চলতি মৌসুমে জিকে খালের পানি না পেয়ে অতিরিক্ত দামে তেল কিনে বোরো ধান ও ভুট্টায় সেচ দেওয়া হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানি কমতে থাকায় শ্যালো মেশিনেও ঠিকমতো পানি উঠছে না। এতে জ্বালানি খরচও বেশি হওয়ায় লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন তারা। কথাগুলো আলমডাঙ্গা উপজেলার জামজামি ইউনিয়নের ঘোষবিলা গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলামের।
পদ্মা নদীতে পলি জমে ও পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় দেশের বৃহত্তম গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের খালে পানি সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে ফসলি জমিতে সেচ দিতে না পারায় আলমডাঙ্গা উপজেলায় জাহিদুলের মতো হাজারো কৃষক বিপদে পড়েছেন। বিকল্প হিসেবে শ্যালো মেশিন ও বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে জমিতে পানি সরবরাহ করছেন তারা। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় সেচ দিতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।
কৃষকরা বলছেন, জিকে সেচ প্রকল্পের আওতায় গত কয়েক বছর ঠিকমতো পানি পাওয়া যায়নি। জানুয়ারিতে খালে পানি সরবরাহের কথা ছিল। এখনও খাল পানিশূন্য। গত বছর সেচ পাম্প বিকল থাকলেও এবার নদীতে পলি জমে ও স্তর নেমে যাওয়ায় পানি আসেনি। এতে চৈত্র-বৈশাখ মাসে বোরো ক্ষেতে সেচ দিতে বেগ পেতে হবে কৃষকদের। আবাদের খরচও বেড়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভেড়ামারা গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রধান পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমানের ভাষ্য, পদ্মায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এ ছাড়া নদীর চ্যানেলে অতিরিক্ত পলি জমে যাওয়ায় তা অপসারণের কাজ চলমান রয়েছে। এ কারণে নির্দিষ্ট সময়ে খালে পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। দ্রুত জিকে খালে পানি সরবরাহের আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।
পাম্পহাউস কর্তৃপক্ষ জানায়, বছরের ১০ মাস (১৫ জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত) ২৪ ঘণ্টা তিনটি পাম্পের মাধ্যমে পানি তোলা হয়। বাকি দুই মাস রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ থাকে। এ পানি চার জেলায় ১৯৩ কিলোমিটার প্রধান খাল, ৪৬৭ কিলোমিটার শাখা খাল ও ৯৯৫ কিলোমিটার প্রশাখা খালে যায়। প্রকল্পের প্রধান ও শাখা খালে পানি থাকলে সেচ সুবিধাসহ আশপাশের টিউবওয়েল ও পুকুরে পানি স্বাভাবিক থাকে। পদ্মায় পানির স্তর স্বাভাবিক থাকলে প্রতি পাম্পে সেকেন্ডে গড়ে ২৮ হাজার ৩১৬ দশমিক ৮৫ লিটার পানি সরবরাহ হয়।
সরেজমিন দেখা যায়, দীর্ঘদিন পানি না থাকায় খাল শুকিয়ে ফাটল ধরেছে। বিভিন্ন অংশে পলি জমে তা এখন দৃশ্যমান। মৌসুমে এসব খালে জেলেদের দেশি মাছ ধরতে জাল নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকতে দেখা যেত। এবার পানি সংকটে তাদের দেখা মেলেনি। হাউসপুর এলাকার কৃষক শফিকুল ইসলাম বলছিলেন, ‘গত বছর জিকে খাল থেকে পানি পাইনি। এবার সাত বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ আছে। যতটুকু বুঝতে পারছি, এ বছরও পানি আসবে না। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। গত বছর কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন পাইনি, এবারও হয়তো হবে না।’
কৃষক বলছেন, সেচ খালের পানি দিয়ে চাষাবাদ করতে বিঘাপ্রতি খরচ হয় মাত্র ৩০০ টাকা। শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে অনেক জমি অনাবাদি থেকে যায়। পাম্পে জ্বালানি তেলের দাম ১০৫ টাকা নিলেও খুচরা বাজারে তা ১০৮ থেকে ১১০ টাকা লিটার কিনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা আরিফ আহমেদ বলেন, ‘পদ্মা নদীতে পানির স্তর কমে যাওয়ায় ও চ্যানেলে পলি জমায় ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। আমরা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পাম্প হাউসের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। চলতি মাসেই জিকে খালে পানি সরবরাহ করা যাবে বলে আশ্বাস তাঁর।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান
যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।
ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।
ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সিনেটে সশস্ত্র বাহিনী কমিটির প্রায় ৯০ মিনিটের শুনানিতে ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে বারবার কোরেলকে প্রশ্ন করা হয়। ট্রাম্পের মন্তব্যে অনেক আইনপ্রণেতাই এ সময় ছিলেন বিভ্রান্ত। এ থেকে বোঝা যায়, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন ও এর বাইরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন।
মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের নিষেধাজ্ঞা শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।
কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’
ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্টশুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।
জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।’
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে গত বৃহস্পতিবার মুখোমুখি বৈঠকে যোগ দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং