এখন পরিবেশ হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ ও নেপথ্যের কুশীলবদের বিচার চান শহীদ সেনা পরিবারের সদস্যরা
Published: 25th, February 2025 GMT
পিলখানায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও নেপথ্যে জড়িতদের বের করতে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁরা বলেছেন, এখন পরিবেশ হয়েছে। দেশ তদন্ত কমিশনের দিকে তাকিয়ে আছে। দেশের অমূল্য সম্পদ ৫৭ জন মেধাবী সেনা কর্মকর্তা হত্যাকারীদের নিরাপদ রাখার কোনো সুযোগ নেই। এর পেছনের কুশীলবদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (রাওয়া) মিলনায়তনে পিলখানায় নিহত শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের স্মরণে আয়োজিত শোকসভায় সামরিক কর্মকর্তাসহ শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরা এ দাবি জানান। ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বিডিআর মহাযজ্ঞের ঘটনায় সেনা শহীদদের স্মরণে রাওয়া এ সভার আয়োজন করে।
সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, পিএসও লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল ইসলাম, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীও সভায় বক্তব্য দেন।
আর কখনোই যেন এমন ঘটনা না ঘটে
বিডিআর মহাযজ্ঞের মতো ঘটনা এ দেশে যাতে আর না ঘটে, সে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে দেশের জন্য কাজ করব। আন্তরিকভাবে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে এই দোয়াই করব, বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনোই যেন এ রকম কোনো নৃশংস নির্বিচার প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে। এবং নিরীহ মানুষ আর কখনো যাতে নির্যাতিত না হয়।’
শহীদ সেনা দিবসের স্বীকৃতি ইতিহাসে একটি ‘মাইলফলক’ হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল ইসলাম বুলবুল। এ জন্য সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ব্যক্তিগত উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল ইসলাম বলেন, ‘২৫ ফেব্রুয়ারির ওই ঘটনা সাধারণ কোনো ঘটনা নয়। কোনো ষড়যন্ত্র ছাড়া, কোনো পরিকল্পনা ছাড়া অথবা ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য এমন হতে পারে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করছে। এই ক্ষত ভোলার নয়। এখান থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। আমি মনে করি, সশস্ত্র বাহিনী সঠিক পথেই চলছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে ধরনের পদক্ষেপ বা তাৎক্ষণিক কার্যবিধি নেওয়া হবে।’
৫৭ সেনা কর্মকর্তার স্মরণে আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন সেনাপ্রধানসহ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। আজ মঙ্গলবার, রাওয়া ক্লাবে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলকে মোকাবিলায় ইরানের আর কী কী উপায় আছে
টানা তিন দিন ধরে ইসরায়েলের হামলা মোকাবিলা করে যাচ্ছে ইরান। ইতিমধ্যে সামরিক নেতৃত্বের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ ২৪০ জনের বেশি ইরানি নিহত হয়েছেন। তবে ইরান একক প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে যেভাবে পাল্টা আঘাত হেনেছে, তা ইসরায়েল আগে কখনো অনুভব করেনি। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বৃহত্তম শহরগুলো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছে, যার মধ্যে আছে তেল আবিব ও হাইফার মতো শহরও।
ইসরায়েল-ইরান উভয় পক্ষ কে কার কতটা ক্ষতি করেছে এবং ঠিক কোন স্থানগুলোয় আঘাত হেনেছে, অনেক ক্ষেত্রে তা স্পষ্ট নয়। কারণ, সামরিক হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সঠিকভাবে পাওয়া কঠিন। উভয় পক্ষের কাছে কত ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুত আছে এবং ইসরায়েল ও ইরান কত দিন এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে, তা–ও জানা কঠিন।
আমরা যা জানি, তা হলো ইরানের কাছে আছে মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি। যেখানে ধারণা করা হয়, তাদের কাছে বিভিন্ন পাল্লা ও গতির হাজার হাজার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে।
বর্তমান হারে সম্ভবত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে ইরানের। ইসরায়েলের উল্লেখযোগ্য ক্ষতির কারণ হতে এটি যথেষ্ট সময়। দেশটির মানুষ এমন হামলা ও ক্ষতির সঙ্গে অভ্যস্তও নয়; বিশেষ করে গাজা উপত্যকা, লেবানন ও ইয়েমেনের দুর্বল সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণ ছাড়া।
ইরান আরও প্রকাশ করছে—যেসব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা করা হয়েছে, সেগুলোর চেয়ে আরও উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র কতটা কার্যকর হতে পারে সেই সক্ষমতা। রোববার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো ব্যবহৃত ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলি প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছে।
ইসরায়েলের ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেছে, ইরান আগের আক্রমণগুলোয় যেসব পুরোনো ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল, সেগুলোর তুলনায় রোববার ব্যবহার করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো শক্তি ও গতিতে আরও উন্নত।
অবশ্য ইরানের কাছে উন্নত এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বিশাল মজুত রয়েছে তা নয় এবং শেষ পর্যন্ত ব্যবহার করতে করতে এটি ফুরিয়ে যাবে। তবে এরপরও সাধারণ মানের ক্ষেপণাস্ত্র, হাজার হাজার ড্রোনসহ এসব উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের ক্ষতি করার জন্য ইরানের যথেষ্ট সামরিক ক্ষমতা রয়েছে। যারা বিশ্বাস করে যে স্বল্প মেয়াদে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মতো শক্তি ইরানের নেই, তাদেরও ভুল প্রমাণ করতে পারবে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ এড়ানোইরানের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুচ্ছ ইসরায়েলের আয়রন ডোমকে গুরুতরভাবে পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। যে কারণে ইরানের আক্রমণ প্রতিরোধ–প্রতিহত করার জন্য ইসরায়েলকে তাদের প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জোর দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে বর্তমান সংঘাতের পক্ষ নয়; বরং তিনি হুমকি দিয়েছেন, ইরান যদি মধ্যপ্রাচ্য মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানে, তবে এর পরিণতি মারাত্মক হবে। মার্কিন স্বার্থের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা সামরিক ঘাঁটিগুলোও আছে।
মার্কিন ঘাঁটি বা কর্মীদের ওপর আক্রমণই সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ডেকে আনবে ইরানের জন্য, যে কারণে এমন আক্রমণ তারা এড়াতে চায়। তাই এ ব্যাপারে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সতর্ক পদক্ষেপ নিয়েছেন।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করতে চাইবেন না অথবা ইসরায়েলের আক্রমণের সঙ্গে মার্কিন সামরিক শক্তিগুলোও যুক্ত হোক—এমন অজুহাত তৈরি করতে চাইবেন না। একটি যৌথ ইসরায়েলি-মার্কিন আক্রমণ ইরানের সবচেয়ে সুরক্ষিত পারমাণবিক স্থানগুলো ধ্বংস করে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি করবে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।
ইরানের সরকার ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, ইসরায়েল যদি তার আক্রমণ বন্ধ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় ফিরেও আসতে সম্মত হয়, এরপরও তারা প্রতিশোধ নেওয়া চালিয়ে যাবে।এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব ও তুরস্কের মতো দেশগুলোয় অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলো আক্রমণে যুক্ত হয়ে যেতে পারে, যেসব দেশ ইরানের প্রত্যক্ষ শত্রু নয় এবং তেহরান এই দেশগুলোকে সংঘাতে টানতে চাইবে না। এসব দেশ ইরানের জন্য সম্ভাব্য মধ্যস্থতাকারী হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু ইরানের অন্যান্য বিকল্প আছে। ইরান ও ওমানের মধ্যে অবস্থিত হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার বারবার হুমকি দিয়েছে তেহরান। প্রতিদিন লাখ লাখ ব্যারেল তেলের পরিবহন হয় এ প্রণালি দিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, এমন ঘটনা ঘটলে তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে ১০০ ডলার পর্যন্ত উঠে যাবে, যা গত শুক্রবার ব্যারেলপ্রতি ৭৮ ডলার পর্যন্ত উঠে আবার কমে গিয়েছে। হরমুজ প্রণালি বন্ধ করা ইরানিদের হাতে শক্তিশালী একটি তাস। লড়াই চলতে থাকলে স্বল্প মেয়াদে হলেও হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার আশঙ্কা আছে।
আরও পড়ুনইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিণতি কী৫ ঘণ্টা আগেথামার পথ কী হবেতবে শেষ পর্যন্ত ইরান যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পথ খুঁজবে। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য আঞ্চলিক বড় যুদ্ধের আশঙ্কার অবসান ঘটবে। নয়তো ইরানের নিজস্ব অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে এবং অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার মুখেও পড়তে হবে দেশটিকে। ইরানের আরও জানার কথা, ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধ পরিস্থিতি সামলানোর সক্ষমতার একটা সীমা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের কারণে ইরানের চেয়েও আরও সহজে গোলাবারুদের মজুত পূরণ করার ক্ষমতা আছে তার।
ইরানের সরকার ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করে দিয়েছে, ইসরায়েল যদি তার আক্রমণ বন্ধ করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় ফিরেও আসতে সম্মত হয়, এরপরও তারা প্রতিশোধ নেওয়া চালিয়ে যাবে।
তবে এটি যুক্তরাষ্ট্র এবং তার কাণ্ডজ্ঞানহীন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর নির্ভর করবে। ট্রাম্পকে ইসরায়েল এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে থামানোর জন্য চাপ দিতে হবে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট তা করতে ইচ্ছুক কি না, সেটি স্পষ্ট নয়। এ সংঘাতের বিষয়ে ট্রাম্পের বাগাড়ম্বর প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। একদিকে তিনি লড়াইয়ের অবসান ঘটানোর জন্য বারবার আহ্বান জানিয়েছেন, একই সঙ্গে ইরানকে হুমকিও দিয়েছেন।
ইরান আরও জানে যে ট্রাম্প এমন ব্যক্তি নন, যাঁকে বিশ্বাস করা বা যাঁর ওপর নির্ভর করা যায়। গত সপ্তাহে ইরানে ইসরায়েলের হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রতারণামূলক আচরণ করেছে। ইসরায়েল হামলা করার পরিকল্পনা করছে, তা গোপনে জানা সত্ত্বেও রোববার ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনা চলবে—এমন ভান করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
তবু যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তিই ইরানকে থামাতে সহায়তা করতে পারে। নয়তো ইরান এখন পর্যন্ত যে শক্তি প্রকাশ করেছে, তা বজায় রাখা দিন দিন কঠিন হয়ে উঠবে।
দোরসা জাব্বারি ইরানি সাংবাদিক। আল–জাজিরা টিভি চ্যানেলে কর্মরত।
আলজাজিরা থেকে নেওয়া। ইংরেজি থেকে অনুবাদ: রাফসান গালিব