Samakal:
2025-06-15@09:50:53 GMT

দেশের দ্রুততম মানব

Published: 22nd, February 2025 GMT

দেশের দ্রুততম মানব

মোহাম্মদ ইসমাইল। দেশের দ্রুততম মানব। গত চার আসরে ইংল্যান্ডপ্রবাসী ইমরানের কাছে হারতেন ইসমাইল। চার বছর পর ফের দ্রুততম মানবের খেতাব পেয়ে উচ্ছ্বসিত এই স্প্রিন্টার। টানা সাত মাস কঠোর পরিশ্রম এবং হেরে যাওয়া দিনের স্মৃতিকে শক্তি বানিয়ে কীভাবে নামের সঙ্গে ফের জড়ালেন দ্রুততম মানবের তকমা সেই গল্পই শুনেছেন আশিক মুস্তাফা  

দেশের দ্রুততম মানবের খেতাব মোহাম্মদ ইসমাইলের গলায়। যদিও এটি তার জন্য নতুন নয়। এর আগে চারবার নিজের নামের সঙ্গে জড়িয়েছেন দ্রুততম মানবের তকমা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৪৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ছেলেদের বিভাগে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ১০ দশমিক ৬১ সেকেন্ড সময় নিয়ে দেশের দ্রুততম মানব হয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্প্রিন্টার মোহাম্মদ ইসমাইল। মাত্র ০ দশমিক ০২ সেকেন্ড বেশি সময় নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন একই দলের রাকিবুল হাসান। তৃতীয় হওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জুবাইল ইসলাম সময় নিয়েছেন ১০ দশমিক ৮৯ সেকেন্ড। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াইয়ে ৯০ মিটার পর্যন্ত এগিয়ে ছিলেন রাকিবুল। শেষ পর্যায়ে গিয়ে তাঁকে টপকে ঝলক দেখান ইসমাইল। চার বছর পর নিজের হারানো উপাধি ফিরে পেয়ে কেমন লাগছে– জানতে চাইলে মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘এবারের আসর অন্যান্য আসর থেকে আমার জন্য একটু আলাদা ছিল। কারণ, এবার টার্গেট ছিল দ্রুততম মানব হওয়ার। আসলে বলতে পারেন আমি আমার রাজত্ব ফিরে পেয়েছি। এতে আমার অপেক্ষার প্রহরও ফুরিয়েছে। এর জন্য করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম। কোচ আব্দুল্লাহ হেল কাফি স্যারের কাছে টানা সাত মাস প্রশিক্ষণও নিয়েছি। চার বছর পর আবারও বাংলাদেশের দ্রুততম মানব হয়েছি পঞ্চম বারের মতো। এর আগে আমি চারবার দেশের দ্রুততম মানব হয়েছি। সর্বশেষ ২০২১ সালে দ্রুততম মানব হয়েছিলাম। পরের টানা চারবার দ্রুততম মানব হয়েছেন ইংল্যান্ডপ্রবাসী স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান। আমি এখানেই শেষ করতে চাই না। আগামীতেও এই 
ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই।’  
একটু পেছনে ফিরে… 
আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনের গল্প জানতে চাইলে এই স্প্রিন্টার কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। চোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসে। একটু থেমে বুক ফুলিয়ে বলেন, ‘আসলে আমি গ্রামের ছেলে। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার কড়িকান্দি গ্রামে। যদিও জন্ম হয়েছিল ঢাকায় মামার বাড়িতে। সে ২০০০ সালের কথা। জন্মের পরেই গ্রামে ফিরে আসে পরিবার। এরপর গ্রামেই বেড়ে ওঠা। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে আমার অবস্থান তিন নম্বরে। গ্রামের স্কুলেই প্রথম পাঠ। স্কুলে পড়ার সময় বিভিন্ন 
প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। মনে পড়ে, কলেজে পড়ার সময়ে একবার উপজেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জেলা পর্যায়ে খেলার জন্য কুমিল্লায় গিয়েছিলাম। সেখানে ১০০ মিটার লং জাম্পে গোল্ড মেডেল পেলাম। আমার নাম ছড়িয়ে পড়ল সব জায়গায়। অনেক পরে একদিন গ্রামে ফুটবল খেলা হচ্ছিল। সেখানে আমাকে দেখে আমাদের শিক্ষক রবিউল করিম লিওন স্যার বলেন, তুমি এখানে কেন? জানতে চাইলাম কেন স্যার? উত্তরে স্যার বলেন, তোমার তো জাতীয় দলে থাকার কথা। তুমি এখানে কী করো? তারপর স্যার আমাকে জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে কুমিল্লা জেলা দলে ডাক পাওয়ার কথা জানান। আমার যেন আনন্দ ধরে না। তড়িঘড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে দলের সঙ্গে ঢাকায় আসি। এরপর জাতীয় পর্যায়েও লং জাম্পে দ্বিতীয় হলাম আমি। এর কিছুদিন পর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কোচ রফিকুল ইসলাম রফিক স্যার আমাকে নৌবাহিনীতে যোগদান করান এবং প্রশিক্ষণ করান। তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে লং জাম্পে টানা ১০ বার স্বর্ণপদক জয় এবং প্রথম দ্রুততম মানব হওয়ার গৌরব অর্জন করলাম।’ 
হেরে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো
দ্রুততম মানব তকমা পাওয়ার পর থেকেই দৌড়ানো শুরু করেন মোহাম্মদ ইসমাইল। জানতে চাইলাম, আপনার এই দৌড়ের 
অনুপ্রেরণায় কে? ইসমাইল বলেন, ‘সেই ছোটবেলা থেকেই আমার অনুপ্রেরণায় উসাইন বোল্ট। তাঁর মতো এখনও তেমন অর্জন পাইনি বলেই মনে করি। আমি মনে করি, আমার জার্নি নতুন করে শুরু হয়েছে। আসলে উত্থান-পতন সব কিছুতেই আছে। মাঝে আমি অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম, আমার সব কিছুই হয়তো শেষ। না। আমি ঘুরে দাঁড়িয়েছি। কঠোর পরিশ্রম করেছি। এখনও করছি। আগামীতেও করতে চাই। আমি জীবনের নতুন গতি খুঁজে পেয়েছি এবার। দেশে অনেক পদক পেয়েছি। এবার লক্ষ্য আন্তর্জাতিক আসর থেকে বাংলাদেশের জন্য পদক নিয়ে আসা। বিশ্ব মঞ্চে উড়াতে চাই লাল-সবুজের পতাকা। বেশি দিন নয়, ইনশাআল্লাহ্‌, সামনের আন্তর্জাতিক আসর থেকেই অর্জন করতে চাই সাফল্য!’  
বর্তমান ব্যস্ততা ও আগামীর স্বপ্ন
অলস সময় কাটে না এই স্প্রিন্টারের। কারণ তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন হেরে যাওয়ার দুঃসহ দিন। তাই প্রতিনিয়ত করেন পরিশ্রম। বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে জানতে চাইলে ইসমাইল বলেন, ‘সামনে ওয়ার্ল্ড  ইনডোর অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ। অনুষ্ঠিত হবে চীনে। সেই প্রতিযোগিতাকে সামনে রেখে ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাবে দুই-একদিনের মধ্যে। আমি আমার রুটিন কাজ করে যাচ্ছি। স্বপ্নের কথা তো বললামই; বিশ্বমঞ্চে লাল-সবুজের পতাকা ওড়াতে চাই। আমার আগামীর স্বপ্ন সাউথ এশিয়ান গেমস বা সাফ থেকে বাংলাদেশের অ্যাথলেটিক্সের জন্য স্বর্ণপদক অর্জন করা।’
ইসমাইলদের হাত ধরে নিশ্চয়ই আসবে সাফল্য। কারণ, এই তরুণরা হেরেও ঘুরে দাঁড়াতে জানে। না হারলে যে জেতার প্রকৃত মানেই বোঝা যায় না! 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

কোটার অধিনায়ক বাভুমা ও প্রেসিডেন্টের সঙ্গে করমর্দন

আর মাত্র এক রান!

লর্ডস তখন থমথমে উত্তেজনায় ঠাসা। গ্যালারির প্রায় সব দক্ষিণ আফ্রিকান দাঁড়িয়ে, যেন নিশ্বাস আটকে রেখেছেন। ব্যালকনিতে সবাই উঠে দাঁড়ালেও একজন তখনো বসে—টেম্বা বাভুমা। গালে হাত, চোখ মাঠের ভেতরে। ঠিক যেন একটা জীবন ধরে যে স্বপ্নটা দেখে এসেছেন, সেই মুহূর্তটা এখন তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে।

মিচেল স্টার্কের ফুলটস বলটা কাইল ভেরেইনার ব্যাটে লেগে ফাঁকা জায়গায় ছুটতেই কী যেন হলো। কেউ চিৎকার দিলেন, কেউ দিলেন লাফ, কেউ পাশের জনকে জড়িয়ে ধরলেন, কারও–বা চোখে জল। সেই উন্মাদনার কেন্দ্রে, ঠিক মাঝখানে, বাভুমা মাথাটা নিচু করে ফেললেন। যেন আড়াল করতে চাইলেন কিছু। জয় এসেছে। অবশেষে। একের পর ‘কাছে তবু কত দূরের’ যন্ত্রণা, ‘চোকার্স’ তকমার গ্লানি, আর একজন কৃষ্ণাঙ্গ অধিনায়কের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া মৌন সংশয়—সবকিছুই যেন সেই নত মাথার আড়ালে লুকিয়ে। চারপাশের হইচইয়ের মধ্যে ওই নিঃশব্দতায় তখন দুনিয়া–কাঁপানো চিৎকারও যেন নগণ্য।

কয়েক সেকেন্ড পর বাভুমা মাথা তুললেন। হয়তো আরেকটু সময় নীরবেই কাটিয়ে দিতেন। কিন্তু তাঁর চারপাশে তখন জড়ো হয়েছেন দলের অন্যরা। কেউ কাঁধে হাত রাখছেন, কেউ জড়িয়ে ধরছেন। লর্ডসের ব্যালকনিতে তখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ের উদ্‌যাপন শুধু নয়, একটি জাতির আর একটি মানুষের জয়ের গল্পও লেখা হচ্ছিল।

বাভুমার গল্পে অনেক অধ্যায়। একটি কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান পরিবারে এমন এক সময়ে তাঁর জন্ম, যখন বর্ণবাদের থাবায় ক্ষতবিক্ষত দক্ষিণ আফ্রিকা। অন্ধকারে মানুষ আলো খোঁজে, হতাশায় খোঁজে আশা। সে কারণেই কি না দাদি তাঁর নাম রেখেছিলেন টেম্বা। সোজা বাংলায় বললে ‘আশা’ বা ‘বিশ্বাস’।

পরিবারের বাইরে, নিজের পাড়ার বাইরে আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বাভুমাকে নিয়ে সবচেয়ে বড় আশাবাদের শুরুটা ২০১৪ সালে। সে বছরের ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে টেস্ট অভিষেক তাঁর। দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দলে সেটিই ছিল কোনো কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানের প্রথম ম্যাচ। তখন থেকেই বাভুমার বড় চ্যালেঞ্জটা হয়ে পড়ে দুটি।

প্রথমত, দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভালো করা। খুব বিশেষ কিছু নয়, জাতীয় দলের হয়ে খেলা সব ক্রিকেটারের জন্যই এমন চ্যালেঞ্জ থাকে। কিন্তু বাভুমার জন্য এর চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে ওঠে কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানরাও যে ক্রিকেট খেলতে পারে, ব্যাটিং করতে পারে, দলের জন্য কিছু এনে দিতে পারে, সেটি প্রমাণ করা। আরও স্পষ্ট করে বললে দক্ষিণ আফ্রিকার জটিল সমাজব্যবস্থায় সেই চ্যালেঞ্জ জেতা, যেখানে প্রতিনিয়ত অনুচ্চারে প্রশ্ন ওঠে—কে খেলতে পারে আর কে পারে না, কে ব্যাট করতে পারে আর কে পারে না, কে অধিনায়ক হতে পারে আর কে পারে না, কে জিততে পারে আর কে পারে না।

দক্ষিণ আফ্রিকা দলের চাপের মধ্যে ভেঙে পড়া, নকআউট ম্যাচে হেরে যাওয়ার ঘটনা ১৯৯২ বিশ্বকাপ থেকেই ঘটে আসছে। বিভিন্ন ম্যাচে বিভিন্ন ধরনের কারণ। কোথাও নিজেদের ভুল, কোথাও আবহাওয়া–দুর্ভাগ্য। এর মধ্যে ২০১৫ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হার নিয়ে আলোচনা কিছুটা ব্যতিক্রম। বলা হয়ে থাকে, সেদিন কোটাপ্রথার কারণেই নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।

ফাইনালে জায়গা করার ম্যাচটিতে কাইল অ্যাবোটকে বসিয়ে ভারনন ফিলান্ডারকে খেলিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। একাদশে অশ্বেতাঙ্গ খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়াতেই বোর্ড কর্তারা টিম ম্যানেজমেন্টকে চাপ দিয়ে তা করিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এটি অস্বীকার করলেও ২০১৬ সালে রীতিমতো ঘোষণা দিয়েই কোটাপ্রথা প্রবর্তনের ঘোষণা দেয় দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড সিএসএ। দলের মধ্যে ন্যূনতম ৫৪ শতাংশ অশ্বেতাঙ্গ রাখতে হবে, যার মধ্যে ১৮ শতাংশ হবে কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান (এ সিদ্ধান্ত পরে পর্যালোচনা করা হয়)।

ওই কোটাব্যবস্থাই বাভুমার জন্য হয়ে ওঠে হিতে বিপরীত। দলে জায়গা করার মতো যথেষ্ট পারফরম্যান্স করলেও অনেকের চোখেই তিনি হয়ে ওঠেন ‘কোটার খেলোয়াড়’। ধারণাটা তীব্রতর হয়ে ওঠে ২০২১ সালের মার্চে বাভুমা অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর। শুরুতে ছিলেন টি–টোয়েন্টি ও ওয়ানডের অধিনায়ক, ২০২২ বিশ্বকাপের পর টি–টোয়েন্টি ছেড়ে দিয়ে টেস্টের দায়িত্ব নেন। বাভুমার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা

২০২১, ২০২২ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কোনোটিতে ভালো করেনি। দুই আসরেই বাদ পড়ে সুপার টুয়েলভ থেকে। ভালো খেলেননি বাভুমা নিজেও। তবে এ ধরনের ঘটনায় অন্যদের সমালোচনাটা সামর্থ্যকেন্দ্রিক হলেও বাভুমার জন্য তা ‘কোটা’র দিকে মোড় নেয়। এত কিছুর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ড তাঁর ওপর আস্থা রেখেছে ভালোমতোই। ‘কোটার অধিনায়ক’ নামে ফিসফাস থাকলেও বাভুমাই থাকেন দক্ষিণ আফ্রিকার টেস্ট দলের নেতৃত্বে। বিশেষ করে ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনে কুইন্টন ডি ককের হাঁটু মুড়ে সংহতি না জানানোর ঘটনায় ভূমিকা এবং দলের মধ্যে ঐক্য রক্ষার জন্য প্রশংসা কুড়ান একজন নেতার মতোই।

এরপর ২০২৩ সালে রানের মধ্যে থেকেই ভারতে বিশ্বকাপে খেলতে যান বাভুমা। এই আসরে দক্ষিণ আফ্রিকা লিগ পর্বে ৯ ম্যাচের ৭টিতে জিতে সেমিফাইনালে ওঠে। তবে বাভুমা ব্যাট হাতে রান না পাওয়ায় আর টুর্নামেন্ট শুরুর আগের দিন ‘ক্যাপ্টেনস ডে’ অনুষ্ঠানে ঘুমিয়ে পড়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হয়ে ওঠেন ‘মিম ক্যারেক্টার’।

তবে সেসব ট্রল, ব্যর্থতা আর সংশয়—সব পেছনে ফেলে বাভুমা এখন দক্ষিণ আফ্রিকান ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে গর্বিত মুহূর্তের কেন্দ্রীয় চরিত্র। ২০২৪ সালের ১৪ জুন, লর্ডসের মাঠে দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিট—একটি মুহূর্ত, যা এনে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বহুদিনের কাঙ্ক্ষিত আইসিসি ট্রফি। ১২টি সেমিফাইনাল ও ১টি ফাইনালে হারের পর শেষমেশ আইসিসির শিরোপা জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা।

তবে বাভুমার জন্য মুহূর্তটি দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়িয়েও কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের জয়ে নিহিত। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর প্রথমবার যে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন, সেখানে বলেছিলেন, ‘প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান হিসেবে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার গভীর তাৎপর্য আমি বুঝি।’ সেদিন খেলার দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেকে একজন ‘লিগ্যাসি তৈরি করা’ অধিনায়ক হিসেবে পরিচিত করতে চাওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন বাভুমা। সেই লিগ্যাসিই তৈরি করেছেন লর্ডসে।

২০১৬ সালের জানুয়ারিতে কেপটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম সেঞ্চুরি করেছিলেন বাভুমা। এর কয়েক দিন পর নিউল্যান্ডসের এসএসি জুনিয়র স্কুলে বছরের প্রথম টার্মের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের জন্য একটা লেখা নিয়ে আসেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। লেখাটি এই স্কুলের পুরোনো এক ম্যাগাজিন থেকে নেওয়া। ২০০১ সালে নিউল্যান্ডসের এসএসি জুনিয়র স্কুলে গ্রেড সিক্সের শিক্ষার্থীদের বলা হয়েছিল, ১৫ বছর পর তুমি নিজেকে কোথায় দেখতে চাও, লেখো। একটি ছেলে লিখেছে, ১৫ বছর পর আমি নিজেকে দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে দেখি, এ জন্য মিস্টার এমবেকির (দক্ষিণ আফ্রিকার তখনকার প্রেসিডেন্ট) সঙ্গে করমর্দন করছি।’

দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখা সেই ছেলেটার নাম টেম্বা বাভুমা। সেই বাভুমা দক্ষিণ আফ্রিকাকে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন এত দিন। এবার জিতেছেন ট্রফি, যে ট্রফির জন্য দেশের অপেক্ষা দশকের পর দশকের। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা নিশ্চয়ই করমর্দন করবেন তাঁর সঙ্গে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার দিনই প্রেসিডেন্ট একটা টুইট করেছেন। সেই টুইটে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের পাশাপাশি বিশেষভাবে আছে বাভুমার নামও, ‘আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় প্রোটিয়াদের অভিনন্দন। সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে নিয়ে আমরা গর্বিত। এই জয় তোমার, এই জয় গোটা জাতির।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ