কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় বখাটের উত্ত্যক্তের হাত থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করায় বখাটের হাতে শিক্ষক হেনস্তার শিকার হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে উপজেলার গৌরীপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

হেনস্তার শিকার ওই শিক্ষকের নাম আবদুর রহমান ঢালী। তিনি উপজেলার গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তিনি প্রথম আলোর দাউদকান্দি উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত বখাটের নাম মো.

রনি। তিনি উপজেলার হাটচান্দিনা গ্রামের দিলু মিয়ার বাড়ির ভাড়াটে। ঘটনার পর থেকে রনি এলাকা থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তাঁকে ধরার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বিদ্যালয় ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রনি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্ত করছেন। উপজেলার গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজ ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদ্‌যাপন অনুষ্ঠান হয়। বিদ্যালয় এলাকায় বখাটে রনি উপস্থিত হয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সীমা রানী দাস ও আবদুর রহমান ঢালী উত্ত্যক্ত থেকে ছাত্রীদের রক্ষার চেষ্টা করেন। দুই শিক্ষক উত্ত্যক্তকারীকে কিছু না বলে অষ্টম শ্রেণির ওই দুই শিক্ষার্থীকে নিরাপদে বাড়ি যাওয়ার জন্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় তুলে দেন।

আবদুর রহমান ঢালী বলেন, শিক্ষার্থীরা নিরাপদে বাড়ি পৌঁছায়। অমর একুশের অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষকেরা চলে যান। ওই দুই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতে না পেরে রনি তাঁর সহযোগীদের নিয়ে গৌরীপুর বাজারে শিক্ষার্থীর মার ওপর আক্রমণ করেন। এ সময় বাজারের লোকজন জড়ো হলে রনি দৌড়ে পালিয়ে যান।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, রনি এ এলাকায় ভাড়া থেকে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বিভিন্ন খারাপ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। তাঁর ভয়ে মেয়ের স্কুলে যেতে ভয় পান। রনির কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয় লোকজন।

ঘটনার পর বিষয়টি দাউদকান্দি মডেল থানার গৌরীপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. আমিনুল ইসলাম, দাউদকান্দি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুনায়েত চৌধুরী, দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা ইসলামকে অবহিত করেন আবদুর রহমান ঢালী।

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম বলেন, তিনি বিষয়টি জেনেছেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

আজ বিকেলে গৌরীপুর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার পর আবদুর রহমান ঢালী ভাই আমার কার্যালয়ে এসে পুরো ঘটনাটি জানিয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থল ও বখাটের বাসায় পাঠানো হয়। কিন্তু সে এলাকা থেকে গা-ঢাকা দিয়েছে। পরে জানতে পারলাম, ওই যুবকের পক্ষে বিষয়টি সমাধানের জন্য একটি পক্ষ আবদুর রহমান ঢালী ভাইকে কল করেছেন। আমি আবদুর রহমান ঢালীকে কল করে বিষয়টি জেনেছি। শুনেছি, এ নিয়ে রোববার বৈঠক হবে। যদি আবদুর রহমান ঢালী ভাই বলেন, তিনি বৈঠক চান না। তাহলে আমরা ওই বখাটেকে গ্রেপ্তার করব। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি জুনায়েত চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, উত্ত্যক্তকারীকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে ছাড় দেওয়া হবে না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আবদ র রহম ন ঢ ল দ উদক ন দ উপজ ল র ঘটন র এ ঘটন ব ষয়ট

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ