সিপিএমের রাজনৈতিক প্রস্তাবে মোদি সরকার ‘ফ্যাসিস্ট’ নয়, শুরু বিতর্ক
Published: 25th, February 2025 GMT
ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার ‘ফ্যাসিস্ট’ বা ‘নিও ফ্যাসিস্ট’ কি না, তা নিয়ে কেরালায় শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক বিতর্ক। সিপিএমের ২৪তম পার্টি কংগ্রেসের প্রাক্কালে দলের পক্ষে রাজ্যে রাজ্যে রাজনৈতিক প্রস্তাবের যে খসড়া পাঠানো হয়েছে, বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে তা নিয়েই।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, মোদি সরকারের ১১ বছরের কাজকর্মে নব্য ফ্যাসিস্ট বৈশিষ্ট্যের বিচ্ছুরণ ঘটলেও সরকারকে ফ্যাসিস্ট আখ্যা দেওয়া হচ্ছে না। প্রস্তাব অনুযায়ী, বিরোধীদের দমানো ও গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধে কর্তৃত্ববাদী মোদি সরকারের চাপ ও প্রতিক্রিয়াশীল হিন্দুত্ববাদের প্রসারের মধ্য দিয়ে নব্য ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্যগুলোর বিচ্ছুরণ দেখা দিচ্ছে। সিপিএমের আদর্শগত মুখপত্র বলে পরিচিত চিন্তা সাপ্তাহিকে প্রস্তাবের ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে, বিজেপি ও আরএসএসের কাজকর্মে নব্য ফ্যাসিবাদী লক্ষণ থাকলেও মোদি সরকারকে ফ্যাসিস্ট বা নব্য ফ্যাসিস্ট বলা হচ্ছে না। ভারত সরকারকে ওভাবে চিত্রায়িতও করা হচ্ছে না।
রাজ্যে রাজ্যে ওই প্রস্তাব আলোচনার পর পার্টি কংগ্রেসে তা বিবেচিত হবে। তামিলনাড়ুর মাদুরাইয়ে পার্টি কংগ্রেস চলবে এপ্রিল মাসের ২ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত। দলের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সীতারাম ইয়েচুরির সময় যে সিপিএমের চোখে বিজেপি ও আরএসএস ছিল ‘ফ্যাসিবাদী’, তাঁর মৃত্যুর পর পলিটব্যুরোর ‘কো-অর্ডিনেটর’ প্রকাশ কারাতের প্রভাবে সেই রাজনৈতিক লাইন থেকে দল সরে আসতে চাইছে কি না, বিতর্ক শুরু হয়েছে তা নিয়েই।
সিপিএমের এই ‘বিচ্যুতি’ কেরালার বাম ফ্রন্টের শরিক সিপিআইকেও বিস্মিত করেছে। সিপিআই রাজ্য সম্পাদক বিনয় বিশ্বম বলেছেন, রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলের ক্ষেত্রে ধর্মীয় বিশ্বাসকে কীভাবে কাজে লাগাতে হয়, ফ্যাসিবাদ সেটাই শেখায়। বিজেপি ঠিক সেটাই করে চলেছে। সিপিআই ও সিপিআই (এমএল) বিজেপিকে ফ্যাসিবাদী দল মনে করে। সেই লাইন থেকে সরে এসে পার্টি কংগ্রেসের আগে সিপিএম এখন ‘নব্য ফ্যাসিবাদী চরিত্রের বিচ্ছুরণ’ নিয়ে কথা বলায় দুই দলই বিস্মিত।
একই রকম বিস্মিত কংগ্রেসও। জাতীয় স্তরে বিজেপির মোকাবিলায় তৈরি ইন্ডিয়া জোটের শরিক হয়েও সিপিএম হঠাৎ কেন মোদি সরকারকে ফ্যাসিবাদী না বলে সরে আসতে চাইছে, সেই চর্চা কংগ্রেসেও চলছে। ২৩তম পার্টি কংগ্রেসের গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, মোদি সরকার আরএসএসের ফ্যাসিস্ট কর্মসূচিগুলো রূপায়ণ করছে। সেই সিপিএমের এবার কেন মোদি সরকারকে ফ্যাসিবাদী বলতে অনীহা?
কেরালা বিধানসভার বিরোধী নেতা কংগ্রেসের ভি ডি সতীশন এর উত্তরে বলেছেন, সিপিএম চাইছে রাজ্য চালাতে বিজেপির সহায়তা পেতে। বহু বছর ধরেই কেরালায় বিজেপির সঙ্গে সিপিএম গোপন সম্পর্ক রেখে চলেছে।
কেরালার শীর্ষ কংগ্রেস নেতা রমেশ চেন্নিথালার ব্যাখ্যায়, রাজ্য শাখাগুলোয় পাঠানো সিপিএমের এই রাজনৈতিক প্রস্তাব ওদের রাজনৈতিক কৌশল। লক্ষ্য, ২০২৬ সালের এপ্রিল মাসে বিধানসভা নির্বাচনে জেতা। জিততে গেলে তাদের বিজেপির পরোক্ষ সমর্থন প্রয়োজন। ২০২১ সালেও এভাবে ওরা জিতেছিল। চেন্নিথালা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন আজ পর্যন্ত বিজেপি অথবা নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেননি। এই রাজনৈতিক প্রস্তাব সংঘ পরিবারের কাছে আত্মসমর্পণ ছাড়া আর কিছু নয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতে আরএসএস নিষিদ্ধের দাবি জানালেন কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে
ভারতের কংগ্রেস দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে আবারও দাবি করেছেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘকে (আরএসএস) দেশে নিষিদ্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, স্বয়ং সরদার বল্লভভাই প্যাটেল সরকারি কর্মচারীদের আরএসএসের কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন।
খাড়গে বলেছেন, বিজেপি সরকার ২০২৪ সালে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তাই ওই নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করতে হবে।
আজ শুক্রবার দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে খাড়গে বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত মত হলো আরএসএসকে নিষিদ্ধ করা উচিত। তিনি আরএসএসের আদর্শকে ‘বিষের’ সঙ্গে তুলনা করেন।
খাড়গে বলেন, সরদার প্যাটেল বলেছিলেন, ‘সরকারি চাকরিতে থাকাকালে আরএসএসের জন্য কাজ করা উচিত নয়।’ কংগ্রেস নেতা বলেন, ‘তিনি সরকারি কর্মচারীদের আরএসএস এবং জামাত-ই-ইসলামীর কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। মোদি সরকার গত বছরের ৯ জুলাই সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। আমরা দাবি করছি, এই নিষেধাজ্ঞা আবার চালু করা হোক।’
বল্লভভাই প্যাটেল ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। আজ তাঁর জন্মবার্ষিকী। ভারতে এবার বিজেপি সরকার দিনটিকে ‘রাষ্ট্রীয় একতা দিবস’ হিসেবে পালন করছে।
খাড়গে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আরএসএস মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যু উদ্যাপন করেছিল, এমন কথা সরদার প্যাটেল একটি চিঠিতে লিখেছিলেন। তিনি ১৯৪৮ সালে এই কট্টর হিন্দুবাদী গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে যুক্তি দেন।
মল্লিকার্জুন খাড়গে জোর দিয়ে বলেন, সরদার প্যাটেল দেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। জওহরলাল নেহরু বিশ্বাস করতেন, সরদার প্যাটেলের অবদান ছিল অপরিমেয়। ১৯৪৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তিনি আরএসএস সম্পর্কে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আরএসএস গান্ধীজির মৃত্যু উদ্যাপন করেছিল এবং মিষ্টি বিতরণ করেছিল। এরপর সরকারের কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না।’
খাড়গে বলেন, প্যাটেলের কাছে পৌঁছানো প্রতিবেদনে দেখা যায়, আরএসএস ও হিন্দু মহাসভার মতাদর্শের কারণে দেশে যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, সেটাই গান্ধীর হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ছিল।
বিজেপি অবশ্য কংগ্রেসের এই দাবির সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, কংগ্রেস এত দিন ধরে প্যাটেলের অবদানকে ‘উপেক্ষা’ করে এখন আরএসএসকে আক্রমণ করার জন্য তাঁর নাম ব্যবহার করছে।
খাড়গের নিজ রাজ্য কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার সম্প্রতি সরকারি কর্মচারীদের আরএসএসের র্যালিতে অংশ নেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ নিয়ে বিজেপির সঙ্গে রাজ্য সরকার বিবাদে জড়িয়েছিল।