দেশের আয় প্রবৃদ্ধির বড় উৎস কৃষি খাত। কিন্তু কৃষি পণ্য উৎপাদনে দেশে আশানুরূপ বহুমুখীকরণ হয়নি। তাই লাভজনক না হওয়া সত্ত্বেও দেশের ৫৫ শতাংশ কৃষক শুধু ধান চাষ করেন।

অষ্টম সানেম বার্ষিক অর্থনীতিবিদ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ‘কৃষি প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণ’ শীর্ষক অধিবেশনে এ কথাগুলো বলেন আলোচকেরা। আজ শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অনুষ্ঠিত এ অধিবেশন সঞ্চালনা করেন আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইএফপিআরআই) দারিদ্র্য, জেন্ডার ও অন্তর্ভুক্তিবিষয়ক পরিচালক ড্যানিয়াল গিলিগান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইএফপিআরআইয়ের দেশীয় প্রতিনিধি আখতার আহমেদ এবং দুই সহযোগী গবেষণা ফেলো মেহরাব বখতিয়ার ও মুগ্ধ মাহজাব।

মূল প্রবন্ধে গবেষক আখতার আহমেদ বলেন, কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির ওপর দেশের আয় প্রবৃদ্ধির বড় ধরনের যোগসাজশ রয়েছে। কারণ, কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেকগুলো খাত। তাই এ খাতের প্রবৃদ্ধি হলে সার, সেচ যন্ত্রপাতি, কীটনাশক, প্যাকেজিং, পণ্য পরিবহন, প্রক্রিয়াকরণ, গুদামজাতকরণ, বিপণন ইত্যাদি খাতেও প্রবৃদ্ধি হয়। বিশেষ করে গরিব মানুষের আয় বৃদ্ধিতে কৃষি প্রবৃদ্ধি সরাসরি তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ খাতের প্রবৃদ্ধির সম্প্রসারণ হবে কীভাবে।

প্রবন্ধে বলা হয়, ২০২২ সালের হিসাবে দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষের বসবাস গ্রামে, যাঁরা জীবনধারণের জন্য কৃষি খাতের ওপর নির্ভরশীল। দারিদ্র্য বিমোচনে কৃষি ও অকৃষি—উভয় খাত ভূমিকা রাখলেও অকৃষির চেয়ে কৃষির ভূমিকা তিন গুণের বেশি।

প্রবন্ধে কৃষি প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণের জন্য তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেন আখতার আহমেদ। এগুলো হলো ব্যাংকঋণ তথা অর্থায়নের অভাব, প্রযুক্তি জ্ঞানের অভাব ও উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজন করতে না পারা। এ কারণে লাভজনক না হওয়া সত্ত্বেও ৫৫ শতাংশ কৃষক ধান চাষ করেন।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এই খাতে গবেষণা বাড়ানো এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের সহজ ব্যাংকঋণের আওতায় আনার সুপারিশ করেন প্রবন্ধকার।

তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের কৃষি প্রবৃদ্ধি সম্প্রসারণের পাশাপাশি শ্রমবাজার; দারিদ্র্য, বৈষম্য ও ব্যক্তির কল্যাণ; বাণিজ্য ও আঞ্চলিক অন্তর্ভুক্তি এবং জেন্ডার অর্থনীতি—এ পাঁচটি কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রবন ধ

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ