টানা বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর ২১টি স্থানে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম।
বুধবার (৯ জুলাই) রাত পর্যন্ত ছাগলনাইয়া উপজেলার নতুন নতুন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় সাত হাজার মানুষ।
বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে ছাগলনাইয়ার মাটিয়াগোধা, দক্ষিণ সতর, উত্তর সতর, লক্ষ্মীপুর, নিচিন্তা ও কাশিপুরসহ ১০টির বেশি গ্রামে প্রবল স্রোতে পানি ঢুকে পড়ে। রাস্তা-ঘাট ডুবে গিয়ে বন্ধ হয়ে গেছে যান চলাচল। বিপাকে পড়েছেন আরও অন্তত ২০ হাজার মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, পরশুরামের ১২টি এবং ফুলগাজীর ৯টিসহ মোট ২১টি স্থানে বাঁধ ভেঙেছে। এর মধ্যে মুহুরী নদীর ১১টি, কহুয়া নদীর ৬টি এবং সিলোনিয়া নদীর ৪টি অংশে বাঁধ ভাঙনে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।
ছাগলনাইয়ার মহামায়া ইউনিয়নের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, “দুই দশকে উত্তর সতরের নদীকূলের সড়কে কোনো উন্নয়ন হয়নি। প্রতিবছরই পানি ঢুকে পড়ে গ্রাম প্লাবিত হয়। এবার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।”
পাঠাননগরের বাসিন্দা আজগর আলী বলেন, “পরশুরাম-ফুলগাজীর ভাঙন দিয়ে পানি এসে ছাগলনাইয়া প্লাবিত হচ্ছে। পানির চাপ আরও বাড়ছে। বৃষ্টি হলে ফেনী সদরেও পানি ঢুকে পড়তে পারে।”
ফেনী আবহাওয়া অফিস জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত) জেলায় ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃহস্পতিবারও হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, “বন্যাকবলিত চার উপজেলায় ৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু রয়েছে। সেখানে প্রায় সাত হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ছয় উপজেলায় সাড়ে ১৭ লাখ টাকা ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।”
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আক্তার হোসেন মজুমদার বলেন, “রাত ১১টার দিকে নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কিন্তু বাঁধ ভাঙা থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।”
ছাগলনাইয়ার ইউএনও সুবল চাকমা বলেন, “উপজেলায় ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে আমাদের টিম কাজ করছে।”
ফুলগাজীর ঘনিয়ামোড়ার বাসিন্দা হাসান ভূঞা বলেন, “পানি গলা সমান। বিদ্যুৎ নেই, মোবাইল নেটওয়ার্কও কাজ করছে না। এখন পর্যন্ত কোনো সহায়তাও পাইনি।”
ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত হয় ছ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির আরও অবনতি, দুর্ভোগে বাসিন্দারা
নোয়াখালীতে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অতি ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় জেলা শহর মাইজদীতে প্রধান সড়ক ছাড়া অধিকাংশ সড়কেই ডুবে গেছে। পানি ঢুকে পড়েছে অনেক বাসাবাড়িতে। জলমগ্ন হয়ে রয়েছে শহরের বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবারের অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা ও শ্রেণি কার্যক্রম স্থগিত করেছে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ। জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত এর আগের ২৪ ঘণ্টায় মাইজদীতে ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাস অনুযায়ী আরও বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
আজ সকালে সরেজমিনে মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, নোয়াখালী সরকারি কলেজ সড়ক, হাকিম কোয়ার্টার সড়ক, সরকারি আবাসিক এলাকা সড়ক, মাইজদী হাউজিং এলাকা, মাইজদী নতুন হাউজিং, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সড়ক, জেলা জজ আদালত সড়ক ও টাউন হল মোড় এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার বেশির ভাগ সড়ক কমপক্ষে এক থেকে দেড় ফুট পানিতে ডুবে রয়েছে। সড়কের পাশের নালা থেকে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকায়।
সকালে শহরের মোহাম্মদ আবদুর রশিদ উচ্চবিদ্যালয়, লক্ষ্মীনারায়ণপুর পৌর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুলিশ কেজি স্কুল অ্যান্ড কলেজের আঙিনা ও আশপাশের সড়কও জলমগ্ন হয়ে থাকতে দেখা গেছে। আবদুর রশিদ উচ্চবিদ্যালয়–সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা আবদুল জলিল প্রথম আলোকে বলেন, সড়কের পাশে যে ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে, এগুলো কোনোভাবেই বর্ষায় পানি নিষ্কাশনের উপযোগী নয়। অল্প বৃষ্টিতেই ড্রেনগুলো পানির চাপ নিতে পারে না। একটু ভারী বৃষ্টি হলে তো অবস্থা আরও খারাপ।
শহরের টাউন হল মোড় এলাকার ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন জানান, তাঁর দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়া সরকারি আবাসিক এলাকার সড়কটি অল্প বৃষ্টিতে ডুবে যায়। সড়কের পাশে কয়েক বছর আগে একটি ড্রেন নির্মাণ করা হলেও সেটি সড়ক থেকে অন্তত এক ফুট উঁচু। এ কারণে বৃষ্টির পানি সড়কে জমে থাকে। পানি জমে থাকার কারণে দুই দিন ধরে তিনি দোকান বন্ধ রেখেছেন। তিনি বলেন, সড়কটির আশপাশের ৩০ থেকে ৩৫ জন ব্যবসায়ী চলতি বর্ষার শুরু থেকে ঠিকভাবে ব্যবসা করতে পারছেন না। সড়কের পাশে একটি মসজিদ আছে, মসজিদটিতে মুসল্লিরা নামাজ পড়তেও যেতে পারেন না।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর উদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা পরিস্থিতিতে নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে যাওয়ায় জেলার সদর, সুবর্ণচর, কবিরহাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগ উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলোয় আজ ও আগামীকালের চলমান অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। নিজ নিজ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষার কর্মকর্তাদের তথ্যের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিকে জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর, রামপুর ও চর এলাহী ইউনিয়নের ছোট ফেনী নদী ও বামনী নদীর তীরবর্তী এলাকা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া গেছে। মুছাপুর এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ওই এলাকার বেশির ভাগ সড়ক ডুবে গেছে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে অনেক বাড়িঘর ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে লোকজন সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামীম আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, বৃষ্টি বন্ধ নেই। দুই দিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। এতে উপজেলার নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। অনেক রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। কিছু কিছু বাড়িঘর পানিতে প্লাবিত হয়েছে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত উপজেলার প্রায় ৮০টি পরিবারে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও।
জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ আজ সকাল ৯টায় প্রথম আলোকে বলেন, জেলার সার্বিক জলাবদ্ধতা পরিস্থিতি নিয়ে আজ বেলা ১১টায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে এবং পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। জেলা প্রশাসক জানান, জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির কারণে এরই মধ্যে কয়েকটি উপজেলায় মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা দুই দিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আজ নেবেন।