চালিয়ে বনানীর রোডে যান। গাড়িতে ছিলেন দিদার, স্বপন ও আতিক।

আরও পড়ুনআরাভের আনা বস্তায় ভরে পোড়ানো হয় পুলিশ কর্মকর্তা মামুনের লাশ১৮ মার্চ ২০২৩

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বপন

এছাড়াও পড়ুন:

ফেলনা জিনিসের পণ্য রপ্তানি করে সাফল্য রহমতুল ইসলামের

কয়েক বছর আগেও পেঁপেগাছের ডালপালা বা নল ছিল ফেলনা। কাঁচা বা পাকা পেঁপে সংগ্রহের পর ছেঁটে দেওয়া ডালপালা পড়ে থাকত বাগানে। ফেলে দেওয়া এই ডাল এখন মূল্যবান রপ্তানি পণ্য। শুধু পেঁপের নলই নয়, আমগাছ ও নিমগাছের ফেলে দেওয়া চিকন ডাল, পাটচুন ঘাস, নীলকণ্ঠ ফুলের মতো ফেলনা জিনিস দিয়ে তৈরি হচ্ছে পোষা প্রাণীর খাবার ও খেলনা। এসব বিশেষায়িত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রাও।

ফেলনা জিনিসকে রপ্তানি পণ্য বানানোর পথ দেখিয়েছেন দেশেরই একজন উদ্যোক্তা। এই উদ্যোক্তা হলেন রহমতুল ইসলাম। পোষা প্রাণীর খাবার ও খেলনা তৈরির জন্য মাগুরার প্রত্যন্ত গ্রাম জাগলায় কারখানা গড়ে তুলেছেন তিনি। সেখানে এসব পণ্য তৈরি করছেন গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীরা। বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড নামের এই কারখানায় প্রত্যক্ষ–পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০০ জনের।

গ্রামের এই ব্যতিক্রমী কারখানা দেখতে নিয়মিতই আসছেন বিদেশি ক্রেতারা। সংখ্যা কত হবে? রহমতুল ইসলাম জানালেন, গত আট বছরে কারখানা দেখতে আসা বিদেশি প্রতিনিধিদলের সংখ্যা চার শ জনের কম হবে না। মুঠোফোনে কথা বলার সময় তিনি জানালেন, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে একটি ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদল এখন তাঁর কারখানা ঘুরে দেখছে।

যেভাবে শুরু

মাগুরার সন্তান রহমতুল ইসলাম উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে পড়াশোনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা শুরু করেন। একসময় যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাপানে থিতু হন। তবে নিজের এলাকায় ব্যতিক্রমী কিছু করার তাড়না থেকে যায়। শুরুতে পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রাণীর খাবার ও খেলনা তৈরির চিন্তা মাথায় আসে। এরপর দেশে ফিরে ২০১৮ সালে মাগুরার জাগলা গ্রামে চার–পাঁচজন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেন। পোষা প্রাণীর দুই ধরনের খেলনা তৈরির মাধ্যমে শুরু হয় কারখানার কর্মযজ্ঞ। ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে জাপানে প্রথমবারের মতো তিন হাজার মার্কিন ডলারের পোষা প্রাণীর খেলনা রপ্তানি করে প্রতিষ্ঠানটি।

চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধীরে ধীরে রপ্তানিও বাড়তে থাকে। প্রয়োজন পড়ে নতুন কর্মীর। কিন্ত তাঁদের দক্ষ করে তোলার জন্য দরকার প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হয় কারখানায়। কর্মী হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হয় সুবিধাবঞ্চিত নারীদের। কর্মযজ্ঞ বৃদ্ধির পর জাপান ও সিঙ্গাপুরের দুটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করে এই কারখানায়। প্রায় ২০ একর জমিতে কারখানার পাশাপাশি খাবার ও খেলনা তৈরির কাঁচামালের জন্য ঘাস ও গাছ রোপণ করেন তিনি। চাহিদা পূরণ না হওয়ায় এখন কাঁচামাল সরবরাহের জন্য প্রচারণাও শুরু করেছেন। ফেলনা জিনিস এনে বিক্রি করলেই নগদ টাকা দেওয়া হয়। এমন উদ্যোগে গ্রামের লোকজন ফেলনা জিনিস কুড়িয়ে বিক্রি করতে শুরু করেন কারখানায়। এমন সরবরাহকারীর সংখ্যাও এখন প্রায় ১০০।

পেঁপের নল, গাছের চিকন ডাল ও নানা রকমের ঘাস থেকে পোষা প্রাণির খাবার ও খেলনা তৈরি করছে মাগুরার বোল্ড পার্টনারস লিমিটেড। এসব পণ্য রপ্তানি হচ্ছে বিদেশে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফেলনা জিনিসের পণ্য রপ্তানি করে সাফল্য রহমতুল ইসলামের