জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ইন্টারনেট ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উভয় পক্ষের সাতজন আহত ও দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রায়কালী ইউনিয়নের পাকুরদাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। 

আহত সাতজনকে রাতেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.

আবু শফি মাহমুদ বলেন, আহত সাতজন হাসপাতালে আসেন। তাদের হাত-পা ও মাথায় গভীর ক্ষত ছিল। তাদের মধ্যে তিনজনকে ভর্তি এবং বাকিদের চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

হামলায় আহতরা হলেন– তিলকপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ইমদাদুল হক বিশাল, রায়কালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহম্মেদ, তিলকপুরের নগরকুসুম্বি গ্রামের শাকিল আহম্মেদ, চিয়ারীগ্রাম পাকুরডারিয়া গ্রামের রোজিনা, তিলকপুরের ইন্টারনেট ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন, মোহাম্মদপুকুর গ্রামের শাহীন ও তিলকপুর বাজারের রাকিব।

জানা গেছে, তিলকপুর ইউনিয়নের তিলকপুর নেটওয়ার্কের ইন্টারনেট ব্যবসায়ী বেলাল হোসেনের কাছ থেকে চিয়ারীগ্রাম পাকুরডারিয়ার সাদ্দাম হোসেন ব্যান্ডউইথ নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। কয়েক দিন আগে লেনদেন নিয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ বাধে। এর জের ধরে মঙ্গলবার পাকুরডারিয়া মোড়ে উভয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। বিষয়টি নিয়ে চন্দনদীঘি বাজারের একটি দোকানে বসে মীমাংসার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সমাধান হয়নি। পরে পাকুরডারিয়া তিন মাথা মোড়ে উভয় পক্ষ আবার সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় বেলাল হোসেন, তাঁর ভাই তিলকপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ইমদাদুল হক বিশাল, রায়কালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রাজু আহম্মেদসহ সাতজন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। 

বেলাল হোসেনের ভাই সাব্বির হোসেন বলেন, ‘সাদ্দাম তিলকপুর নেটওয়ার্কের ব্যান্ডউইথ নিয়ে ব্যবসা করছিল। অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় সে আমাদের না জানিয়ে অন্য কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি। এতে ক্ষিপ্ত হয় সে। মঙ্গলবার বিকেলে আমরা জাফরপুর থেকে চন্দনদীঘি বাজারে ইন্টারনেট তার টানছিলাম। সে আমাদের ৫০০ মিটার তার কেটে নিয়ে যায়। প্রতিবাদ করলে সাদ্দাম আমার ভাই বেলালকে মারতে আসে। পরে দলবল নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে।’

রায়কালী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আহত রাজু আহম্মেদ বলেন, ‘ঘটনার সময় রাস্তার পাশে শ্যালো মেশিন মেরামত করছিলাম। এ সময় বেলালের লোকজন ৮ থেকে ১০টি মোটরসাইকেলে ১৫-২০ জন এসে তিনমাথা মোড়ে আবু হোসেনের দোকানে ক্যারম খেলা অবস্থায় মুমিনুলকে ধরে এনে রাস্তায় ফেলে মারধর করতে থাকে। আমরা তাঁকে বাঁচাতে গেলে আমাদেরও মারধর করে। পরে তারা আবু হোসেনের দোকানের ক্যাশ থেকে টাকা লুট করে নিয়ে যায়।’ 

এ বিষয়ে কথা বলতে সাদ্দাম হোসেনের বাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও কোনো সাড়া মেলেনি। 

উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব তানভীর নেওয়াজ বলেন, ‘খবর পেয়ে রাতেই আমরা হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়েছিলাম। প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নেওয়ার আহ্বান করছি প্রশাসনের কাছে।’ 

ওসি আনিছুর রহমান বলেন, ব্যবসা নিয়ে দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে মারধরের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় বেলাল হোসেনের ভাই রোকনুজ্জামান বাদী হয়ে মামলা করেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ক রড র য় আহম ম দ ত লকপ র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ