ওষুধ বিক্রেতা থেকে শত কোটি টাকার মালিক, বাগাতেন সব পদ-পদবি
Published: 19th, February 2025 GMT
এম এ এইচ মাহবুব আলম। ২০০৮ সালেও গ্রামের একটি ফার্মেসিতে ওষুধ বিক্রি করতেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরও তার নাম তেমন শোনা যায়নি। আলোচনায় আসেন ২০১১ সালে। ওই বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনে অ্যাড. লুৎফুল হাই সাচ্চুর আকস্মিক মৃত্যুতে উপ-নির্বাচনে জয় পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। সদর উপজেলার চিনাইর গ্রামে নিজ এমপির বাড়ি হওয়া যেন ‘সাপে বর’ হয়ে ধরা দেয় মাহবুবের। এরপর আর পেছনে ফিরতে হয়নি। সর্বশেষ ছিলেন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোকতাদির চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী।
ওষুধ বিক্রেতা থেকে মাহবুব আলম বনে যান শত কোটি টাকার মালিক। নিজ গ্রামে রয়েছে চার তলা ডুপ্লেক্স বাড়ি, জেলা শহরের হালদার পাড়ায় দুটি ফ্ল্যাট, ঢাকা ও কুমিল্লায় আছে বাড়ি। এ ছাড়াও, ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাগিয়ে নিয়েছেন জেলা আ.
গত বছর ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আ.লীগ সরকারের পতনের পর স্থানীয় বেশিরভাগ নেতাকর্মী মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। তাদের ভাষ্য, জেলা কমিটিগুলোতে মাহবুব আলমের দৌরাত্ম্যে কোণঠাসা ছিলেন তারা। মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হওয়ার কারণে ভয়ে কিছু বলতেও পারেননি।
আরো পড়ুন:
সিংড়ায় আ.লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ২
আ.লীগের শাসনামলে দেশে কোনো নির্বাচনই হয়নি: দুলু
চিনাইর গ্রামের বৃদ্ধ লুৎফুর রহমান বলেন, ‘‘মাহবুব আলম চিনাইর বাজারে তার বাবার ফার্মেসিতে ২০১০ সালের আগে বসতেন। মোকতাদির চৌধুরী এমপি হওয়ার পর আর ফার্মেসিতে বসেননি।’’
জেলা সৈনিক লীগের আহ্বায়ক ও সাবেক যুবলীগ নেতা জেপি জুম্মান মাহবুবকে ‘বাটপার’ আখ্যা দিয়ে ফেসবুকে লেখেন, মাহবুবের মত বাটপারদের রবিউল ভাই (সাবেক মন্ত্রী) শত শত কোটি টাকার মালিক বানিয়েছেন।
সাবেক জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আওয়ামী আইনজীবী প্যানেলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদুল কবীর তপন বলেন,
‘‘সাবেক গণপূর্তমন্ত্রী তার অনুসারীদের ছাড়া অন্যদের ভিড়তে দিতেন না। আর তার ব্যক্তিগত সহকারী মাহবুব আলমকে দিয়ে জেলার পদ-পদবিসহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন। এসব নিয়ন্ত্রণ করার কারণই ছিল আর্থিক লেনদেন করা। মন্ত্রী ও মাহবুব তাদের লোকদের ছাড়া বাকিদের রাজনীতিতে ‘একঘরে’ করে রাখতেন।’’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মাহবুব আলম জেলার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। তার পরামর্শ ছাড়া সদর-বিজয়নগরের নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) এডিবি তালিকার যত উন্নয়নমূলক কাজ হত, সবকিছুর তালিকা মাহবুব করে দিতেন।
মাহবুব আলমের পদ-পদবি: ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা শিক্ষা কমিটির সদস্য, সদর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক, পরিচালক বাংলাদেশ কো-অপারেটিভ ইনস্যুরেন্স লি., সভাপতি সদর বিআরডিবির, সাবেক গণপূর্ত মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ও মন্ত্রীর অবর্তমানে লিখিত আকারে দেওয়া মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন, কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক লিমিটেড ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চেয়ারম্যান, পৌর ডিগ্রী কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালনা কমিটির সভাপতি, চিনাইর কলেজের পরিচালনা কমিটির সদস্য, রেড ক্রিসেন্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদস্য, চিনাইর দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চট্টগ্রাম বিভাগের চারবারের সেরা বিদ্যোৎসাহী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা যুবলীগের সদস্য, চিনাইর আঞ্জুমানারা হাই স্কুলের সদস্য।
ঢাকা/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ ব র হ মণব ড় য় মন ত র র র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।
শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫