বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুরুতর আহত বিএনপি নেতা শওকত হোসেন (৫০) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি কচুয়া উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দেপাড়া বাজারে দলের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় ধোপাখালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি প্রার্থী ও নিহতের ভাই মো.

লিয়াকত হোসেনসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়। গুরুতর আহত শওকত হোসেনকে বাগেরহাট ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

সংঘর্ষের ঘটনায় নিহতের ভাই লিয়াকত হোসেন বাদী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আফজাল হাওলাদারসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০-৬০ জন অজ্ঞাতনামাকে আসামি করে কচুয়া থানায় মামলা করেন।

আরো পড়ুন:

হেলিকপ্টারে এসে পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে ব্যতিক্রমী বিদায়

কমপ্লিট শাটডাউনে শেবামেক, ক্যাম্পাসে নীরবতা

শওকত হোসেনের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে দেপাড়া বাজার এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মী ও নিহতের স্বজনরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। একপর্যায়ে তারা অভিযুক্ত আফজাল গ্রুপের সদস্য হায়দার আলীর বাড়ি ঘেরাও করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে হায়দার আলীকে আটক করে।

পুলিশ দেপাড়া বাজার থেকে বিএনপির আরো দুই নেতাকে আটক করেছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি।

নিহত শওকত হোসেনের ভাই মো. লিয়াকত হোসেন বলেন, “ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আফজাল হাওলাদারের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা হয়। আমার ভাই গুরুতর আহত হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।”

কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, কচুয়া ও বাগেরহাট সদর থানা পুলিশ এবং সেনা সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। ইতোমধ্যে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ঢাকা/শহিদুল/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ ব এনপ শওকত হ স ন স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

দেড়শ বছর টিকে আছে বালিকান্দি চামড়ার হাট

প্রায় দেড়শ বছর আগে মৌলভীবাজারের বালিকান্দি গ্রামে গড়ে ওঠে চামড়ার হাট। কোরবানির ঈদ এলেই মনু নদী তীরবর্তী গ্রামের এ হাটে চামড়া কেনাবেচা চলে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত। ক্রেতা-বিক্রেতা, শ্রমিকের আনাগোনায় উৎসবমুখর থাকে বালিকান্দি বাজার। 
মৌলভীবাজার জেলায় চামড়া কেনাবেচার একমাত্র হাট বালিকান্দি বাজার। জল ও স্থলপথে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় এটি দ্রুত বিভিন্ন এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। স্থানীয় বাজারে চা স্টলের মালিক আব্দুল করিম জানান, তারা বাপ-দাদার আলোচনায় শুনেছেন, চার-পাঁচ পুরুষ আগে এ ব্যবসার যাত্রা শুরু। এক সময় খুব জমজমাট ছিল এ হাট। তিনিও এক সময় চামড়া কেনাবেচায় জড়িত ছিলেন। ব্যবসায় লস খাওয়ায় চায়ের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন এখন।
জানা যায়, ১৮৬০ থেকে ১৮৭০ সালের দিকে এ বাজারের যাত্রা। এখন এ ব্যবসার প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে গেছে। ট্যানারি মালিকরা টাকা আটকে রাখায় সর্বস্বান্ত হয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। চামড়া বেচাকেনা যখন জমজমাট ছিল, তখন ঈদকেন্দ্রিক বাজার সরব থাকত। 
স্থানীয়রা জানান, অতীতে ঈদকেন্দ্রিক মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ শতাধিক মানুষ চামড়া কেনাবেচা করতেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা মাংস ছিলে লবণ লাগিয়ে বড় পুঁজির ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতেন। বড় ব্যবসায়ীরা আগেকার দিনে ঢাকার হাজারীবাগ এবং নাটোরে ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করতেন। শওকত মেম্বার, সানুর মিয়া, আনোয়ার মিয়া, মো. তারণ, মিন্টু মিয়া, সুলেমান মিয়ারা তাদের আদি পুরুষের ব্যবসার ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।
গত ৭ জুন ঈদের দিন সন্ধ্যায় সরেজমিন বালিকান্দি চামড়ার বাজারে যেতে দেখা যায় চামড়াবোঝাই ছোট-বড় ট্রাক-পিকআপ, টমটম, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভিড়ে জ্যাম লেগে গেছে। ফাঁড়ি রাস্তায় যেতে হয়েছে বালিকান্দি বাজারে। সেখানে শামিয়ানা টানিয়ে সড়কের পাশে, কোথাও সড়কের অংশজুড়ে চলছে চামড়া থেকে মাংস সরানোর কাজ। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এ কাজ করছেন।
চামড়া ব্যবসায়ী সুলেমান মিয়া জানান, ঈদের সময় বালিকান্দি বাজারে এখনও ১৫ থেকে ১৬ হাজার চামড়া কেনাবেচা হয়। এতে এক দিনে ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়। এবার গরুর আকারভেদে দেড়শ থেকে ৬০০ টাকা দরে চামড়া কেনাবেচা হয়েছে। চামড়া বিক্রি করতে আসা মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা তাফাজ্জুল বিন ফারুকী রাজনগরী জানান, চামড়া ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দেড়শ-দুইশ টাকায় প্রতি পিস চামড়া কিনেছেন। এতে ট্রাক ভাড়া ও অন্যান্য খরচ ওঠানো কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি শওকত মিয়া মেম্বার সমকালকে জানান, ব্যবসার মজা শেষ হয়ে গেছে ২০১৩ সাল থেকে। আগে ঈদ এলেই ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ করে দিতেন। এখন বছরের পর বছর যাওয়ার পরও পাওনা টাকা পরিশোধ করেন না। গত বছরের পাওনা ৫৫ লাখ টাকার মাঝে এবার ঈদের আগের দিন ট্যানারি মালিক মাত্র ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। এ বছর চার হাজারের বেশি চামড়ায় লবণ লাগিয়ে রেখেছেন। আরও কিছু লবণযুক্ত চামড়া কেনার জন্য দাম-দর চলছে। তিনি জানান, এ বছর বড় গরু কোরবানি দেওয়ার সংখ্যা খুব কম। ছোট চামড়ার সংখ্যাই বেশি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেড়শ বছর টিকে আছে বালিকান্দি চামড়ার হাট