‘দম্পতিকে’ কোপানোয় জড়িত পাঁচজনই গ্রেপ্তার, রামদা উদ্ধার
Published: 19th, February 2025 GMT
রাজধানীর উত্তরায় দুই নারী-পুরুষকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলো– সজীব ও মেহেদী হাসান সাইফ। মঙ্গলবার রাত ও বুধবার ভোরে গাজীপুরে এ অভিযান চালানো হয়। এ নিয়ে ওই হামলায় জড়িত পাঁচজনকেই গ্রেপ্তার করা হলো। অভিযানে কোপানোয় ব্যবহৃত দুটি রামদা উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বুধবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার রওনক জাহান বলেন, উত্তরা পশ্চিম থানার একটি দল মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় আব্দুল্লাহপুর পশ্চিম পাড়া থেকে আলফাজ মিয়া ওরফে শিশিরকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার সময় তার পরনে থাকা হালকা জলপাই রংয়ের ফুলহাতা শার্ট জব্দ করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে গাজীপুরের কোনাবাড়ী থেকে সজিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার তথ্য অনুযায়ী মেহেদী হাসান সাঈফকে গাজীপুরের টঙ্গীর মাজার বস্তি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেল ও ঘটনার সময় তার পরনে থাকা শার্ট জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার আলফাজ ও সাইফ দুই নারী–পুরুষকে কুপিয়েছিলেন। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে সকাল ১০টার দিকে তুরাগ নদীর পাড় থেকে ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি রামদা উদ্ধার করা হয়।
এর আগে সোমবার রাতে মোবারক হোসেন ও রবি রায় নামে দুজনকে ঘটনাস্থলেই আটক করে জনতা। পরে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে সোপর্দ করা হয়। মঙ্গলবার তাদের দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গতকাল বাকি তিনজনকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
এজাহারের বর্ণনা থেকে জানা যায়, সোমবার রাত আনুমানিক ৯টার দিকে উত্তরার আমির কমপ্লেক্স থেকে কেনাকাটা সেরে বাসায় ফিরছিলেন মেহেবুল হাসান ও নাসরীন আক্তার ইপ্তি। পথে উত্তরা–৭ নম্বর সেক্টরের ৯ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাসার সামনে পৌঁছলে ঘটনার সূত্রপাত হয়। তখন তিনজন দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে বিকট শব্দ করে এলোমেলোভাবে চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যে একটি মোটরসাইকেল সামনের রিকশাকে ধাক্কা দেয়। রিকশায় মা–বাবার সঙ্গে ছিল চার বছরের এক শিশু। আরোহীদের সঙ্গে মোটরসাইকেল চালকের বাকবিতন্ডা হয়। পেছনে থাকা মেহেবুল ও ইপ্তি মোটরসাইকেল চালককে ‘ঝামেলা’ করতে নিষেধ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা তাদের মারধর শুরু করে। তারা বলতে থাকে, ‘আমাদের চিনিস? আমরা কে?’ একপর্যায়ে ভুক্তভোগী দুজন আশপাশের লোকজনের সহযোগিতায় আক্রমণকারীকে ধরে ফেলেন। তখন তিনি কল করে আরও কয়েক সহযোগীকে ডেকে নিয়ে আসেন। আনুমানিক ১০ মিনিট পর ৪–৫ জন রামদাসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নারী–পুরুষকে কোপাতে শুরু করে। মোবাইল ফোনে ধারণ করা এই ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে শম্পা বেগম নামে এক নারী গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেন, ‘ইভেন্ট ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মেহেবুল হাসান ও নাসরীন আক্তার ইপ্তি স্বামী–স্ত্রী নন। তিনিই (শম্পা) মেহেবুলের প্রকৃত স্ত্রী। ২০১৬ সালে তাদের বিয়ে হয়। তাদের ৫ ও ৪ বছর বয়সী দুটি সন্তানও রয়েছে। ইপ্তির সঙ্গে মেহেবুলের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে।’ তবে তাদের বিয়ে হয়েছে কিনা সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন।
এ ব্যাপারে মেহেবুল ও ইপ্তির বক্তব্য জানতে পারেনি সমকাল। অবশ্য পুলিশ সংবাদ সম্মেলনে তাদের দম্পতি হিসেবেই উল্লেখ করেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর
এছাড়াও পড়ুন:
বিস্ফোরক মামলায় চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ
চট্টগ্রামে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন এ আদেশ দেন।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, কারাগারে থাকা চিন্ময় দাসকে কোতোয়ালি থানার বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে আদালত তা মঞ্জুর করেছেন।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপত্র চিন্ময় দাসের জামিনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের মধ্যে আইনজীবী সাইফুলকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। এ ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা, কাজে বাধা এবং আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের ওপর হামলা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় আরও পাঁচটি মামলা হয়। ৬টি মামলায় গ্রেপ্তার হন ৫১ জন। তাঁদের মধ্যে হত্যায় জড়িত অভিযোগে ২১ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন।
আদালত সূত্র জানায়, সাইফুল হত্যার আসামিদের মধ্যে চন্দন দাস, রিপন দাস ও রাজীব ভট্টাচার্য আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, আইনজীবীর ঘাড়ে বঁটি দিয়ে দুটি কোপ দেন রিপন দাস। আর কিরিচ দিয়ে কোপান চন্দন দাস। পরে রাস্তায় পড়ে থাকা সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা এই আইনজীবীকে লাঠি, বাটাম, ইট, কিরিচ ও বঁটি দিয়ে তাঁরা ১৫ থেকে ২০ জন পিটিয়ে হত্যা করেন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রাম নগরের চান্দগাঁও মোহরা ওয়ার্ড বিএনপির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ খান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননায় রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা করেন। পরে ফিরোজ খানকে বিএনপি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এ মামলায় চিন্ময় দাসকে ২৫ নভেম্বর ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।