পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও নেপথ্যে জড়িতদের বের করতে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলেছেন, এখন পরিবেশ হয়েছে। দেশ তদন্ত কমিশনের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশের অমূল্য সম্পদ ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তা হত্যাকারীদের নিরাপদ রাখার কোনো সুযোগ নেই। এর পেছনের কুশীলবদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) মিলনায়তনে পিলখানায় নিহত শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে আয়োজিত শোকসভায় সামরিক কর্মকর্তাসহ শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা এ দাবি জানান। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বিডিআর মহাযজ্ঞের ঘটনায় সেনা শহীদদের স্মরণে রাওয়া এ সভার আয়োজন করে।

সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, পিএসও লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল ইসলাম, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীও সভায় বক্তব্য দেন।

আর কখনোই যেন এমন ঘটনা না ঘটে

বিডিআর মহাযজ্ঞের মতো ঘটনা এ দেশে যাতে আর না ঘটে, সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেশের জন্য কাজ করব। আন্তরিকভাবে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে এই দোয়াই করব, বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনোই যেন এ রকম কোনো নৃশংস নির্বিচার প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে। এবং নিরীহ মানুষ আর কখনো যাতে নির্যাতিত না হয়।’

শহীদ সেনা দিবসের স্বীকৃতি ইতিহাসে একটি ‘মাইলফলক’ হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল ইসলাম বুলবুল। এ জন্য সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ব্যক্তিগত উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল ইসলাম বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারির ওই ঘটনা সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। কোনো ষড়যন্ত্র ছাড়া, কোনো পরিকল্পনা ছাড়া অথবা ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য এমন হতে পারে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করছে। এই ক্ষত ভোলার নয়। এখান থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমি মনে করি, সশস্ত্র বাহিনী সঠিক পথেই চলছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ধরনের পদক্ষেপ বা তাৎক্ষণিক কার্যবিধি নেওয়া হবে।’

৫৭ সেনা কর্মকর্তার স্মরণে আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন সেনাপ্রধানসহ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। আজ মঙ্গলবার, রাওয়া ক্লাবে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত

এছাড়াও পড়ুন:

কোনো ব্যক্তির মনে যাতে ক্ষমতা ধরে রাখার ইচ্ছা না আসে, সেজন্য নির্বাচন প্রয়োজন

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কেউ যখন এক ব্যক্তিকে অপরিহার্য মনে করে, তখনই স্বেচ্ছাচারিতা তৈরি হয়। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মনে যাতে ক্ষমতা ধরে রাখার ইচ্ছা না আসে, সেজন্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রয়োজন।

মহান মে দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (১ মে) রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত শ্রমিক সমাবেশে   ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এছাড়াও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও নজরুল ইসলাম খানসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য রাখেন। শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ।

তারেক রহমান বলেছেন, গত দেড় দশকে পরাধীনতার শেকলে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। সেই ফ্যাসিবাদের পতন হলেও জনগণের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার পরিপূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এজন্য মানুষ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে সরকারের কাছে দাবি পৌঁছে দিতে পারছে না।

তিনি আরো বলেন, বিশেষ পরিস্থিতির সরকার অবৈধ না, কিন্তু জনগণের নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সবাইকে ভালো রাখার জন্যই বিএনপি রাজনীতি করে। বিএনপি সরকার প্রতিবারই মানুষের অধিকারের প্রতি সম্মান রেখে কাজ করেছে, রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। তাই, বিএনপির নেতাকর্মীদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়নি।

রাখাইনে ত্রাণ সহায়তা দিতে মানবিক করিডর দেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণকে জানায়নি সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা করেনি। এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত কি না, সেই বিতর্ক তুলতে চাই না। তবে, করিডর দেওয়া না দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে।

তারেক রহমান আরো বলেন, বিদেশিদের স্বার্থ নয়, দেশের মানুষের স্বার্থ নিশ্চিত করতে হবে। মিয়ানমার, ভারত বা অন্য দেশ নয়, সবার আগে বাংলাদেশ। বৈষম্যহীন নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা।

বর্তমান সরকারের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ সংস্কার ও নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বিভেদ উসকে দিতে চায়। জনগণের মনে এমন সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করুন। তাহলে জনগণের সন্দেহ কেটে যাবে।

তিনি বলেন, দেশে এখন সংস্কার নিয়ে আলোচনা চলছে। কিন্তু, অর্থনীতির চালিকাশক্তি শ্রমিকরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় তাদের কথা বলতে পারছেন না। এজন্য নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) শিল্পীদের দেশাত্মবোধক গান ও গণসংগীত পরিবেশনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় সমাবেশ।

বিভিন্ন জেলা ও শহর থেকে আসা বিএনপির নেতাকর্মীদের মাথায় ছিল লাল, সবুজ, সাদা ও কালো টুপি, পরনে ছিল টি-শার্ট। 

সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়া পল্টন এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়।

ঢাকা/এএএম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ