এমবাপ্পে+ম্যানচেস্টার সিটি= ভালোবাসার গল্প
Published: 20th, February 2025 GMT
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচের তখন ৭৮ মিনিট। গুটি গুটি পায়ে মাঠ ছাড়ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। টাচলাইনের ওপাশে তাঁর বদলি হয়ে নামার অপেক্ষায় ব্রাহিম দিয়াজ। তখনই ম্যাচের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত পুরস্কারটি পেলেন এমবাপ্পে। যে পুরস্কারের লোভ থাকে রিয়ালের সবার, আরেকটু গভীরে তাকালে বলতে হয়, পৃথিবীর সব ফুটবলারই এমন একটা মুহূর্তের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। স্ট্যান্ডিং ওভেশন! মানে, বার্নাব্যুর দর্শক আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখালেন এমবাপ্পেকে।
বার্নাব্যুর দর্শকদের আসন থেকে তোলা, তাঁদের সম্মান আদায় করে নেওয়া মোটেও সহজ কাজ নয়। যেমনটা নয় ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের দর্শকদের কাছ থেকেও একই সম্মান আদায় করে নেওয়া। মনকে ভরিয়ে দেওয়া ফুটবল না খেললে যেমনটা আসলে কোনো ক্লাবের দর্শকদের কাছ থেকেই আদায় করে নেওয়া সম্ভব না। পরিসংখ্যান ঠিক এই জায়গাতেই রিয়ালের কয়েক ‘ভদ্রলোক’কে মিলিয়েছে একই মোহনায়।
চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউটে রিয়ালের হয়ে ‘হ্যাটট্রিকম্যান’দের সবাই মাঠের দর্শকদের কাছ থেকে এই সম্মানটুকু পেয়েছেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে রোনালদো নাজারিও; ভলফসবুর্গ, বায়ার্ন মিউনিখ ও আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো; চেলসি ও পিএসজির বিপক্ষে করিম বেনজেমা এবং কাল রাতে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে এমবাপ্পে। চ্যাম্পিয়নস লিগে রিয়ালের হয়ে তাঁর প্রথম হ্যাটট্রিক।
এমবাপ্পে মাঠের এক প্রান্তে যখন ইতিহাস গড়ছিলেন, তখন সেই গড়ার তোড়ে অন্য প্রান্তে ভাঙনের খেলা চলছিল। ম্যাচ শেষে সিটি কোচ পেপ গার্দিওলার কথায় সেই ইঙ্গিত, ‘কিছুই চিরস্থায়ী নয়।’পার্থক্যটা অন্য জায়গায়। আগের হ্যাটট্রিকগুলোর কোনোটাই যুগসন্ধিক্ষণের নয়, যে সময়টি এখন চলছে সিটিতে। ইংল্যান্ড ও ইউরোপ দাপিয়ে বেড়ানো সিটির রাজত্বের অবসান ঘটানোর সিলমোহর এমবাপ্পের এই হ্যাটট্রিক। রিয়ালে এমবাপ্পে কেন এসেছেন, তার উত্তরও ৬১ মিনিটের মধ্যে ফরাসি তারকার করা গোল তিনটি। এমন সব ম্যাচের জন্যই তো তাঁকে নিয়ে আসা রিয়ালের, আর এমবাপ্পের কাজ হলো এই ম্যাচগুলোর ভাগ্য নির্ধারণ করে বিশ্বসেরার মুকুট পরে রিয়ালের ইতিহাসে চিরস্থায়ী জায়গা নেওয়া।
বার্নাব্যুতে শেষ বাঁশি বাজার পর ঠিক এ কথাটাই বলেছেন এমবাপ্পে, ‘আমি রিয়াল মাদ্রিদে ইতিহাস গড়তে চাই।’
আরও পড়ুনমাইনাস ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মেসির গোলে জিতল মায়ামি৩ ঘণ্টা আগেএমবাপ্পে মাঠের এক প্রান্তে যখন ইতিহাস গড়ছিলেন, তখন সেই গড়ার তোড়ে অন্য প্রান্তে ভাঙনের খেলা চলছিল। ম্যাচ শেষে সিটি কোচ পেপ গার্দিওলার কথায় সেই ইঙ্গিত, ‘কিছুই চিরস্থায়ী নয়।’ অর্থাৎ, কালও যে রাজত্ব টিকে ছিল, আজ তা নাও থাকতে পারে।
অনেকটাই নদীর ভাঙা-গড়ার মতোই। চ্যাম্পিয়নস লিগ নামের সুগভীর এই নদীতে এমবাপ্পে যখন এক পাড় গড়ছিলেন, তখন সেই গড়ার তোড়ে গার্দিওলার পাড় ভেঙে খানখান। ভাঙা-গড়ার এই খেলায় যে পাড় টিকে থাকে সে-ই তো ‘সিকান্দার’—এমবাপ্পে টাচলাইনের ওপাশে যাওয়ার পর তাঁকে স্বয়ং গার্দিওলার বুকে টেনে নেওয়াটা সেই অনুচ্চারিত স্বীকৃতিও।
এমবাপ্পের হাতে হ্যাটট্রিকের বল। ম্যাচের নায়কও তো তিনিই.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন এমব প প
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?