Samakal:
2025-06-16@06:05:26 GMT

নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাকাত

Published: 20th, February 2025 GMT

নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাকাত

‘জাকাত’ একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ: পবিত্রতা, প্রবৃদ্ধি, পরিশুদ্ধ ও প্রশংসা। পারিভাষিক অর্থে, নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ কোনো ব্যক্তির মালিকানায় থাকলে নির্দিষ্ট সময় পর ওই সম্পদের একটি অংশ শরিয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত খাতে বিতরণ ও বণ্টন করাকে ‘জাকাত’ বলে। পবিত্র রমজান নিকটবর্তী হলে বাংলাদেশে একটি ভিন্ন আবহ তৈরি হয়। ইসলাম প্রতিপালনে সাধারণ মানুষের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। মসজিদগুলোতে যেমন নামাজির সংখ্যা বাড়ে, তেমনি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও নতুন পরিবেশ তৈরি হয়। রমজানে অর্থনীতিতে জাকাতের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যদিও জাকাতের লেনদেন বছরের যে কোনো সময়ে করা যায়, তবুও অঘোষিতভাবে রমজানে দাতা ও গ্রহীতা জাকাত অনুশীলন বেশি করে থাকেন। ইসলামের জাকাত ব্যবস্থায় দারিদ্র্য দূরীকরণের সর্বোত্তম ব্যবস্থা রয়েছে, যা ইতিহাসে একটি সুফলদায়ক নীতি বলে প্রমাণিত। বাংলাদেশের অধিবাসীদের ৯০ শতাংশ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও এখানে জাকাত আদায় ও বিতরণ সঠিকভাবে হচ্ছে না। ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকে বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে জাকাত প্রদান করলেও দারিদ্র্য বিমোচনে জাকাতের কোনো ভূমিকা রয়েছে বলে প্রতিভাত হচ্ছে না। 

জাকাতের তাৎপর্য সবার কাছে তুলে ধরা এবং জাকাত তহবিল সংগ্রহ করে তা বঞ্চিত মানুষের প্রয়োজনে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিতরণ ব্যবস্থাপনার কাজ করছে সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট-সিজেডএম।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান তাদের জাকাত তহবিল দক্ষ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ব্যবহার করে উপযুক্ত ব্যক্তি ও পরিবারের কাছে পৌঁছে দিয়ে তাদের সার্বিক কল্যাণে কাজ করার জন্য সিজেডএমকে দায়িত্ব দিয়েছে। এ সংস্থা তাদের প্রদত্ত তহবিল ব্যবহার করে বিভিন্ন দরিদ্রবান্ধব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সিজেডএম ২০০৮ সাল থেকে বিগত ১৬ বছরে ১৭ লাখের অধিক সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে বিভিন্ন সহযোগিতা প্রদান করতে পেরেছে। জাকাত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সিজেডএম শরিয়াহ ও আধুনিক ব্যবস্থাপনার ধ্যান-ধারণাকে সমন্বিত করে নতুন কৌশল অনুসরণ করছে। জাকাত প্রাপকদের বাছাই করার জন্য ভিত্তিজরিপ পরিচালনা, গ্রুপভিত্তিক ঘূর্ণায়মান তহবিল গঠন, তত্ত্বাবধান ও মনিটরিং, কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদান, যৌথ ব্যবসা, উদ্যোক্তা তৈরি, ঋণমুক্ত করা, মানব সম্পদের উন্নয়ন, পুষ্টি চাহিদা পূরণ, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান, শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, জাকাত বণ্টনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি, জাতীয় নীতির সঙ্গে সমন্বয়করণ ইত্যাদি কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সিজেডএম প্রতিবছর জাকাত ফেয়ারের আয়োজন করে। বিগত বছরগুলোতে বহু দর্শক-শ্রোতার অংশগ্রহণ এবং তাদের আগ্রহ-উদ্দীপনা সিজেডএমকে এ আয়োজনে অনুপ্রাণিত করেছে। আগামী ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখ শনি ও রোববার ঢাকার গুলশান-তেজগাঁও লিঙ্ক রোডে অবস্থিত আলোকি কনভেনশন সেন্টারে এ জাকাত ফেয়ার অনুষ্ঠিত হবে। 
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর বিগত পাঁচ দশকে এ দেশ অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধন করলেও লাখ লাখ বঞ্চিত মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের বিপ্লবের পর দেশের জনগণের মধ্যে একটি বৈষম্যহীন, দারিদ্র্যমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের যে স্বপ্ন তৈরি হয়েছে, তা রূপায়ণে জাকাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। সে জন্য জাকাত ফেয়ারের এবারে প্রতিপাদ্য: নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে জাকাত। নতুন বাংলাদেশ সেই স্বপ্নের দেশ, যেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য নেই এবং প্রতিটি মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত। এ পরিবর্তনের অন্যতম চাবিকাঠি হতে পারে জাকাত। এখন দরকার দারিদ্র্য ও বৈষম্য নির্মূলের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা।

বাংলাদেশে বর্তমানে এক লাখ কোটি টাকার জাকাত আদায়ের সুপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে। এই টাকা বাংলাদেশের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের প্রায় ১২.

৫৫% এবং উন্নয়ন ব্যয়ের প্রায় ৩৬.১৪%। যদি এক লাখ কোটি টাকা জাকাত সঠিকভাবে ব্যবহৃত হতো, এই অর্থ দিয়ে ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই করা যেত; কেউ না খেয়ে থাকত না। জাকাত সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে 
গৃহহীনদের জন্য নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করা যেত, যাতে প্রত্যেকের মাথার ওপর ছাদ থাকবে। মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করা যাবে, যাতে চিকিৎসার অভাবে কেউ কষ্ট পাবে না। 

ওয়েছ খান নূর সোহেল: সহকারী মহাব্যবস্থাপক, সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট (সিজেডএম) 
weis.khan@czm-bd.org  

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবহ তহব ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানের হামলায় ২০ ইসরায়েলি নিহত

ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের পাল্টাপাল্টি হামলা চারদিন ধরে চলছে। এসব হামলায় উভয় দেশের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ইসরায়েলের জাতীয় পরিষেবা জানিয়েছে, আজ সোমবার ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত শুক্রবার থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত ইসরায়েলে নিহতের সংখ্যা  ২০ জনে পৌঁছুল। আজ সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।

অন্যদিকে আল-জাজিরা বলছে, ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

ইসরায়েলের জাতীয় জরুরি পরিষেবার প্রধান ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডমের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মধ্য ইসরায়েলজুড়ে ইরানের হামলায় চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজন নারী। 

এর আগে সিএনএন ইসরায়েলের ১৫ জন নিহত হওয়ার খবর দেয়। ইসরায়েলের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম কানের খবর বলছে, বন্দরনগরী হাইফায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।

রোববার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, ইরান থেকে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়েছে। একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে ইসরায়েল। বর্তমানে হামলা প্রতিহত করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

আজ সিএনএনের এক খবরে বলা হয়েছে, তেল আবিব ও জেরুজালেমসহ ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে জরুরি সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজতে শুরু করেছে। আইডিএফ সতর্ক করে বলেছে, তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পুরোপুরি অভেদ্য নয়।

সিএনএনের একজন প্রযোজক জেরুজালেমে সাইরেন এবং একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তার তোলা ভিডিওতে আকাশে বহু ক্ষেপণাস্ত্র ছুটে যেতে দেখা গেছে।

ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা সংস্থা ম্যাগেন ডেভিড আদোম জানিয়েছে, তাদের দলগুলো আক্রান্ত এলাকার দিকে রওনা দিয়েছে।

সারা দেশের নাগরিকদের আশ্রয়কেন্দ্রে ঢুকতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বলেছে, বর্তমানে বিমানবাহিনী হামলা প্রতিহত করার পাশাপাশি পাল্টা হামলা চালানোর কাজ করছে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট নিউজ জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের পেতাহ টিকভা শহরের একটি ভবনে একটি ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি আঘাত হেনেছে। হামলার ফলে ওই স্থানে আগুন ধরে যায়। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

এদিকে মধ্য ইরানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির সেনাবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর দাবি, বিভিন্ন ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলি বিমানবাহিনী সফলভাবে মধ্য ইরানে অবস্থিত একাধিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব স্থাপনা থেকে ইসরায়েলের দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হচ্ছিল।’

তবে ইসরায়েলের এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরান এখনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।

এদিকে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় রোববার পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২৪ জনে পৌঁছেছে।

বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিহতদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক। হামলায় ১ হাজার ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।

এপির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ১৩ জুন ইরানে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ওই হামলায় ইরানের নাতাঞ্জ ও ইসফাহান অঞ্চলের পারমাণবিক স্থাপনা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরানে বর্তমানে মসজিদ ও মেট্রো স্টেশনগুলোকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের তিন শিশুসহ অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। রোববার ইসরায়েল সরকারের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

ইসরায়েল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এছাড়া ইরানের হামলায় কমপক্ষে ৩৮৫ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে সাত জনের অবস্থা গুরুতর।

এদিকে ইসরায়েলি পুলিশের বরাতে আল জাজিরা জানিয়েছে, তেল আবিবের দক্ষিণে অবস্থিত বাত ইয়াম শহরে ৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়া সাতজন এখনও নিখোঁজ। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন জরুরি সেবাদানকারীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ