তিনবারের চেষ্টায় বিধায়ক হয়ে কীভাবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হলেন আরএসএসঘনিষ্ঠ রেখা গুপ্ত
Published: 20th, February 2025 GMT
ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে ৫০ বছর বয়সী রেখা গুপ্তকে বেছে নেওয়ার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুঝিয়ে দিলেন, দল পরিচালনা থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো সব ক্ষেত্রে তাঁদের পছন্দই শেষ কথা।
একই সঙ্গে বোঝা গেল উত্তরাখন্ড, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে নীতির যে ধারাবাহিকতা লক্ষণীয়, দিল্লির ক্ষেত্রেও তা বহাল রইল। কোনো রকম বিচ্যুতি ঘটল না।
সেই ধারাবাহিকতা হলো মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এমন একজনকে বেছে নেওয়া, যাঁর স্বকীয়তা বলে কিছুই থাকবে না। যিনি হবেন নিছকই এক দলীয় যন্ত্র, যিনি পরিচালিত হবেন যন্ত্রী মারফত। ১০ বছর ধরে বিজেপির সর্বভারতীয় যন্ত্রী কে বা কারা, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই।
সেই ধারাবাহিকতা মেনেই রেখা গুপ্তর মতো একজনকে বেছে নেওয়া, দিল্লি বিজেপির রাজনীতিতে যিনি পালকের মতো হালকা।
রেখার মা–বাবা ছিলেন হরিয়ানার বাসিন্দা ও শতভাগ অরাজনৈতিক পরিবার। পরবর্তী সময় তাঁরা দিল্লিতে চলে আসেন। বাবা জয় ভগবান জিন্দাল ছিলেন দিল্লির পীতমপুরার স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার শাখা ব্যবস্থাপক। মা গৃহবধূ। দিল্লির দৌলতরাম কলেজে ভর্তি হওয়ার পর রেখা রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) সঙ্গে যুক্ত হন। ছাত্ররাজনীতিতে তাঁর হাতেখড়ি সেখানেই।
১৯৯৪ সালে রেখা সেই কলেজের ছাত্র ইউনিয়নের সম্পাদক এবং দুই বছর পর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৮ সালে বিয়ে করেন। স্বামী মণীশ গুপ্তও অরাজনৈতিক। পিতলের ব্যবসায়ী। বিয়ের ছয় বছর পর রেখা বিজেপির যুব শাখা ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার জাতীয় সম্পাদক নির্বাচিত হন।
বিজেপির সঙ্গে সংশ্রব সেই থেকে অটুট থাকলেও দিল্লির রাজনীতিতে রেখা এমন কিছু প্রভাব ফেলতে পারেননি, যা তাঁকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসতে পারত। তাঁর রাজনৈতিক উত্তরণও ছিল সেই অর্থে তরঙ্গহীন।
২০০৭ সালে দিল্লি পৌরসভার ভোটে পীতমপুরা থেকে দাঁড়িয়ে রেখা বিজেপির টিকিটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ওই কেন্দ্র থেকে পাঁচ বছর পর দ্বিতীয়বারেও তিনি জেতেন। যদিও তার আগেই তিনি ২০০৯ সালে দিল্লি বিজেপির মহিলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হন, পরের বছর সদস্য হন বিজেপির জাতীয় নির্বাহীর। ২০১৪ সালে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে দিল্লি প্রদেশের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বেছে নেয়।
কাউন্সিলর থেকে বিধায়ক পদে উন্নীত হতে রেখা ২০১৫ ও ২০২০ সালে বিধানসভার টিকিট পেয়েছিলেন শালিমার বাগ আসন থেকে। দুবারই হেরে যান আম আদমি পার্টির (আপ) প্রার্থী বন্দনা কুমারীর কাছে। প্রথমবার হারেন ১০ হাজার ৯৭৮ ভোটে, দ্বিতীয়বার ৩ হাজার ৪৪০ ভোটে। এবার তৃতীয়বারের মতো বিজেপি ওই আসন থেকেই তাঁকে প্রার্থী করে। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীও ছিলেন আপের সেই বন্দনা কুমারী। এবার রেখা জেতেন ২৯ হাজার ৫৯৫ ভোটের ব্যবধানে। প্রথমবার বিধায়ক হয়েই লাভ করেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রিত্ব।
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এবার যাঁদের নাম সবচেয়ে বেশি বিবেচিত হচ্ছিল, তাঁদের মধ্যে ছিলেন দিল্লির সাবেক মুখ্যমন্ত্রী সাহেব সিং ভার্মার ছেলে প্রভেশ। এবার তিনি হারিয়েছেন আম আদমি পার্টির সুপ্রিম নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে। তাঁর পাশাপাশি দৌড়ে ছিলেন বিধায়ক বিজেন্দ্র গুপ্ত ও সতীশ উপাধ্যায়। ভোজপুরী নেতা ও দিল্লির সংসদ সদস্য মনোজ তিওয়ারির নামও ভেসে উঠেছিল দিল্লির পূর্বাঞ্চলীয় ভোটারদের কথা মাথায় রেখে। প্রবলভাবে উঠে এসেছিল দিল্লিতে বিজেপির শেষ মুখ্যমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সংসদ সদস্য কন্যা বাঁশুরি স্বরাজের নামও। কিন্তু সবাইকে টেক্কা দিলেন ‘লো প্রোফাইল’ রেখা।
রেখার প্রধান কাজের অন্যতম দিল্লির বাতাস ও যমুনার পানিদূষণ রোধ এবং পানীয় জলের জোগান অব্যাহত রাখা। তিন কাজেই হরিয়ানার সহযোগিতা তাঁর প্রয়োজন। জন্মসূত্রে হরিয়ানার আদি বাসিন্দা রেখার সাফল্যে সেই রাজ্যে গতকাল বুধবার যে উল্লাস দেখা গেছে, তাতে এই দুই সমস্যা সমাধানে তিনি আশান্বিত হতেই পারেন।
রেখা গুপ্ত হলেন সুষমা স্বরাজ, শীলা দীক্ষিত ও আতিশির পর দিল্লির চতুর্থ নারী মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর তিনি দেশের দ্বিতীয় মুখ্যমন্ত্রীও। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী আতিশি। যদিও মুখ্যমন্ত্রিত্বের লড়াইয়ের টানাপোড়েন দেখে তিনি বলেছিলেন, দিল্লিবাসীকে প্রস্তুত থাকতে হবে পাঁচ বছরে তিনজন মুখ্যমন্ত্রী পেতে।
বিজেপির গোষ্ঠী কলহের দিকে ইঙ্গিত করলেও এটা স্পষ্ট, মোদি-শাহ মনোনীত কোনো মুখ্যমন্ত্রীকে ইদানীংকালে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের শিকার হতে হচ্ছে না। রাজস্থানের হেভিওয়েট নেত্রী বসুন্ধরা রাজে পারেননি, মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিং চৌহানও বিদ্রোহের ঝান্ডা না উড়িয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব মেনে নিয়েছেন। উত্তরাখন্ড, ছত্তিশগড়েও কোনো অসন্তোষ নেই। স্পষ্টতই মোদি-শাহর পথ এখনো কুসুমকোমল।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ম খ যমন ত র মন ত র র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’