মোহাম্মদ ইসমাইল। দেশের দ্রুততম মানব। গত চার আসরে ইংল্যান্ডপ্রবাসী ইমরানের কাছে হারতেন ইসমাইল। চার বছর পর ফের দ্রুততম মানবের খেতাব পেয়ে উচ্ছ্বসিত এই স্প্রিন্টার। টানা সাত মাস কঠোর পরিশ্রম এবং হেরে যাওয়া দিনের স্মৃতিকে শক্তি বানিয়ে কীভাবে নামের সঙ্গে ফের জড়ালেন দ্রুততম মানবের তকমা সেই গল্পই শুনেছেন আশিক মুস্তাফা
দেশের দ্রুততম মানবের খেতাব মোহাম্মদ ইসমাইলের গলায়। যদিও এটি তার জন্য নতুন নয়। এর আগে চারবার নিজের নামের সঙ্গে জড়িয়েছেন দ্রুততম মানবের তকমা। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৪৮তম জাতীয় অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপে ছেলেদের বিভাগে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে ১০ দশমিক ৬১ সেকেন্ড সময় নিয়ে দেশের দ্রুততম মানব হয়েছেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর স্প্রিন্টার মোহাম্মদ ইসমাইল। মাত্র ০ দশমিক ০২ সেকেন্ড বেশি সময় নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছেন একই দলের রাকিবুল হাসান। তৃতীয় হওয়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জুবাইল ইসলাম সময় নিয়েছেন ১০ দশমিক ৮৯ সেকেন্ড। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াইয়ে ৯০ মিটার পর্যন্ত এগিয়ে ছিলেন রাকিবুল। শেষ পর্যায়ে গিয়ে তাঁকে টপকে ঝলক দেখান ইসমাইল। চার বছর পর নিজের হারানো উপাধি ফিরে পেয়ে কেমন লাগছে– জানতে চাইলে মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, ‘এবারের আসর অন্যান্য আসর থেকে আমার জন্য একটু আলাদা ছিল। কারণ, এবার টার্গেট ছিল দ্রুততম মানব হওয়ার। আসলে বলতে পারেন আমি আমার রাজত্ব ফিরে পেয়েছি। এতে আমার অপেক্ষার প্রহরও ফুরিয়েছে। এর জন্য করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম। কোচ আব্দুল্লাহ হেল কাফি স্যারের কাছে টানা সাত মাস প্রশিক্ষণও নিয়েছি। চার বছর পর আবারও বাংলাদেশের দ্রুততম মানব হয়েছি পঞ্চম বারের মতো। এর আগে আমি চারবার দেশের দ্রুততম মানব হয়েছি। সর্বশেষ ২০২১ সালে দ্রুততম মানব হয়েছিলাম। পরের টানা চারবার দ্রুততম মানব হয়েছেন ইংল্যান্ডপ্রবাসী স্প্রিন্টার ইমরানুর রহমান। আমি এখানেই শেষ করতে চাই না। আগামীতেও এই
ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চাই।’
একটু পেছনে ফিরে…
আজকের এই অবস্থানে আসার পেছনের গল্প জানতে চাইলে এই স্প্রিন্টার কিছুটা স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন। চোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসে। একটু থেমে বুক ফুলিয়ে বলেন, ‘আসলে আমি গ্রামের ছেলে। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার কড়িকান্দি গ্রামে। যদিও জন্ম হয়েছিল ঢাকায় মামার বাড়িতে। সে ২০০০ সালের কথা। জন্মের পরেই গ্রামে ফিরে আসে পরিবার। এরপর গ্রামেই বেড়ে ওঠা। ৪ ভাই-বোনের মধ্যে আমার অবস্থান তিন নম্বরে। গ্রামের স্কুলেই প্রথম পাঠ। স্কুলে পড়ার সময় বিভিন্ন
প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। মনে পড়ে, কলেজে পড়ার সময়ে একবার উপজেলা পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে জেলা পর্যায়ে খেলার জন্য কুমিল্লায় গিয়েছিলাম। সেখানে ১০০ মিটার লং জাম্পে গোল্ড মেডেল পেলাম। আমার নাম ছড়িয়ে পড়ল সব জায়গায়। অনেক পরে একদিন গ্রামে ফুটবল খেলা হচ্ছিল। সেখানে আমাকে দেখে আমাদের শিক্ষক রবিউল করিম লিওন স্যার বলেন, তুমি এখানে কেন? জানতে চাইলাম কেন স্যার? উত্তরে স্যার বলেন, তোমার তো জাতীয় দলে থাকার কথা। তুমি এখানে কী করো? তারপর স্যার আমাকে জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে কুমিল্লা জেলা দলে ডাক পাওয়ার কথা জানান। আমার যেন আনন্দ ধরে না। তড়িঘড়ি বাড়ি গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে দলের সঙ্গে ঢাকায় আসি। এরপর জাতীয় পর্যায়েও লং জাম্পে দ্বিতীয় হলাম আমি। এর কিছুদিন পর বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কোচ রফিকুল ইসলাম রফিক স্যার আমাকে নৌবাহিনীতে যোগদান করান এবং প্রশিক্ষণ করান। তাঁর কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে লং জাম্পে টানা ১০ বার স্বর্ণপদক জয় এবং প্রথম দ্রুততম মানব হওয়ার গৌরব অর্জন করলাম।’
হেরে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো
দ্রুততম মানব তকমা পাওয়ার পর থেকেই দৌড়ানো শুরু করেন মোহাম্মদ ইসমাইল। জানতে চাইলাম, আপনার এই দৌড়ের
অনুপ্রেরণায় কে? ইসমাইল বলেন, ‘সেই ছোটবেলা থেকেই আমার অনুপ্রেরণায় উসাইন বোল্ট। তাঁর মতো এখনও তেমন অর্জন পাইনি বলেই মনে করি। আমি মনে করি, আমার জার্নি নতুন করে শুরু হয়েছে। আসলে উত্থান-পতন সব কিছুতেই আছে। মাঝে আমি অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম, আমার সব কিছুই হয়তো শেষ। না। আমি ঘুরে দাঁড়িয়েছি। কঠোর পরিশ্রম করেছি। এখনও করছি। আগামীতেও করতে চাই। আমি জীবনের নতুন গতি খুঁজে পেয়েছি এবার। দেশে অনেক পদক পেয়েছি। এবার লক্ষ্য আন্তর্জাতিক আসর থেকে বাংলাদেশের জন্য পদক নিয়ে আসা। বিশ্ব মঞ্চে উড়াতে চাই লাল-সবুজের পতাকা। বেশি দিন নয়, ইনশাআল্লাহ্, সামনের আন্তর্জাতিক আসর থেকেই অর্জন করতে চাই সাফল্য!’
বর্তমান ব্যস্ততা ও আগামীর স্বপ্ন
অলস সময় কাটে না এই স্প্রিন্টারের। কারণ তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন হেরে যাওয়ার দুঃসহ দিন। তাই প্রতিনিয়ত করেন পরিশ্রম। বর্তমান ব্যস্ততা কী নিয়ে জানতে চাইলে ইসমাইল বলেন, ‘সামনে ওয়ার্ল্ড ইনডোর অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ। অনুষ্ঠিত হবে চীনে। সেই প্রতিযোগিতাকে সামনে রেখে ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাবে দুই-একদিনের মধ্যে। আমি আমার রুটিন কাজ করে যাচ্ছি। স্বপ্নের কথা তো বললামই; বিশ্বমঞ্চে লাল-সবুজের পতাকা ওড়াতে চাই। আমার আগামীর স্বপ্ন সাউথ এশিয়ান গেমস বা সাফ থেকে বাংলাদেশের অ্যাথলেটিক্সের জন্য স্বর্ণপদক অর্জন করা।’
ইসমাইলদের হাত ধরে নিশ্চয়ই আসবে সাফল্য। কারণ, এই তরুণরা হেরেও ঘুরে দাঁড়াতে জানে। না হারলে যে জেতার প্রকৃত মানেই বোঝা যায় না!
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?