দর্শনার কেরুতে শ্রমিকদের নির্বাচন ঘিরে অস্থিরতা
Published: 18th, February 2025 GMT
শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নির্বাচন ঘিরে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানিতে চলছে অস্থিরতা। ভোটের তপশিল ঘোষণার ঠিক আগ মুহূর্তে সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক এক প্রার্থীকে পঞ্চগড়ে বদলির ঘটনায় কারখানায় দেখা দেয় অসন্তোষ। প্রশাসন তপশিল ঘোষণা থেকে পিছু হটলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক মনে হলেও চাপা উত্তেজনা রয়ে গেছে। এর মধ্যেই তিন দিনে ছয়টি বোমা উদ্ধারের ঘটনায় কারখানায় নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
তপশিল ঘোষণার দিন সম্ভাব্য প্রার্থীকে বদলি, তপশিল স্থগিত ও পরে বোমা উদ্ধারের ঘটনা একই সুতোয় গাঁথা বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিক নেতারা। সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে শ্রমিক, কর্মচারী ও কারখানা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
শ্রমিকরা জানান, কেরু লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন কবজায় রাখতে চায় সব পক্ষ। কোটি কোটি টাকা ওড়ে এখানে। তাই ইউনিয়নের কর্তৃত্ব হাতছাড়া করতে চায় না কেউ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের পুরোটাই স্থানীয় এমপি আলী আজগার টগর ও তাঁর অনুগতদের নিয়ন্ত্রণে ছিল কারখানা। হাসিনা সরকারের পতনের পর ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে নতুন করে বিভাজন শুরু হয়। দলাদলির জের ধরেই এসব ঘটনা ঘটছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
ঘটনার শুরু ওয়্যার হাউসের ইনচার্জ সৌমিক হাসান রুপম নামে এক কর্মচারীকে বদলির পর। এই রুপম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের আসন্ন নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হতে চান। তাঁর বাবাও দীর্ঘদিন এই কারখানার শ্রমিক নেতা ছিলেন।
সাধারণ সভার পর নির্বাচনী বোর্ড গঠন করা হয় ২৫ জানুয়ারি। নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার কথা ছিল গত ৬ ফেব্রুয়ারি। ১৬ ফেব্রুয়ারি ছিল ভোটের দিন। তপশিল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে পঞ্চগড় চিনিকলে বদলি করা হয় রুপমকে। এর পর বিষয়টি জানাজানি হলে বদলি আদেশ প্রত্যাহারের জন্য আন্দোলনে নামে রুপমের অনুসারীরা। এক পর্যায়ে রুপম পঞ্চগড়ে যোগ দেন।
শ্রমিকরা জানান, রুপমের বাবা মাসুদুর রহমান সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। চাকরি শেষ হওয়ায় ছেলেকে প্রার্থী ঘোষণা করেন তিনি। বাবা-ছেলে দু’জনই সাবেক এমপি টগরের অনুগত। নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই রুপমকে ষড়যন্ত্র করে চুয়াডাঙ্গা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন তাঁর অনুসারীরা।
রুপম দাবি করেন, জনপ্রিয়তার কারণে এবং নির্বাচন ধেকে বিরত রাখতেই ষড়যন্ত্র করে হঠাৎ আমাকে বদলি করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, এবারের নির্বাচনে সভাপতি পদে দু’জন এবং সাধারণ সম্পাদক পদে তিন প্রার্থী ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল। সম্ভাব্য সভাপতি প্রার্থী তৈয়ব আলী ও বর্তমান সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ। আর রুপমের পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হওয়ার কথা জয়নাল আবেদিন নফর ও হাফিজুর রহমানের। তারা সবাই আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি টগরের অনুগত। রুপমের বাবার সঙ্গে বিরোধ আছে তৈয়ব আলীসহ কয়েকজনের।
শ্রমিক নেতারা জানান, কেরুতে ইউনিয়ন যাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে, তারাই কারখানার হর্তাকর্তা বনে যান। দু’বছরের জন্য নির্বাচিত হওয়ার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করেন। একবার নির্বাচিত হলে কারখানার বদলি তদবির, নিয়োগ বাণিজ্য, মৌসুমি শ্রমিক নিয়োগ, যাবতীয় কেনাকাটা, ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ, চিনি থেকে শুরু করে মদ বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান নেতারা।
শ্রমিক-কর্মচারীর রয়েছে একাধিক গ্রুপ। দুটি গ্রুপ নির্বাচন চাইলেও ছোট একটি পক্ষ চাইছে না। একই সঙ্গে দেশে কোনো রাজনৈতিক সরকার না থাকায় কারখানা কর্তৃপক্ষও ভেতরে ভেতরে নির্বাচনবিরোধী। কারখানাকে ইউনিয়ন নেতাদের আধিপত্য থেকে মুক্ত রাখতে কৌশল নিয়েছে প্রশাসনের কেউ কেউ। কয়েকজন শ্রমিক নেতাও হাত মিলিয়ে নির্বাচন বানচাল করতে চাইছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী।
তারা মনে করেন, কেরুর ইতিহাসে যা ঘটেনি এবার তা ঘটছে। বোমা উদ্ধারের মতো ঘটনা যার প্রমাণ। আবার আওয়ামী লীগ অনুসারীরা যাতে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইউনিয়নে না আসতে পারে, সেই চেষ্টাও চলছে বলে মনে করেন কেউ কেউ।
সম্ভাব্য সভাপতি প্রার্থী তৈয়ব আলী বলেন, কেরুর সংবিধান অনুযায়ী জরুরি অবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়া নির্বাচন দেরি করার সুযোগ নেই।
গত রোববার কারখানা থেকে চারটি বোমা উদ্ধার হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতি ও শনিবার কেরু অ্যান্ড কোম্পানির জেনারেল অফিস-সংলগ্ন স্থানে একই ধরনের দুটি বোমা উদ্ধার করা হয়।
এ ব্যাপারে দর্শনার কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.
দর্শনা থানার ওসি মুহাম্মদ শহীদ তিতুমীর বলেন, তিন দিনে ছয়টি বোমা উদ্ধার হয়েছে। এ ঘটনার পেছনে কোনো একটি স্বার্থান্বেষী মহল কাজ করছে বলে ধারণা করছি। কারা এ কাজ করছে, খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বিলাসবহুল প্রমোদতরিতে খুন, এরপর...
গল্প যখন জাহাজের রহস্যময় খুন, তখন সবার আগে মাথায় আসে ১৯৭৮ সালের ‘ডেথ অন দ্য নাইল’-এর কথা। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য লাস্ট অব শিলা’ সিনেমাটিও এগিয়ে থাকবে এদিক দিয়ে।
তবে রুথ ওয়ারের উপন্যাসভক্তদের জন্য নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া সিনেমাটি হতে পারত এমনই এক অভিজ্ঞতা। রুথের উপন্যাস ‘দ্য ওমেন ইন কেবিন ১০’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নেটফ্লিক্সে এসেছে একই নামের নতুন সিনেমা। তবে সাইমন স্টোন পরিচালিত সিনেমাটির শুরুটা আশা জাগানিয়া হলেও শেষপর্যন্ত রোমাঞ্চ ধরে রাখতে পারেনি।
লন্ডনের এক খ্যাতিমান অনুসন্ধানী সাংবাদিক লরা ব্ল্যাকলক (কিরা নাইটলি)। তিনি একটি হাইপ্রোফাইল অ্যাসাইনমেন্টের কাজ করছিলেন। কিন্তু তাঁর সোর্সকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার জন্য তিনি কাজে ফিরে এসেও ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি হঠাৎই তিন দিনের সমুদ্রযাত্রার আমন্ত্রণ পান। নরওয়েজীয় এক বিলিয়নিয়ার দম্পতি অ্যান লিংস্টাড (লিসা লোভেন কংসলি) ও তাঁর স্বামী রিচার্ডের (গাই পিয়ার্স) দাতব্য সংস্থার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কাভার করার জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানান। কাজ ও ছুটি কাটানোর এমন দারুণ সুযোগ লুফে নেন লরা।
‘দ্য ওমেন ইন কেবিন ১০’ –এর দৃশ্য। নেটফ্লিক্স