মহারণের আগে সব বিভাগেই পিছিয়ে ‘আনপ্রেডিকটেবল’ পাকিস্তান
Published: 23rd, February 2025 GMT
ভারত-পাকিস্তানের ম্যাচ এখন আর ক্রিকেটের সেরা ব্যাটেল গুলোর একটি না। তবে এরপরও এই ম্যাচ ঘুরেই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায় ক্রিকেট বিশ্ব। বাণিজ্যিক দিক তো বটেই, উত্তাপ, আবেগ ও রোমাঞ্চ বিবেচনায় এখনও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ ‘ক্রিকেট ক্লাসিকোর’ মর্যাদা পায়। আজ দুপুর ৩টায় দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার আগে দুই দল দাঁড়িয়ে দুই মেরুতে।
ভারতের ‘ঘোপে না টিকা’ নিরাপত্তার সংশয়ের কারণে তারা স্বাগতিক পাকিস্তানে গিয়ে খেলতে রাজি ছিল না। তাই হাইব্রিড মডেলে রোহিত শর্মাদের ম্যাচ গুলো অনুষ্ঠিত হবে দুবাইয়ে। বাংলাদেশের বিপক্ষে হেসে-খেলে জিতে শেষ চারের পথে অনেকটাই এগিয়ে টিম ব্লুজ। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে আজকের ম্যাচে জিতলেই সেমি ফাইনাল এক প্রকার নিশ্চিত হয়ে যাবে ভারতের।
অন্যদিকে ১৯ দিনের আইসিসি ট্রফির এবারের আয়োজক পাকিস্তানের বিদায় ঘন্টা বেজে যেতে পারে মাত্র ৫ দিনেই। ভারতের বিপক্ষে হারলেই আসর থেকে বিদায় ঘন্টা বেজে যাবে মোহাম্মদ রিজওয়ানদের।
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের কোনো উত্তাপ টের পাচ্ছে না ভারত!
ভারতের মুখোমুখি হওয়ার আগে পাকিস্তানের প্রেরণা ২০১৭
এই মহারণের আগে দেখে নেয়া যাক কোন দল কোথায় এগিয়ে:
ভারতের ওপেনিং জুটি এগিয়ে আছে এই ম্যাচে। রোহিত, শুভমান গিল কেবল পাকিস্তানের তুলনায় না, বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের যে কোন দলের চেয়ে এগিয়ে।
মিডল অর্ডারের লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি। একদিকে শ্রেয়াস আইয়ার, অক্ষর প্যাটেল, লোকেশ রাহুল। অন্যদিকে রিজওয়ান, আগা সালমানই শেষ কিছুদিন যাবত টানছে পাকিস্তানকে। এই জায়গাতাতে নিঃসন্দেহে পাকিস্তান এগিয়ে থাকবে।
অলরাউন্ডারের দিকে তাকালে বর্তমান ভারত দল ক্রিকেট বিশ্বের বাকি দলগুলোর তুলনায় বেশ এগিয়ে। বিশেষ করে উপমহাদেশীয় কন্ডিশনে হার্দিক পান্ডিয়া, অক্ষর, রবীন্দ্র জাদেজা এবং ওয়াশিন্টন সুন্দরদের নিয়ে গড়া টিম ব্লুজদের অলরাউন্ডাররা ব্যাটে-বলে বেশ এগিয়ে।
মোহাম্মদ শামি, হার্ষিত রানা এবং বাকি অলরাউন্ডারদের কল্যাণে বোলিংয়েও বেশি এগিয়ে ভারত। শাহীন আফ্রিদি, নাসিম শাহ এবং হারিস রাউফদের নিয়ে গড়া পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণকে খাট করার সুযোগ নেই। তবে ম্যাচ পরিস্থিতি অনুমান, শৃঙ্খলা এবং ফিটনেস বিবেচনায় ভারতীয়রাই বেশি কার্যকরী।
সবশেষ ম্যাচ অ্যাওয়ারনেস বা পরিস্থিতি পর্যালোচনার দিকে নজর দিলেও নিঃসন্দেহে এগিয়ে থাকবে রোহিত-কোহলিরা।
এভাবে বেশির ভাগ বিভাগেই পিছিয়ে থেকে আজকের মহারণে নিজেদের অস্বস্তি রক্ষার মিশনে নামছে পাকিস্তান। তবে টিম গ্রীন একটা জায়গায় এগিয়ে। তারা যে বড্ড অঅনুমেয়। দেয়ালে পিঠ ঠেকলেই সেরাটা বের হয়ে আসে পাকিস্তানের। আজ কি আরও একবার তেমনটাই দেখবে ক্রিকেট বিশ্ব? জানতে চোখ রাখুন টিভি স্ক্রিনে।
ঢাকা/নাভিদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু
বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।
ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।
জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।
সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।
বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।