যুক্তরাষ্ট্রের চাপ থেকে বের হতে হবে: ফ্রেডরিখ মের্ৎস
Published: 24th, February 2025 GMT
জার্মানির পার্লামেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের সমালোচনা করেছেন সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ৎস। সোমবার সন্ধ্যায় বার্লিনে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের সভাপতি ও সম্ভাব্য চ্যান্সেলর ফ্রেডরিখ মের্ৎস নির্বাচনোত্তর অনুষ্ঠানে এ সমালোচনা করেন। তাঁর দল ছাড়াও সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা বর্তমান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ যুক্তরাষ্ট্রের নেতাদের এমন আচরণের নিন্দা করেছেন।
জার্মানির নির্বাচনী প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক হস্তক্ষেপের সমালোচনা করে মের্ৎস বলেছেন, প্রসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর পরামর্শদাতা ইলন মাস্ক কতৃ৴ক জার্মানির নির্বাচনী প্রচারে হস্তক্ষেপকে রাশিয়ার কর্মকাণ্ডের মতোই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপগুলো মস্কোর হস্তক্ষেপের চেয়ে কম নাটকীয় ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত তা ব্যর্থ হয়েছে।’
মের্ৎস মনে করেন, নির্বাচন নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীদের নানা মন্তব্য ও উসকানি থেকে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, বর্তমান মার্কিন সরকার ইউরোপের ভাগ্যের প্রতি উদাসীন। বিশেষ করে তিনি প্রযুক্তি ধনকুবের ইলন মাস্কের বক্তব্যের সমালোচনা করেন। মাস্ক বারবার প্রকাশ্যে জার্মানির কট্টরবাদী অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড (এএফডি) দলটির পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মের্ৎস বলেন, জার্মানি এখন চাপের মধ্যে রয়েছে। তবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তাঁদের প্রথম কাজ হবে ইউরোপে ঐক্য তৈরি করা এবং ইউরোপকে শক্তিশালী করা।
জার্মানির এই নেতা আরও বলেন, ধাপে ধাপে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ থেকে বের হতে হবে। সে জন্য আগামী জুন মাসের শেষে ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনের জন্য তিনি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। মের্ৎস ধারণা করছেন, ন্যাটো সামরিক জোট এমন থাকবে না। দ্রুত ইউরোপীয় নিজস্ব প্রতিরক্ষা সক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন হবে এবং তা সময় বলে দেবে।
সম্প্রতি কিয়েভ এবং ইউরোপীয় নেতাদের বাদ দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন নিয়ে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রচেষ্টায় ইউরোপজুড়ে রাজনীতিকেরা হতবাক হয়ে যান। ফলে ইউরোপীয় নেতারা তাঁদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।
জোট সরকার গঠিত হতে পারে
জার্মানির পার্লামেন্টের নির্বাচনে সর্বশেষ ফলাফলে ৬৩০ আসনের মধ্যে ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ ও সিএসইউ) দলটি ২০৮টি আসন, কট্টরবাদী অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড (এএফডি) ১৫২টি আসন, সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি) ১২০টি আসন, পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি ৮৫টি আসন এবং বাম দল দ্য লিংকে পেয়েছে ৬৪ আসন।
জোট বেঁধে সরকার গড়ার ঐতিহ্য অনুযায়ী, সিডিইউ ও সিএসইউ ও এসপিডির সঙ্গে পরিবেশবাদী গ্রিন পার্টি মিলে জোট গঠিত হতে পারে। গ্রিন পার্টিকে বাইরে রেখেও জোট সরকার গঠনের কথা আলোচনায় রয়েছে।
তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর জার্মান গণতন্ত্র এই প্রথম পার্লামেন্টে ১৫২টি আসন নিয়ে কট্টরবাদী এএফডি প্রধান বিরোধী দল হতে যাচ্ছে।
নির্বাচনে জার্মান ভোটারদের বিপুল অংশগ্রহণ ছিল। ৮৩ শতাংশ ভোটার উপস্থিত ছিলেন। মেৎর্সের দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) এবং তাদের জোটভুক্ত দল ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়ন (সিএসইউ) ২৮ দশমিক ৬ শতাংশের বেশি ভোট আশা করেছিল। তবে এত ভোটার উপস্থিতির পরও তারা তা পায়নি।
এএফডির সঙ্গে কাজ করার সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন মের্ৎস। জার্মানিতে সাধারণত মূলধারার দলগুলোকে কট্টর ডানপন্থীদের সঙ্গে জোট করতে দেখা যায় না।
সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের মের্ৎসের জোটে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকলেও এ দল নির্বাচনে তাদের এযাবৎকালের সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে। সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট নেতা ও বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, নির্বাচনের ফলাফল তাঁর দলের জন্য একটি তিক্ত পরাজয়। তিনি জোট গঠনের আলোচনায় অংশ নেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন।
৬৯ বছর বয়সী মের্ৎস কখনো মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেননি। তবে প্রচারকালে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, জার্মান চ্যান্সেলর হলে ইউরোপে নেতৃত্ব দেখাবেন এবং ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জোরদার করবেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মের্ৎসের বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে জার্মানরাও মার্কিন নাগরিকদের মতো করেই কাণ্ডজ্ঞানহীন এজেন্ডা, বিশেষ করে জ্বালানি ও অভিবাসন নিয়ে ক্লান্ত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ শুরু
কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ। মহান মে দিবস উপলক্ষে ঢাকার নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত এ সমাবেশে হাজার হাজার নেতকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কারী গোলাম মোস্তফার কোরআন তেলাওয়াত শুরু করেন।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
দুপুর আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের জেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা যোগ দেন সমাবেশে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সমাবেশে শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে ১২ দফা দাবি।
সমাবেশ স্থলে দেখা যায়, নেতাকর্মীরা ব্যানার, মাথায় নানা রঙের ক্যাপ, দলীয় টি-শার্ট পরে নয়পল্টনে আসছেন। জায়গায় জায়গায় চলছে স্লোগান, দলীয় সংগীত আর ঢাক-ঢোলের বাদ্য।
সমাবেশস্থলে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) আহ্বায়ক হেলাল খান, সদস্যসচিব জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সমাবেশস্থলে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। জিরো পয়েন্ট থেকে পল্টনমুখী সড়ক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা রাখা হয়েছে।
টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রথম এতো বড় সমাবেশ করছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট প্রথম বাধাহীন সমাবেশ করে বিএনপি। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। পুরো এলাকায় ছিল উচ্ছ্বল নেতাকর্মীদের ভিড়।
ঢাকা/এএএম/ইভা