পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে একটানা ১৫ বছর মধ্যপ্রাচ্যের ওমানে ছিলেন প্রবাসী মো. মহিউদ্দিন (৪০)। প্রবাসে দীর্ঘ জীবন কাটিয়ে গতকাল শুক্রবার দেশে ফেরেন। বেলা ১১টার দিকে বাড়িতে ফিরেই জানতে পারেন, পারিবারিক কলহের জেরে ছোট বোনকে মারধর করছেন তাঁর স্বামী।

রাত নয়টার দিকে কয়েকজন আত্মীয় নিয়ে বোনের শ্বশুরবাড়িতে যান বিবাদ মেটাতে। তবে সেখান থেকে তাঁকে ফিরতে হয়েছে লাশ হয়ে। বোনের শ্বশুরবাড়িতে মারধরে মৃত্যু হয়েছে তাঁর।

নিহত মহিউদ্দিন চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার ইছাখালী ইউনিয়নের মাতবারহাট এলাকার নন্দীগ্রামের মৃত ফজলুল হকের ছেলে। তাঁর বোনের শ্বশুরবাড়ি একই উপজেলার কাটাছড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বামনসুন্দর দারোগারহাট নোয়াপাড়া এলাকায়। গতকাল রাত ১০টার দিকে বোনের শ্বশুরবাড়ি থেকে আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মহিউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত মহিউদ্দিনের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগে মহিউদ্দিনের ছোট বোন সেলিনা আক্তারের সঙ্গে নোয়াপাড়ার মিসির আহমেদের ছেলে মো.

শরীফের বিয়ে হয়। শরিফ পেশায় গরু ব্যবসায়ী। তাঁদের সংসারে দুই বছর ও আট মাস বয়সের দুটি মেয়েসন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকেই দফায় দফায় বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে স্ত্রী সেলিনা আক্তারকে চাপ দিতেন শরীফ। সর্বশেষ গতকালও সেলিনাকে বাবার বাড়ি থেকে প্রাপ্য জমির ভাগের টাকা আনতে মারধর ও নির্যাতন করা হয়। এই খবর পেয়ে বিদেশ থেকে বাড়িতে আসা সেলিনার বড় ভাই মহিউদ্দিন বিবাদ মেটাতে চাচাতো ভাই মো. সোহাগ, বড় বোনের ছেলে মেহেদী হাসান ও বড় বোনের জামাই আজিজুল হককে সঙ্গে নিয়ে সেলিনা আক্তারের শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখানে বাগ্‌বিতণ্ডার এক পর্যায়ে সেলিনার স্বামী শরীফ তাঁর মা–বাবা এবং আরও কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে মহিউদ্দিনকে লাথি ও কিলঘুষি মারেন। মারধরের এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়েন মহিউদ্দিন।

মারধরে আহত মহিউদ্দিনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তাঁর সঙ্গে থাকা স্বজনেরা। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক মহিউদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ফাহিম ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই মহিউদ্দিনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ব্যক্তির শরীরে জখমের কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি।

নিহত মহিউদ্দিনের ছোট বোন সেলিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার দিনভর বাবার বাড়ি থেকে জমি বিক্রি করে টাকা এনে দেওয়ার জন্য তাঁকে নির্যাতন করেন স্বামী। খবর পেয়ে তাঁর ভাই ছুটে এসেছিলেন। সংসারে শান্তি ফিরিয়ে আনতে তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করছিলেন তিনি। এ সময় স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ কয়েকজন মিলে তাঁর ভাইকে মারধর করে হত্যা করেছেন। সেলিনা আক্তার আরও বলেন, ‘আমার ভাইকে মারধর করতে বাধা দেওয়ায় আমার একটি পাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আমি আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।’

মহিউদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান জোরারগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক আরিফ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রবাসী মহিউদ্দিনকে তাঁর ছোট বোনের স্বামীসহ কয়েকজন ব্যক্তি মিলে লাথি ও কিলঘুষি দিয়ে আহত করেন। এরপর তাঁর মৃত্যু হয়। তবে সুরতহালে নিহতের শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই।

ভাইয়ের মৃত্যুতে আহাজারি করছেন সেলিনা আক্তার। আজ সকালে জোরারগঞ্জ থানায়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

জরুরি পরিস্থিতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা

প্রতিনিয়ত জরুরি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। অনেক সময় ভ্রান্ত ধারণায় পড়ে এ পরিস্থিতিতে আরও বড় ধরনের ভুল করে ফেলি আমরা। সে ক্ষেত্রে জরুরি পরিস্থিতিতে কী করবেন আর কী করবেন না, তা জেনে রাখা ভালো।

যেমন–

পুড়ে গেলে : গরম তেল পড়ে হোক বা  আগুনে পুড়ে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পোড়া স্থানে পেস্টের আস্তরণ দিই। অনেকে ডিম ভেঙে দেন, কেউ বা লাগান চুন। এগুলো ক্ষতিকর। পুড়ে গেলে ঠান্ডা পানির ধারা রাখতে পারেন ১০ মিনিট; অন্য কোনো কিছু নয়। 

ব্যথা পেলে : হাড় ভাঙলে নড়াচড়া না করে ভাঙা স্থানের দু’পাশে কাঠ দিয়ে বেঁধে হাসপাতালে আনতে হবে।

রক্ত ধুয়ে ফেলা নয় : রক্তপাত হতে থাকলে পরিষ্কার কাপড় বা গজ-ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিন। বেশি কেটে গেলে বা রক্তপাত ১০ মিনিটের মধ্যে বন্ধ না হলে হাসপাতালে নিতে ভুলবেন না।

নাক দিয়ে রক্ত পড়লে : আক্রান্ত ব্যক্তিকে সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে বসাতে হবে। বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল ও অনামিকা দিয়ে নাসারন্ধ্র টানা ১০ মিনিট বন্ধ রাখতে হবে। এ সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হবে। বরফ নাকের ওপরে দেওয়া যেতে পারে। যদি একটানা ১০ মিনিট নাসারন্ধ্র চেপে ধরে রাখার পরও রক্ত বন্ধ না হয়, দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।

সাপে কাটলে : সাপে কাটার স্থানের কিছু ওপরে আমরা শক্ত বাঁধন দিই। এতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে হাত-পা পচে যেতে পারে। বাঁধন দিতে হবে, তবে রশি দিয়ে নয়; গামছা, কাপড় দিয়ে ঢিলে করে বাঁধলেই চলবে। 

বিষপানে নয় গোবরপানি : বিষ পান করলে অনেকে গোবরমিশ্রিত পানি পান করিয়ে বমি করার চেষ্টা করেন। এটি ভ্রান্ত ধারণা। যদি বিষপান করা ব্যক্তি অচেতন বা অবচেতন থাকে, তাহলে বমি ফুসফুসে চলে যেতে পারে; যা গুরুতর। বিষপানের এক ঘণ্টার মধ্যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি, নিনস

সম্পর্কিত নিবন্ধ