চ্যাম্পিয়নস ট্রফির উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে হেরে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে পাকিস্তানের। এক ম্যাচ হেরেই স্বাগতিকেরা গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কায়। তবে শোয়েব আখাতার ও শোয়েব মালিকের বিশ্বাস, পাকিস্তান ঘুরে দাঁড়িয়ে সেমিফাইনালে খেলবে।

‘এ’ গ্রুপে পাকিস্তানের শেষ দুই ম্যাচ ভারত ও বাংলাদেশের বিপক্ষে। রিজওয়ান–বাবর–আফ্রিদিদের জন্য দুটি ম্যাচই এখন বাঁচা–মরার লড়াই। রোববার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা দুবাইয়ে, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের বিপক্ষে রাওয়ালপিন্ডিতে।

প্রবল চাপে থাকা পাকিস্তানকে আপাতত ভারতকে নিয়েই ভাবতে হচ্ছে। গতকাল বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়ে সেমিফাইনালের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেছে রোহিত শর্মার দল। চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে যাওয়ার আগে ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডকেও ধবলধোলাই করেছে ভারতীয়রা।

তবে ‘দুই শোয়েব’ মনে করেন, ভারত দুর্দান্ত ছন্দে থাকলেও তাদের হারানোর সামর্থ্য আছে পাকিস্তানের। এই ম্যাচে জয় পেলেই সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে রিজওয়ানের দলের।

২০১৭ সালে পাকিস্তানের হয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জেতা শোয়েব মালিক ইউটিউব চ্যানেলে বলেছেন, ‘আমি খুবই আশাবাদী যে পরের ম্যাচে আমাদের ভারতকে হারানোর দারুণ সুযোগ আছে। এরপর বাংলাদেশের সঙ্গেও জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এটা ঠিক যে আমাদের মনোবল এখন তলানিতে, আত্মবিশ্বাসও কমে গেছে। কিন্তু আমার মনে হয় এখনো নিজেদের চেনানোর বাকি আছে।’

আরও পড়ুনবাংলাদেশের পক্ষে সেমিফাইনালে ওঠা কতটা সহজ, কতটা কঠিন৮ ঘণ্টা আগে

‘ভারতকে বিপক্ষে জেতার সামর্থ্য আমাদের দলের আছে। কিন্তু এখন দায়িত্বটা তাদের (খেলোয়াড়দের)। সিনিয়রদের বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে’—যোগ করেন শোয়েব মালিক।

রোহিত–কোহলিদের বিপক্ষে ম্যাচে চাপ থাকলেও রিজওয়ানের দলকে সুযোগ হিসেবে দেখার পরামর্শ দিয়েছেন শোয়েব মালিক, ‘ভেবে দেখো, ভারতের বিপক্ষে বাঁচা–মরার ম্যাচটা যদি কেউ জেতায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ (রাতারাতি) মহাতারকা হয়ে যাবে। তাই চাপ থাকলেও এটাকে সুযোগ হিসেবে নাও।’

ক্রিকেট ইতিহাসের দ্রুততম বোলার শোয়েব আখতার পাকিস্তান দলকে দৃঢ় সংকল্প নিয়ে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার আহ্বান জানিয়েছেন, ‘রক্ষণাত্মক না হয়ে তোমরা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলো। ভারতের বিপক্ষে তোমাদের শুভকামনা জানাই। আশা করি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যে ভুল করেছ, সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করবে না এবং এত কম স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করবে না।’

আরও পড়ুনপাকিস্তানের দুঃসংবাদ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি থেকে ছিটকে গেলেন ফখর২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৪ জন বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে খেলেছে পাকিস্তান। ফলে দুই অনিয়মিত বোলার খুশদিল শাহ ও আগা সালমানকে ১০ ওভার বল করতে হয়েছে।
শোয়েব আখতারের চাওয়া পাকিস্তানের পরবর্তী ম্যাচগুলোর একাদশে যেন বেশি বোলার নেওয়া হয়, ‘একাদশে অন্তত ৫–৬ জন বোলার রাখা উচিত ছিল। ভারত সাধারণত ৫–৬ জন বোলার নিয়ে একাদশ সাজায়। (কখনো কখনো) ৭ বোলার নিয়েও খেলে। আবারও বলছি, আমাদের পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় কিছুটা ঘাটতি আছে। তোমরাই নিজেদের কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলেছ।’  

২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ম ফ ইন ল আম দ র ভ রতক

এছাড়াও পড়ুন:

এখনও পাহাড়ের নিচে বাস ২০ সহস্রাধিক মানুষের

২০১৭ সালের ১৩ জুনের ভয়াবহ পাহাড় ধসের দৃশ্য এখনও চোখে ভেসে উঠলে শিউরে উঠি। এখনও আমার ঘরের আশপাশে সেই পাহাড় ধসের চিহ্ন রয়ে গেছে। তাই অল্প বৃষ্টি হলেই আতঙ্কে থাকি, আশ্রয়কেন্দ্র খুঁজি। কিন্তু আমরা অসহায় ও গরিব, যেখানে পেটের ভাত জোগাতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে নিরাপদ ভাড়া বাসায় থাকার সামর্থ্য কোথায়? তাই মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই পাহাড়ের নিচে বসবাস করছি। 
কথাগুলো বলছিলেন রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীর লোকনাথ মন্দিরের পাশে সিএনবির পাশে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা পঞ্চাশোর্ধ্ব নূরজাহান। শুধু নূরজাহান নন, রূপনগর, মুসলিমপাড়া, শিমুলতলী, লোকনাথ মন্দির এলাকা, রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন নিচু এলাকা, কিনারাম পাড়াসহ শহরের অন্তত ২৯টি স্থানে ২০ হাজারের বেশি নিম্ন আয়ের মানুষ মারাত্মক ঝুঁকি জেনেও বসবাস করছে পাহাড়ের পাদদেশে। একটু ভারী বৃষ্টি এলেই সবার স্মৃতিতে ফিরে আসে, ২০১৭ সালের এ দিনে শহরে পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। কিন্তু পুনর্বাসন না হওয়ায় পাহাড়ের নিচে বসবাস বন্ধ হয় না। উল্টো দিন দিন বাড়ে। 

এমন অবস্থায় আজ শুক্রবার ২০১৭ সালেই সেই ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনার আট বছর পূর্ণ হলো। ২০১৭ সালের ১৩ জুন ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড় ধসে রাঙামাটি শহরের ভেদভেদীর যুব উন্নয়ন বোর্ড এলাকা, মুসলিমপাড়া, শিমুলতলী, রূপনগর, সাপছড়ি, মগবান, বালুখালী, জুরাছড়ি, কাপ্তাই, কাউখালী ও বিলাইছড়ি এলাকায় ৫ সেনা সদস্যসহ ১২০ জনের মৃত্যু হয়। মানিকছড়িতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের ওপর থেকে মাটি সরাতে গিয়ে ৫ সেনা সদস্য পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়েন। ওই সময় পাহাড় ধসে জেলায় ১৬০০ থেকে ১৭০০ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সারাদেশের সঙ্গে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল এক সপ্তাহ। দীর্ঘ তিন মাসের বেশি সময় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার পর ক্ষতিগ্রস্তরা নিজেদের জায়গায় ফিরে যায়। এ ছাড়া ২০১৮ সালে নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে দুই শিশুসহ ১১ জন এবং ২০১৯ সালের কাপ্তাইয়ে ৩ জনের প্রাণহানি ঘটে।
২০১৭ সালের সেই পাহাড় ধসে মৃত্যুর মিছিল ও বিপুল ক্ষয়ক্ষতির পরও ঝুঁকিতে থাকা লোকজনদের পুনর্বাসন করতে পারেনি প্রশাসন। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে মাইকিং করেই দায় সারে তারা। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে স্থাপনা নির্মাণ না করতে মাঝেমধ্যে নিষেধাজ্ঞাও জারি হয়। কিন্তু এই সমস্যার স্থায়ী কোনো সমাধান আজও হয়নি। 
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, রাঙামাটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে শিমুলতলী, রূপনগর, লোকমন্দির পাড়া, পোস্ট অফিস কলোনি এলাকা, নতুনপাড়া, বিদ্যানগর, কিনারামপাড়া, সিলেটি পাড়াসহ অন্তত ২৯টি স্থানকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ছাড়া নানিয়ারচর, কাউখালীসহ কয়েকটি উপজেলায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে। এসব এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে এখনও ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন ২০ হাজারের বেশি মানুষ। 

গতকাল বৃহস্পতিবার রূপনগর, লোকনাথ মন্দির, মুসলিমপাড়া এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ওই পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় নতুন বসতি গড়ে উঠেছে। কথা হয় রূপনগর এলাকার বাসিন্দা সমলা আক্তার, কমলা বেগম, আব্দুল মান্নান ও শাহানা বেগমের সঙ্গে। তারা জানান, ভারী বৃষ্টি হলেই ভয় লাগে। কিন্তু তাদের যাওয়ার কোথাও জায়গা নেই। বেশি বৃষ্টি হলে জেলা প্রশাসন থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু সম্পদ হারানোর ভয়ে অনেকেই ঘরবাড়ি ছেড়ে যেতে চায় না। 
তারা আরও জানান, সবাই চায় ভালো ও নিরাপদ স্থানে বসবাস করতে। তাই সরকার যদি তাদের পুনর্বাসন করে তাদের জন্য ভালো হয়।  
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের পুনর্বাসন চলমান প্রক্রিয়া। তবে এ ক্ষেত্রে জটিলতা হচ্ছে, যেখান থেকে মানুষজনদের সরিয়ে নেওয়া হয়, সেখানে আবারও নতুন লোকজন বসবাস শুরু করে। এসব এলাকায় লোকজন কম টাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। তা ছাড়া পাহাড়ে ভূমি জটিলতা থাকার কারণে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বা পাহাড়ের ঢালুতে মানুষ বসবাস করছে। যারা অবৈধভাবে বসবাস করছে তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নেওয়া হচ্ছে আইনি ব্যবস্থাও। তবে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস বন্ধ করতে সচেতনতা সৃষ্টি জরুরি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এখনও পাহাড়ের নিচে বাস ২০ সহস্রাধিক মানুষের