ঢাকার ধামরাই উপজেলার কুল্লা ইউনিয়নে পূর্বশত্রুতার জেরে দিনের বেলায় স্ত্রীর সামনে পিটিয়ে সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল হোসেনকে (৫০) হত্যার ঘটনায় এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৮টার দিকে এ তথ্য জানান ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম। এর আগে, বিকেল ৩টার দিকে ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নে ও মানিকগঞ্জের সিংগাইরে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কুল্লা ইউনিয়নের মাখুলিয়া গ্রামের হোম টাউন (গ্রীন সিটি) আবাসিক প্রকল্পের ফাঁকা অংশে বাবুল হোসেনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। রাতে তার স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখ এবং ১০-১২ জন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে ধামরাই থানায় মামলা করেন।

ধামরাই থানা পুলিশ জানায়, মাখুলিয়া এলাকায় সাবেক ইউপি সদস্যকে হত্যার ঘটনায় তদন্তে নামে ধামরাই থানা পুলিশ। এ সময় ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নে ও মানিকগঞ্জের সিংগাইরে অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

মনিরুল ইসলাম বলেন, সাবেক ইউপি সদস্যকে হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী মামলা করেন। মামলা দায়েরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অভিযান পরিচালনা করে ১১ ও ১২ নম্বর আসামি অনিক ও শয়নকে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর ও ধামরাইয়ের কুল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আগামীকাল আদালতে পাঠানো হবে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

এদিকে, স্থানীয় লোকজন জানান, আকসিরনগর আবাসিক প্রকল্পের শুরুর দিকে জমি ক্রয়, মাটি ভরাটসহ নানা কাজে মালিকপক্ষের হয়ে কাজ করতেন কুল্লা ইউনিয়নে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য বাবুল হোসেন। পরে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে জমির মালিকানা নিয়ে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে আবাসন প্রকল্পটির মালিকপক্ষ। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজনের পক্ষে কাজ করেন বাবুল। সম্প্রতি তিনি আবার আবাসন প্রকল্পের মালিকপক্ষের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। এ কারণে স্থানীয় কয়েকজন বাবুলের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।

নিহতের স্ত্রী ইয়াসমিন গতকাল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমার সামনেই আমার স্বামীকে তারা মেরেছে। আমার স্বামী ফসলের মাঠে বাইক দিয়ে সরিষা মাড়াই করছিলেন। আমাদের পাড়ার ৫-৬ জন টেঁটা, হাতুড়ি, লোহার পাইপ নিয়ে সেখানে আসে। কিছু না বলে তাকে একটু দূরে নিয়ে ঘেরাও করে চোখ তুলে ফেলে ও হাত-পা ভেঙে হত্যা করে।”

তিনি বলেন, “আফসান, মনির, আরশাদ ও আরশাদের ছেলেসহ আরও দুজন ছিল। আকসিরনগর হাউজিংয়ের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছিল একসময়। তবে এখন তাকে কোথাও যেতে দিতাম না।”

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আকসির নগর প্রকল্পের ভেতরে একটি পুকুর থেকে নিহত বাবুলের বাবা ইদ্রিস আলীর মরদেহ উদ্ধার করেছিল ধামরাই থানা পুলিশ।

ঢাকা/সাব্বির/বকুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর প রকল প র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ