ডায়াবেটিক রোগীরা অনেক ক্ষেত্রেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগে থাকেন– রোজা রাখতে পারবেন কিনা? ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা, সময়, খাবারের নিয়ম, হাঁটা বা ব্যায়াম এসব আনুষঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ডায়াবেটিক রোগীরা কিছুটা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় থাকেন। রোজার সময় ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা নির্ধারণ, কিছুটা প্রাত্যহিক জীবনধারার পরিবর্তন, কিছু বিশেষ সতর্কতা, নিয়ম আর শৃঙ্খলা মেনে চললে বেশির ভাগ রোগীই রোজা রাখতে পারেন।
যাদের ডায়াবেটিস খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা, ওষুধ সেবন বা ইনসুলিন গ্রহণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে আছে তারা লো রিস্ক এবং মডারেট রিস্ক গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। এসব রোগী রোজার শুরুতে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে কোনো ধরনের জটিলতা ছাড়াই রোজা রাখতে পারেন। অতি বয়স্ক বারবার রক্তে গ্লুকোজ কমে যাওয়ার প্রবণতা, কিডনির জটিলতায় আক্রান্ত, স্বল্পমেয়াদি অন্য অসুস্থতায় আক্রান্ত, হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের শিকার ডায়াবেটিক রোগীদের হাই ও ভেরিহাই রিস্ক গ্রুপে ফেলা হয়েছে। তাদের রোজা রাখতে হলে চিকিৎসকের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থেকেই রাখতে হবে।
সে জন্য রোগীদের রমজান শুরুর মাসখানেক আগেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পরামর্শ নিতে হবে।
রোজা পালনে ঝুঁকিপূর্ণ কারা
l অতি বৃদ্ধ বা ভগ্নস্বাস্থ্যের রোগী।
l গত তিন মাসের মধ্যে হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা সুগার অধিক বেড়ে গিয়ে কিটো অ্যাসিডোসিস বা হাইপার অসমোলার স্টেটের ইতিহাস থাকলে।
l ঘন ঘন হাইপোগ্লাইসেমিয়া বা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে।
l হাইপোগ্লাইসেমিয়া বুঝতে অক্ষম ব্যক্তি।
l অনিয়ন্ত্রিত টাইপ-১ ডায়াবেটিস বা দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত টাইপ-২ ডায়াবেটিস।
l অন্তঃসত্ত্বা ডায়াবেটিক মা। বা অন্তঃসত্ত্বার সময় ডায়াবেটিস হলে।
l দীর্ঘমেয়াদি কিডনি জটিলতা (স্টেজ ৪ ও ৫), ডায়ালাইসিসের রোগী।
l হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হলে।
l দিনে একাধিকবার ইনসুলিন গ্রহণ করলে।
l ভয়াবহ ইনফেকশন, যক্ষ্মা, ক্যান্সার থাকলে।
দীর্ঘমেয়াদি কিডনি জটিলতা (স্টেজ-৩), স্থিতিশীল হৃদরোগ বা স্ট্রোক, স্তন্যদাত্রী মা, অধিক কায়িক পরিশ্রমকারী ডায়াবেটিক রোগীদের রোজা রাখার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
l বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নিয়মতান্ত্রিকভাবে রোজা রাখলে ডায়াবেটিক রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তুলনায় উপকৃতই হন বেশি।
রমজানে খাদ্যাভ্যাস 
রমজানে খাওয়ার ধরন ও সময়সূচিতে বড় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত ইফতার ও সেহরিতে মূল খাবার গ্রহণ করা হয়। 
l ক্যালরির মাত্রা ঠিক রেখে এই সময়ে যথেষ্ট পরিমাণে শাকসবজি, তাজা ফলমূল খেতে হবে।
l চিনি বা গুড়ের তৈরি খাবার পরিহার করে জটিল শর্করা, যেমন– লাল চালের ভাত, রুটি, ওটস, কর্নফ্লেক্স খাওয়া ভালো। একসঙ্গে অনেক খাবার না খেয়ে ভাগ করে খাওয়া উচিত। 
l ইফতারে অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া ও তেলযুক্ত উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার পরিহার করা উচিত।
l ইফতারে শরবত বা মিষ্টি জুস না খেয়ে ডাবের পানি, ফলের রস, লেবুপানি পান করতে পারেন।
l সেহরি না খেয়ে রোজা রাখবেন না।
l ইফতার ও সেহরির মাঝখানে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। 
l সেহরির নির্ধারিত সময়ের শেষভাগে ও মাগরিবের আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খাবার গ্রহণ করুন।
l ডায়াবেটিসের ওষুধ ও ইনসুলিন 
 চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনবারের ওষুধ একবার বা দু’বারে পরিবর্তন করে আনুন।
l যারা ট্যাবলেট খান, তারা সকালের ডোজটি ইফতারের শুরুতে এবং রাতের ডোজটি অর্ধেক পরিমাণে সেহরির আধা ঘণ্টা আগে খাবেন। অবশ্যই ওষুধের মাত্রা চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করে নিন।
l সকালের ইনসুলিন ডোজটি ইফতারের আগে, রাতের ডোজটি কিছুটা কমিয়ে সেহরির আধা ঘণ্টা আগে নিতে হবে। কতটা কমাবেন, তা চিকিৎসক নির্ধারণ করে দেবেন।
l রোজা রাখা অবস্থায় ইফতারির নির্ধারিত সময়ের ১০-১৫ মিনিট আগে ইনসুলিন গ্রহণে রোজা নষ্ট হবে না। 
l ইফতারির সময় নির্ধারিত ওষুধ বা ইনসুলিন গ্রহণ করে অপেক্ষা না করে ইফতার সেরে ফেলুন।
l সেহরিতে ইনসুলিন বা ওষুধ গ্রহণ করে কোনো অবস্থাতেই না খেয়ে বা পরিমাণে কম খেয়ে রোজা রাখবেন না।
হাঁটা বা ব্যায়াম 
রোজা রেখে দিনের বেলায় অধিক হাঁটা বা কায়িক পরিশ্রম পরিহার করতে হবে। সন্ধ্যার পর বাসায় হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। তারাবির নামাজ আদায় করলে ব্যায়ামের বিকল্প হিসেবে কাজ করে।
ডায়াবেটিস পরীক্ষা 
অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, রোজা রাখা অবস্থায় রক্ত পরীক্ষায় রোজা পালনে কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। তাই সেহরি বা ইফতারির দুই ঘণ্টা পর ও বিকেলে অথবা খারাপ লাগলে দিনের যে কোনো সময় ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাবেন। বিকেলে বা দিনের যে কোনো সময় রক্তের গ্লুকোজ ৪ মি.

মোল/লি. বা তার কম অথবা ১৬.৭ মি. মোল/লি. বা তার বেশি হলে সঙ্গে সঙ্গে রোজা ভেঙে ফেলা উত্তম। সম্ভব হলে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করার একটি গ্লুকোমিটার সংগ্রহে রাখুন।
হাইপোগ্লাইসেমিয়ার উপসর্গ সম্পর্কে সচেতন থাকুন। রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে বুক ধড়ফড়, হাত-পা কাঁপা, ঘাম, মাথা ঘোরানো, অসংলগ্নতা এমনকি জ্ঞান হারানোর মতো ঘটনা ঘটতে পারে। 
এ রকম অবস্থায় চিনি বা মিষ্টিজাতীয় কোনো খাবার খেয়ে রোজা ভেঙে ফেলতে হবে। রোজা রেখে কখনোই আগের মাত্রার ওষুধ বা ইনসুলিন নেবেন না। নিজে নিজে ডায়াবেটিসের ওষুধ সমন্বয় করবেন না, এতে ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে। v

[এন্ডোক্রাইনোলজি বিশেষজ্ঞ, ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা]

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইনস ল ন গ রহণ চ ক ৎসক র ইফত র র l ইফত র পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম

উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।

এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে  ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ঢাকা/রায়হান/রফিক 

সম্পর্কিত নিবন্ধ