৫ হত্যার ১৫ বছর পর একই স্থানে ৩ চরমপন্থিকে গুলি করে হত্যা
Published: 22nd, February 2025 GMT
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় দীর্ঘদিন অস্ত্রধারীদের প্রকাশ্যে কোনো আনাগোনা না থাকার পর হঠাৎ শুক্রবার রাতে তিন চরমপন্থিকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ফের আলোচনায় অবৈধ অস্ত্রধারীরা। এলাকাবাসীর ধারণা এটা হয়তো ১৫ বছর আগের শৈলকুপার রামচন্দ্রপুর শ্মশানঘাটের জাসদ গণবাহিনীর ৫ কর্মীকে গুলি ও জবাই করে হত্যার প্রতিশোধ বা নতুন করে সাম্রাজ্য দখলের চেষ্টা। কেননা এরই মধ্যে কুষ্টিয়া এলাকার জাসদ গণবাহিনীর নেতা কালু দায় স্বীকার করে একটি ক্ষুদে বার্তা দিয়েছেন সংবাদকর্মীদের।
এতে লেখা রয়েছে, ‘ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনাবাসীর উদ্দেশে জানানো যাচ্ছে, পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা অসংখ্য খুন, গুম, দখলদারী, ডাকাতি, ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হরিণাকুন্ডুনিবাসী হানিফ তাঁর দুই সহযোগীসহ জাসদ গণবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন। এই অঞ্চলের হানিফের সহযোগীদের শুধরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো, অন্যথায় আপনাদের একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।’
নিহত তিনজন হলেন- ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার আহাদননগর গ্রামের রাহাজ উদ্দিনের ছেলে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি জনযুদ্ধের (লাল পতাকা) সামরিক কমান্ডর হানিফ আলী (৫৬), তার শ্যালক একই উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের উন্মাদ আলীর ছেলে লিটন হোসেন (৩৮) ও কুষ্টিয়া ইবি থানার পিয়ারপুর গ্রামের আরজান হোসেনের ছেলে রাইসুল ইসলাম রাজু (২৮)। রাইসুলের মরদেহ ছিল ধান খেতের পানির মধ্যে। আর হানিফ ও লিটনের মরদেহের পাশে ছিল দুটি পালসার মটোরসাইকেল ও প্রত্যেকের হেলমেট। মাথায় ও বুকে ছিল গুলির আঘাত।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের আগে নিহতদের প্রত্যেককে মোবাইলে কল করে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও তাদের পরিবারের সদস্যরা বলতে পারেনি কারা তাদের মোবাইলে কল দিয়েছিল।
জানা যায়, জনযুদ্ধের সামরিক কমান্ডার হানিফ ৯০ দশকে হরিণাকুন্ডু, ঝিনাইদহ সদর, চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা ডাকাতির মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৪টি হত্যাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। ৭ থেকে ৮ বছর ধরে হড়িনাকুণ্ডুর নারানকান্দি এলাকায় বাওড় দখল করে মাছ চাষ করে আসছিল হানিফ। ২০১৪ সালে তিনি জেল থেকে বের হন। আর ২০১৭ সালে ওই বাওড়ের মৎসজীবী সমিতির সভাপতি জিয়াউল হককে গুলি করে হত্যা করে বাওড়ের দখল নেন। সম্প্রতি বাওড় দখলকে কেন্দ্র করে কয়েকটি চরমপন্থি গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এসব কারণে জাসদ গণবাহিনী তাকে হত্যা করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হরিণাকুন্ডুর কুলবাড়িয়ার আব্দুর রহমান নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার অপরাধে হানিফের বিরুদ্ধে ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। হানিফের এক ভাই হরিণাকুন্ডু উপজেলার ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। আরেক ভাই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি। হানিফ নিজেই হড়িনাকুণ্ডু উপজেলা মৎসজীবী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বলে জানা যায়। এছাড়া নিহত অপর দুই ব্যক্তি জনযুদ্ধের সামরিক কমান্ডার হানিফের সহযোগী বলে ধারণা করা হচ্ছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনাস্থল শৈলকুপার ত্রিবেণী ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর শ্মশান ঘাটের ওই স্থান থেকে রাতেই শর্টগানের ৭ রাউন্ড ও পিস্তলের ৬ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। এর মধ্যে শুধুমাত্র শর্টগানের ৪ রাউন্ড গুলি হয়েছিল।
এদিকে শৈলকুপা থানায় আসা নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বল জানা যায়, হানিফ আলীর সঙ্গে সম্প্রতি ৫ আগস্টের পর হরিণাকুন্ডু উপজেলার রামদিয়া বাওড়ের দখল নিয়ে পার্শ্ববর্তী চুয়াডাঙ্গা জেলার তিয়োড়বিল এলাকার বিএনপির কিছু মানুষের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। প্রায়ই তারা বাওড়ের মাছ মেরে নিত বলেও অভিযাগ ছিল। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
নিহত হানিফের ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম ইশা বলেন, শুক্রবার বিকেলে ভাইয়ের মোবাইলে একটি কল আসে, এরপর কিছু না বলে সে বড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরে রাতে তার মৃতদেহ পাই।
তিনি বলেন, বাওড়ের মাছ ধরা নিয়ে স্থানীয় কিছু মানুষের সঙ্গে বিরোধ চলছিল। এর জেরে হত্যাকাণ্ডটি হতে পারে।
রাইসুলের মামা লিটন হোসেন বলেন, রাইসুল বিকেল ৫টায় বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর রাতে তারা সংবাদ পান রাইসুলকে হত্যা করা হয়েছে। রাইসুল এলাকায় কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল না বলে তিনি দাবি করেন।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের মাসুদ রানা বলেন, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে তারা ৪টা গুলির শব্দ শুনতে পায়। এরপর এলাকাবাসী গুলির শব্দ শুনে ঘটনা জানার চেষ্টা করেও কোনো কারণ জানতে পারে না। পরে রাত ১০টার দিকে পুলিশ আসলে জানা যায় শ্মশান ঘাটে গুলিবিদ্ধ তিনটি মরদেহ পরে আছে। পাশে আছে দুটি মোটরসাইকেল, দুটি হেলমেট, একটি বস্তা ও একটি বাজারের ব্যাগ।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুম খান বলেন, গুলিবিদ্ধ তিনটি মরদেহ শুক্রবার রাতেই উদ্ধার করে শৈলকুপা থানায় নিয়ে আসা হয়। নিহতের স্বজনরা তাদের নাম পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রস্ততি চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঝ ন ইদহ উপজ ল র মরদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
ব্যক্তিগত সম্পদ ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম এবিসির এক সাংবাদিকের ওপর ভীষণ চটে যান। ওই সাংবাদিকের কারণে ‘অস্ট্রেলিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে’ বলে সতর্ক করেন তিনি। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে ওই সাংবাদিকের ব্যাপারে নালিশ করারও হুমকি দেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের লনে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন ট্রাম্প। এবিসির সাংবাদিক জন লায়ন্সও তাঁকে প্রশ্ন করছিলেন। লায়ন্স এবিসিতে প্রচারিত ফোর কর্নারস অনুষ্ঠানের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন, তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।
গতকাল লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি কতটা ধনী হয়েছেন? তিনি আরও উল্লেখ করেন, ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে অবস্থান করা সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানি না।’ তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ট্রাম্প অর্গানাইজেশন নামে তাঁর যে পারিবারিক ব্যবসাটি আছে, সেটি এখন তাঁর সন্তানেরা পরিচালনা করেন।
ট্রাম্পের দাবি, তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগেই বেশির ভাগ ব্যবসায়িক চুক্তি হয়েছে।
লায়ন্সের সঙ্গে কথোপকথনে ট্রাম্প এটাও বলেছেন যে তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজের সঙ্গে প্রথমবারের মতো সরাসরি বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন। আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে ওই বৈঠক হতে পারে।এরপর লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’
এরপর লায়ন্সকে ট্রাম্প জিজ্ঞাসা করেন, তিনি (লায়ন্স) কোথা থেকে এসেছেন।
এরপর ট্রাম্প চটে গিয়ে বলেন, এ ধরনের প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে লায়ন্স ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি’ করছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলতে থাকেন, ‘আমার মতে, আপনি এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার অনেক ক্ষতি করছেন। আর তারা আমার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায়। আপনি জানেন, আপনার নেতা (অ্যান্থনি আলবানিজ) শিগগিরই আমার সঙ্গে দেখা করতে আসছেন। আমি তাঁকে আপনার ব্যাপারে বলব। আপনি খুব খারাপ ভঙ্গিতে কথা বলছেন। আপনি আরও ভালোভাবে কথা বলুন।’
সাংবাদিক লায়ন্স ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ব্যক্তিগত ব্যবসা করা ঠিক কি না? ট্রাম্প বলেন, ‘আসলে আমি নই, আমার সন্তানেরা ব্যবসা চালাচ্ছে।’এরপর লায়ন্স আবারও কিছু বলতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘চুপ করুন’।
গত জুনে কানাডায় জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে প্রথমবারের মতো ট্রাম্প ও আলবানিজের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। তবে হঠাৎই তা বাতিল হয়ে যায়। এর পর থেকে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করছেন আলবানিজ।
আরও পড়ুনট্রাম্প-জেলেনস্কির বাগ্বিতণ্ডার পর কী বললেন স্টারমার ও আলবানিজ০১ মার্চ ২০২৫সম্প্রতি আলবানিজ বলেছেন, নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের সম্মেলন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদানকালে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর দেখা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিউইয়র্কে আমাদের একে অপরের সঙ্গে দেখা হবে। আগামী সপ্তাহের মঙ্গলবার রাতে তিনি একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন। এ ছাড়া চলতি বছরের শেষ নাগাদ বিভিন্ন ফোরামে আমাদের দেখা হবে। এটা সম্মেলনের মৌসুম।’
ট্রাম্পের সঙ্গে আলবানিজের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জরুরি বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে আছে পেন্টাগনের অকাস পারমাণবিক সাবমেরিন চুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতে আরও ব্যয় বাড়াতে ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার কাছে যে দাবি জানিয়েছেন, তা নিয়ে পর্যালোচনা।