ঘন কুয়াশায় আবারও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে গতকাল বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়েছে। তিন ঘণ্টা পর আজ শুক্রবার সকাল ছয়টার পর এ রুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। এর আগে পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া দুটি রো রো (বড়) ফেরি মাঝনদীতে আটকা পড়ে। দুর্ভোগের শিকার হন কয়েক শ যাত্রীসহ যানবাহন চালক।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয় জানায়, কয়েক দিন বিরতির পর গতকাল মধ্যরাত থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ঘন কুয়াশা পড়তে থাকে। রাত বাড়ার সঙ্গে কুয়াশার ঘনত্বও বাড়তে থাকলে ফেরি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। রাত আড়াইটার পর পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া দৌলতদিয়া ঘাটগামী এনায়েতপুরী ও খান জাহান আলী নামের দুটি রো রো (বড়) ফেরি মাঝনদীতে আটকা পড়ে। কুয়াশায় ফেরি আটকে থাকার খবর পাওয়ার পর ঘাট থেকে আর কোনো ফেরি ছাড়েনি।

এ সময় পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় হাসনা হেনা, ভাইগার, কেরামত আলী নামের তিনটি ফেরি নোঙর করে থাকে। একইভাবে দৌলতদিয়া প্রান্তে ভাষাশহীদ ডা.

গোলাম মাওলা, ঢাকা, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর, বনলতা, গৌরী ও বীরশ্রেষ্ঠ রহুল আমিন নামের সাতটি ফেরি নোঙর করে থাকে। কুয়াশা কমে গেলে আজ সকাল ছয়টার দিকে ফেরিগুলো একে একে ঘাট ছাড়তে থাকে।

মাঝনদীতে আটকে থাকা দুটি বড় ফেরির যাত্রীসহ চালকেরা এবং পাটুরিয়া ও দৌলতদিয়া ঘাটে আটকে থাকা ফেরির যাত্রীসহ নদী পাড়ি দিতে আসা দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাসের যাত্রীসহ পরিবহনচালকেরা কুয়াশা ও শীতে বাড়তি ভোগান্তিতে পড়েন।

দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার দায়িত্বরত একটি পরিবহনের তত্ত্বাবধায়ক মনির হোসেন বলেন, বেশ কয়েক দিন বিরতির পর গতকাল মধ্যরাত থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে থাকে। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা যানবাহনের যাত্রীসহ পরিবহনচালক ও সহকারীরা বাড়তি ভোগান্তিতে পড়েন।

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আবদুস সালাম জানান, আকস্মিক ঘন কুয়াশায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথে তিন ঘণ্টার মতো ফেরিসহ নৌযান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় নদী পাড়ি দিতে আসা বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীসহ চালকদের। আজ সকাল ছয়টার পর থেকে কুয়াশা অনেকটা কমে গেলে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র য ত র সহ ঘন ক য় শ দ লতদ য়

এছাড়াও পড়ুন:

সুনামগঞ্জে জমি থেকে ৫ কোটি টাকার বালু চুরির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা

সুনামগঞ্জের ধোপাজান নদের তীরের ব্যক্তিমালিকানাধীন ফসলি জমি থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বালু চুরির অভিযোগে ‘লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর আদালতে মামলাটি করেন সুনামগঞ্জ পৌর শহরের দক্ষিণ আরপিননগর এলাকার বাসিন্দা গোলাম হোসেন। বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বিশ্বম্ভরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. নাজমুল হুদা মামলাটি দায়ের ও আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার রতারগাঁও মৌজায় ধোপাজান নদের তীরে তাঁর পরিবারের ২ একর ৪০ শতক ফসলি জমি রয়েছে। ওই জমি নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা চলমান। কিন্তু লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং ধোপাজান নদে বিটি বালু উত্তোলনের অনুমতি নিয়ে তাঁর জমি থেকে জোরপূর্বক নদের পাড় কেটে ও ফসলি জমি নষ্ট করে বালু উত্তোলন করেছে।

বাদীর অভিযোগ, ২৭ অক্টোবর রাতে তিনি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে লিমপিডের লোকজনকে ড্রেজার দিয়ে বালু তুলতে দেখেন। বাধা দিলে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। তাঁর দাবি, আসামিপক্ষ তাঁর জমি থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার বালু তুলে বিক্রি করেছে। এতে তাঁর জমির একাংশ নদে বিলীন হয়ে গেছে।

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত ধোপাজান নদ। ভারত সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা এই নদের ইজারা ২০১৮ সাল থেকে বন্ধ রয়েছে। ড্রেজার দিয়ে অবাধ বালু উত্তোলনের ফলে এলাকায় ব্যাপক ভাঙন ও পরিবেশগত ক্ষতি হওয়ায় সরকার ওই সময় ইজারা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়। নদটি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীন।

ইজারা বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন সময়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন চলেছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে এই নদে প্রকাশ্যে বালু লুট শুরু হয়। প্রায় আড়াই মাসে এখান থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বালু লুট হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এখনো ধোপাজান নদ থেকে নানাভাবে বালু উত্তোলন চলছে। এর মধ্যেই গত জুলাই মাসে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং নামের প্রতিষ্ঠানটিকে ১ কোটি ২১ লাখ ঘনফুট বিটি বালু উত্তোলনের অনুমতি দেয়। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চলমান কাজে এ বালু ব্যবহার করা হবে। তবে ধোপাজান নদ বিআইডব্লিউটিএর আওতাভুক্ত নয়। এরপর আগস্টে জেলা প্রশাসন থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ধোপাজান নদে বিটি বালু নেই, এখানে রয়েছে উন্নতমানের সিলিকা বালু। এ বালু উত্তোলনের অনুমতি দিলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে এবং অনুমোদনপ্রক্রিয়াটিও বিধিসম্মত হয়নি বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এর পর থেকেই লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বালু উত্তোলনের বিরোধিতা করে বিভিন্ন সংগঠন মানববন্ধন, সমাবেশ, স্মারকলিপি প্রদানসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। গত বুধবার একই দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

নদের তীরের মুসলিমপুর গ্রামের বাসিন্দা ও সুনামগঞ্জ পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের সভাপতি এ কে এম আবু নাছার বলেন, নানাভাবে এই বালু তোলা বন্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে, কিন্তু ফল হচ্ছে না। এর সঙ্গে বড় বালুখেকোরা জড়িত। তাঁরা স্থানীয় প্রভাবশালীসহ সুবিধাভোগীদের ম্যানেজ করে বালু তুলে বিক্রি করছেন। এই বালু লুট বন্ধ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডুবচরে আটকা পড়া ‘বোগদাদিয়া ৭’ এর যাত্রীরা নিরাপদে
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খুলছে শনিবার, জাহাজ চালাবেন না মালিকরা
  • সুনামগঞ্জে জমি থেকে ৫ কোটি টাকার বালু চুরির অভিযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা