১৫ বছর পর দেশে ফিরে বোনের বাড়িতে গিয়েছিলেন, ফিরলেন লাশ হয়ে
Published: 22nd, February 2025 GMT
পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে একটানা ১৫ বছর মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে ছিলেন প্রবাসী মো. মহিউদ্দিন (৪০)। প্রবাসে দীর্ঘ জীবন কাটিয়ে গতকাল শুক্রবার দেশে ফেরেন। বেলা ১১টার দিকে বাড়িতে ফিরেই জানতে পারেন, পারিবারিক কলহের জেরে ছোট বোনকে মারধর করছেন তাঁর স্বামী।
রাত নয়টার দিকে কয়েকজন আত্মীয় নিয়ে বোনের শ্বশুরবাড়িতে যান বিবাদ মেটাতে। তবে সেখান থেকে তাঁকে ফিরতে হয়েছে লাশ হয়ে। বোনের শ্বশুরবাড়িতে মারধরে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।
নিহত মহিউদ্দিন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের মাতবারহাট এলাকার নন্দীগ্রামের মৃত ফজলুল হকের ছেলে। তাঁর বোনের শ্বশুরবাড়ি একই উপজেলার কাটাছড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বামনসুন্দর দারোগারহাট নোয়াপাড়া এলাকায়। গতকাল রাত ১০টার দিকে বোনের শ্বশুরবাড়ি থেকে আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মহিউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত মহিউদ্দিনের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগে মহিউদ্দিনের ছোট বোন সেলিনা আক্তারের সঙ্গে নোয়াপাড়ার মিসির আহমেদের ছেলে মো.
মারধরে আহত মহিউদ্দিনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তাঁর সঙ্গে থাকা স্বজনেরা। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক মহিউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ফাহিম ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই মহিউদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তির শরীরে জখমের কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি।
নিহত মহিউদ্দিনের ছোট বোন সেলিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার দিনভর বাবার বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করে টাকা এনে দেওয়ার জন্য তাঁকে নির্যাতন করেন স্বামী। খবর পেয়ে তাঁর ভাই ছুটে এসেছিলেন। সংসারে শান্তি ফিরিয়ে আনতে তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন তিনি। এ সময় স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ কয়েকজন মিলে তাঁর ভাইকে মারধর করে হত্যা করেছেন। সেলিনা আক্তার আরও বলেন, ‘আমার ভাইকে মারধর করতে বাধা দেওয়ায় আমার একটি পাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’
মহিউদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান জোরারগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক আরিফ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রবাসী মহিউদ্দিনকে তাঁর ছোট বোনের স্বামীসহ কয়েকজন ব্যক্তি মিলে লাথি ও কিলঘুষি দিয়ে আহত করেন। এরপর তাঁর মৃত্যু হয়। তবে সুরতহালে নিহতের শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই।
ভাইয়ের মৃত্যুতে আহাজারি করছেন সেলিনা আক্তার। আজ সকালে জোরারগঞ্জ থানায়উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?